ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭
নবম-দশম শ্রেণি তোমাদের উত্তর

পাঠাগারের গুরুত্ব

  • নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ে ‘লাইব্রেরি’ নামে পৃথক দুটি প্রবন্ধ লিখেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মোতাহের হোসেন চৌধুরী। প্রবন্ধ দুটি অবলম্বনে ছাত্রজীবনে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা জানতে চাওয়া হয়েছিল কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে। চলো পড়ে নিই, কী লিখল তারা
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
পাঠাগারের গুরুত্ব

ফারহাত ফাতিহা চৌধুরী

দশম শ্রেণি, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে মানুষের সব জ্ঞান জমা হয়ে রয়েছে বইয়ের ভেতরে। অন্তহীন জ্ঞানের উৎস হলো বই, আর সেই বইয়ের আবাসস্থল হলো পাঠাগার।

শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বহির্জগতের জ্ঞানভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণেরও চেষ্টা করতে হবে।

মানুষের বই পড়ার আগ্রহ থেকেই গ্রন্থাগারের উৎপত্তি। গ্রন্থাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মানদণ্ড। পাঠাগার মানুষের বয়স, রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী বই সরবরাহ করে থাকে। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে সংহতি, যা দেশ গড়া কিংবা রক্ষার কাজে অমূল্য অবদান।

চিন্তাশীল মানুষের কাছে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা অনেক বেশি। গ্রন্থাগার জ্ঞান আহরণের সহজ মাধ্যম। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ মৌলিক চাহিদা মেটাতেই আমরা হিমশিম খাই।
তাই আমাদের পক্ষে বই কিনে পড়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। কম লেখাপড়া জানা ও গরিব মানুষের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও গ্রন্থাগারের ভূমিকা অভাবনীয়। গণতন্ত্রের সাফল্যে গ্রন্থাগারের ভূমিকা গণমাধ্যমের চেয়ে কম নয়। আধুনিক বিশ্বে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা দিনে দিনে বাড়ছে। গ্রন্থাগার সবার জন্য উন্মুক্ত।
ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা নেই এখানে, নেই হানাহানি, কলহ; সুতরাং জাতির মর্যাদাবোধের উন্নয়নে প্রত্যেক নাগরিকের উচিত নিয়মিত গ্রন্থাগারে উপস্থিত হয়ে লেখাপড়া করা এবং সমাজ গড়ায় সহায়ক রাজনীতির জ্ঞানার্জন করা।

একটি সমাজের রূপরেখা বদলে দিতে পারে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের জাতির কর্ণধার। তাদের মানসিক বিকাশের মাধ্যমে সমগ্র জাতির উন্নতি সম্ভব। তাই শহরের পাশাপাশি প্রতিটি গ্রামে-মহল্লায় পাঠাগার গড়ে তোলা প্রয়োজন।

 

মুহাম্মদ লাবিব সাদাদ

দশম শ্রেণি, দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল ও কলেজ, রংপুর

ছাত্রজীবনে পাঠাগার অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পাঠাগারের সন্ধিবিচ্ছেদ করলে হয় ‘পাঠ+আগার’ অর্থাৎ পাঠাগার হলো পাঠ করার সামগ্রী সজ্জিত আগার বা স্থান। পাঠাগারে সেই বিষয়সংক্রান্ত অন্যান্য বই পড়লে বিষয়টি সহজবোধ্য হয়ে ওঠে—মানুষের বই পড়ার আগ্রহ থেকেই গ্রন্থাগারের উৎপত্তি। গ্রন্থাগারের ইতিহাস বেশ পুরনো। প্রথম দিকে মানুষ নিজের ঘরের কোনে, মসজিদ, মন্দির, উপাসনালয়ে এবং রাজকীয় ভবনে গ্রন্থ সংরক্ষণ করতে শুরু করে। রোমে প্রথম গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়। সর্বসাধারণের মধ্যে জ্ঞানবিস্তারের জন্য খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়। শিক্ষার্থী পাঠাগারে প্রবেশ করলে তার সামনে খুলে যায় ভাবনার অপার দুয়ার। পাঠাগারের একেকটি বই তাকে একেক বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়। এতে তার জন্য পরিধি বিস্তৃত হয়, যা তাকে একজন ভালো শিক্ষার্থী হতে সাহায্য করে। বই পড়ার মাধ্যমে শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে সে বিচরণ করতে পারে, যা তার পরবর্তী জীবনযাত্রাকে সহজ ও পরিশীলিত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক প্রতিদিনের টিফিন পিরিয়ড বা অন্য অবসর সময়টা আড্ডা ও গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেয়; কিন্তু একটা লাইব্রেরি থাকলে ছাত্র-শিক্ষক তাদের প্রতিদিনের অবসর সময়টা পড়ালেখায় কাটাতে পারেন।

