৯৩ বছর আগে নির্মিত চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু। কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত পুরনো এই সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ‘জরাজীর্ণ’ অবস্থায় রয়েছে। অনেকটা ‘ঝুঁকি’ নিয়ে এই সেতু দিয়ে যানবাহনের পাশাপাশি রেল চলাচল করছে।
এই অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাটে নতুন সড়ক কাম রেল সেতু নিমার্ণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে একাধিক সংগঠন ও এলাকাবাসী।
এমনকি জাতীয় সংসদেও বিভিন্ন সময় সেতু নির্মাণের দাবি তুলেছেন ওই আসনের সংসদ সদস্যরা। কিন্তু এখনো সেতু নির্মাণে দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
বলা হচ্ছে, সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ (নগর আংশিক ও বোয়ালখালী) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ সংসদ, দলসহ বিভিন্ন ফোরামে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবিতে সোচ্চ্চার ছিলেন। তাঁর আশা ছিল চট্টগ্রামের অভাবনীয় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মিত হবে।
এই ব্যাপারে কিছু অগ্রগতিও হয়েছিল।
এ দিকে গত রবিবার রাতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দিন আহমদ। অনেকের অভিমত, মোছলেম উদ্দিন আহমদও নতুন সেতু দেখে যেতে পারলেন না। একই আসনে মোছলেম উদ্দিনের আগে জাসদ কার্ষকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল তিনবার এমপি ছিলেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শরিক দলের কেন্দ্রীয় এই নেতাও জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন ফোরামে কালুরঘাট নতুন সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৯ সালে মঈন উদ্দিন খান বাদল মারা যান। তখনও আলোচনা ছিল, এমপি মঈন উদ্দিন খান বাদল সেতু নির্মাণ দেখে যেতে পারেননি।
চট্টগ্রাম নগর এবং বোয়ালখালী উপজেলার মাঝে কর্ণফুলী নদী। দীর্ঘ নয় দশকের বেশি সময় আগে নির্মিত কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু জরাজীর্ণের কারণে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে।
মঈন উদ্দিন খান বাদলের পর গত রবিবার মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
এ দিকে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনা-সমালোচনাও শুরু হয়েছে। কেউ কেউ লিখেছেন ‘আর কতকাল’ অতিবাহিত হলে চট্টগ্রামবাসী কালুরঘাটে নতুন একটি সেতু পাবে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব রমেন দাশগুপ্ত গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য কালুরঘাট সেতু নির্মিত না হওয়া। নতুন এই সেতু নির্মিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পর্যটন শিল্প বিকাশ লাভ করবে।
বোয়ালখালীর বাসিন্দা মনজুর মোর্শেদ বলেন, তাঁরা দু’জনই (প্রয়াত ওই দুই এমপি) বোয়ালখালীর সন্তান হওয়ায় মানুষের প্রত্যাশা ও আবদারটাও বেশি ছিল। তাই সেতু করতে না পারায় অনেক সময় মানুষ তাঁদের নিয়ে নানা কটু কথাও বলেছেন। দুই এমপির মৃত্যুর পরও যদি সেতু নির্মাণে কর্তৃপক্ষের টনক না নড়ে তবে মানুষ আর কালুরঘাট সেতু নিয়ে স্বপ্ন দেখবে না।
সিএনজি অটো রিকশাচালক নুরুল আমিন বলেন, এতো দরদ দিয়ে কেউ আর কালুরঘাট সেতুর কথা সভা সমাবেশ তুলে ধরবে না। আসলে বোয়ালখালীবাসীর ভাগ্যটাই খারাপ।
শিক্ষক সেকান্দার আলম বলেন, সর্বশেষ ওই দুই এমপি সেতু করার প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নানা জটিলতায় তাঁরা পারেননি।
বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুর বলেন, এমপি মোছলেম উদ্দিন আহমদের ইচ্ছা ছিল কালুরঘাট নতুন সেতু। তিনি মৃত্যুর আগেও কালুরঘাট সেতুর কথা জানিয়ে বলেছেন আল্লাহর কাছে কালুরঘাট সেতু চেয়ে দোয়া করেছেন। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে তাঁর ইচ্ছে কালুরঘাট সেতুর আশা যেন পূরণ হয়।