একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র বইতে মৌমাছি নিয়ে আলোচনা আছে।
মৌমাছির ইংরেজি প্রতিশব্দ Honey bee। এটি Arthropoda পর্বের Insecta শ্রেণির Hymenoptera বর্গের Apis গণভুক্ত একটি পতঙ্গ।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত Apis গণভুক্ত পাঁচটি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে।
Apis indica, Apis dorsata, Apis florea—সচরাচর এই তিন প্রজাতির মৌমাছি পাওয়া যায় দেশে।
মানুষের মতো মৌমাছিরও সমাজ আছে। সেখানে রানি, পুরুষ ও কর্মীদের বসবাস। তারা খাবারের খোঁজে কাজে বের হয়।
নিজেদের রানি নিজেরাই নির্বাচন করে। মৌমাছিদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা হলো রানির কাজ।
মানুষের মতো মৌমাছিরও সমাজের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য থাকে। অন্যদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকে।
এরা নিজের কথা চিন্তা না করে অন্যদের সাহায্য করতে ব্যস্ত।
৫০ হাজার থেকে এক লাখ মৌমাছি একত্রে কলোনি গঠন করে বাস করে। মৌমাছির বাসাকে বলা হয় মৌচাক। গাছের ডাল, ঘন ঝোপঝাড়, গাছের ফোকর, দালান বা ঘরের সুবিধাজনক স্থানে বাসা তৈরি করে এরা।
আকার-আকৃতি ও কাজের ভিত্তিতে মৌমাছিরা তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত—রানি, পুরুষ ও স্ত্রী কর্মী মৌমাছি।
মৌমাছির সমাজব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। রানিই সমাজের প্রধান। তাদের প্রতিটি কলোনিতে দুই থেকে তিন শ পুরুষ ও ১০ হাজার থেকে ৮০ হাজার কর্মী মৌমাছি থাকে। আর রানি থাকে একটি। রানি মৌমাছির আকার দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার।
জীবদ্দশায় একটি রানি মৌমাছি প্রায় দেড় লাখ ডিম পাড়ে। এরা তিন থেকে পাঁচ বছর বাঁচে। রানি মরে গেলে কর্মী মৌমাছিরা বিকাশরত লার্ভাকে রাজকীয় জেলি খাইয়ে নতুন রানি সৃষ্টি করে। রানি মৌমাছির মস্তক থেকে ক্ষরিত ফেরোমেন মৌচাকের বিভিন্ন সদস্যদের সংঘবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। এবার আসি পুরুষ মৌমাছি নিয়ে। এরা আকারে রানির মৌমাছির চেয়ে ছোট। ৩০০ থেকে তিন হাজার পর্যন্ত পুরুষ মৌমাছি একটি কলোনিতে থাকে। এরা অলস প্রকৃতির। এতটাই অলস যে কোনো কাজ তো দূরের কথা নিজের খাদ্যই গ্রহণ করে না। কোনো কারণে স্ত্রী কর্মী মৌমাছিরা পুরুষ মৌমাছিকে না খাওয়ালে এরা মারা যায়। কর্মী মৌমাছিরা সবচেয়ে ছোট আকারের।
একটি মৌ-কলোনির মোট মৌমাছির ৯৯ শতাংশ কর্মী মৌমাছি। এদের জীবনকাল গড়ে ৫০ দিন। এরা মধু সংগ্রহে নিয়োজিত থাকে। মৌচাকের পরিচ্ছন্নতা, বাচ্চার যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে খাদ্য অন্বেষণ সবই এরা করে। বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিস মৌমাছির গতি-প্রকৃতি নিয়ে প্রথম আলোকপাত করে নোবেল পুরস্কার পান।
গ্রন্থনা : অনয় আহম্মেদ