প্রমথ চৌধুরীর মতে, ‘লাইব্রেরি হচ্ছে এক ধরনের মনের হাসপাতাল।’ পুথিগত বিদ্যার ভারে জেরবার ছাত্রসমাজের মানসিক প্রশান্তির জন্য পাঠাগার অপরিহার্য। পাঠাগার শুধু ভালো ছাত্রই নয়, ভালো মানুষও হতে শেখায়। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া জাতীয় চেতনার জাগরণ হয় না। আর তাই গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পৃথিবীর বহুদেশ পাঠকের চাহিদা পূরণের জন্য গড়ে তুলেছে অগণিত গ্রন্থাগার। শিক্ষার আলো বঞ্চিত কোনো জাতি পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষার বাতিঘর বলা হয় গ্রন্থাগারকে। গ্রন্থাগার ছাড়া কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র তার নাগরিককে পরিপূর্ণ শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা তাই প্রতিটি সমাজে অনিবার্য। বই পড়লে একজন শিক্ষার্থী হয়ে ওঠে আচরণে মার্জিত, চিন্তায় স্বতঃস্ফূর্ত ও কর্মে দৃপ্ত।

পাঠাগার শুধু পড়াশোনায় নয়, মানসিক গঠনেও ছাত্রসমাজকে প্রভাবিত করে। তাই ছাত্রজীবনে পাঠাগারের ভূমিকা অপরিসীম।

 

ভূমিকা দাস

নবম শ্রেণি, সাভার অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা

ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়। আজকের ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। এ গুরুদায়িত্ব পালন করতে হলে ছাত্রদের মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে এবং তাদের বুদ্ধিবৃত্তিকেও শাণিত করতে হবে; কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের বিদ্যায় কখনই জ্ঞানার্জন পূর্ণ হয় না। এ জন্য পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও বিভিন্ন বই পড়তে হয়। আর নানা ধরনের বইয়ের সংগ্রহশালাই হচ্ছে পাঠাগার বা লাইব্রেরি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লাইব্রেরি প্রবন্ধে পাঠাগার সম্পর্কে লিখেছেন, ‘কত নদী সমুদ্র পর্বত উল্লঙ্ঘন করিয়া মানবের কণ্ঠ এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছে—কত শত বৎসরের প্রান্ত হইতে এই স্বর আসিতেছে।’ অর্থাৎ লাইব্রেরিতেই মানব হৃদয়ের উত্থান-পতনের শব্দ শোনা যায়। এ জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধটিতে লাইব্রেরিকে মহাসমুদ্রের কল্লোলধ্বনির সঙ্গে তুলনা করেছেন। ছাত্রদের রয়েছে সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি নানা দায়িত্ব। এ জন্য নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে সে আদর্শ মানুষ হয়ে উঠতে পারে। কারণ আদর্শ মানুষই দেশের প্রকৃত সম্পদ। নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে বই পড়া। বই পড়াই আনন্দের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। বই হতে পারে নিঃসঙ্গতা কাটানোর বিশেষ মাধ্যম। পাঠাগারে থাকে নানা বিষয়ের নানা মতের বই। পাঠাগারের বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা একজন শিক্ষার্থীকে স্বশিক্ষিত মানুষ তৈরিতে সহায়তা করে।

পাঠাগার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন রচনার অনন্য মাধ্যম। মানুষের চিন্তাভাবনা, বাস্তবতা ও কল্পনা বইয়ের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। তাই ছাত্রজীবনে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