<p>বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ফারিখালের ওপর নির্মাণাধীন রাবারড্যাম এলাকাবাসীর গলার কাঁটায় রূপ নিয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, রাবারড্যাম নির্মাণের আগে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য খালের দুই মুখে বেড়িবাঁধ না দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে খালের দুপাড় কাটায় বর্ষার শুরুতেই আশপাশের এলাকা ব্যাপক ভাঙনের মুখে পড়েছে। এর ফলে শতাধিক বসতবাড়ি, ফলদ বাগান এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা চলে গেছে খালের পেটে। এ অবস্থায় ভাঙন ঠেকাতে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। প্রতিবেদন : <strong>মনু ইসলাম, </strong>বান্দরবান</p> <p> </p> <p>বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের রাজঘাট পয়েন্টে এই বাঁধ নির্মাণ করছে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে ১৬ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়।</p> <p>অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে ডিআরসেনাল ট্রেডিং করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বছরখানেক আগে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না করে বর্ষা মৌসুমের কিছু দিন আগে তারা তড়িঘড়ি করে কাজে হাত দেয়।</p> <p>স্থানীয় সূত্রগুলো অভিযোগ করেছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে কাজের বিপুল অগ্রগতি দেখিয়ে বিলের অর্থ উত্তোলনের অভিপ্রায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তড়িঘড়ি করে খালের দু’পাড় কেটে জলাধারের পরিধি বাড়ায়। এতে চলাচলের পুরনো রাস্তাও খালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অন্যদিকে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী প্রকল্প এলাকার দুই পাশে এক কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পানিপ্রবাহ শাসন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেড়িবাঁধ স্থাপন না করেই দুটি স্কেভেটর দিয়ে খাল কাটা শুরু করায় পাহাড়ি ঢলে দুপাড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়।</p> <p>বাইশারীর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার হাসেম সরওয়ার বলেন, ‘এটি শুধু রাবারড্যাম নয়। আমরা মনে করি, বাইশারীর মানুষকে ভূমিহারা করতে এটি একটি খাল কেটে কুমির আনা প্রকল্প। এই রাবারড্যামের কারণে রাজঘাট এলাকার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি নামলেই দুপাড়ের মানুষের মধ্যে এখন ভাঙনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’</p> <p>রাবারড্যাম প্রকল্পে ভাঙনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মোজাম্মেল হক এবং হাজি নুরুন নবী জানান, পাড়ে ভাঙন ধরায় তাদের বসতভিটার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর এবং ক্ষেতখামার বানের পানিতে ভেসে গেছে। এতে তাঁদের লাখ লাখ টাকার সম্পদহানি ঘটেছে।</p> <p>হাজি নুরুন নবী বলেন, ‘বর্তমানে আমরা আরো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় আছি।’</p> <p>ইউপি সদস্য আবু তাহের জানান, রাবারড্যামের ভৌত অবকাঠামো শুরু করার আগে খালের দু্পাড় মাটি দিয়ে প্রশস্ত ও রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বর্ষা মওসুমের শুরুতেই কাজ বন্ধ করে উধাও হয়ে যাওয়ায় ক্ষতি ঠেকানোর কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।</p> <p>তিনি অভিযোগ করেন, কাজের অগ্রগতি দেখাতে রাবারড্যাম স্থাপন পয়েন্টে খালের বুকে তড়িঘড়ি করে আরসিসি ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারের লোকজন কিংবা সাইট প্রকৌশলীরা না থাকায় এর ভাগ্যে কি ঘটেছে-তাও বোঝার উপায় নেই।</p> <p>তিনি বলেন, ‘আরসিসি অংশটি পাহাড়ি ঢলের সাথে আসা কাদায় ঢাকা পড়ে গেছে।’</p> <p>স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন, এলাকার কৃষিকে বহুমুখী করা এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে এই রাবারড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই অপরিকল্পিত বাঁধের প্রভাবে স্থানীয় কৃষকরা পথের ফকিরে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।</p> <p>এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে রাবারড্যাম প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৗশলী নুর মোহাম্মদ জানান, ফারিখালের ওপর নির্মাণাধীন রাবারড্যাম প্রকল্পের কারণে আশপাশের এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির খবর তিনি পেয়েছেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে ত্বরিত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্যে তিনি প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলার জন্যে তিনি এলাকাবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন।</p> <p>তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিআরসেনাল ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রাজিব জানান, তারা প্রকল্প ছেড়ে পালিয়ে যাননি। তিনি বলেন, আগাম বর্ষা শুরু হওয়ায় নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখতে হয়েছে। নতুন করে কাজ শুরু হলে দুপাড়ের ভাঙন স্পটগুলো সংস্কার করে দেওয়া হবে।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>