<p>লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইসরায়েলের বিমান হামলা, যোগাযোগ ডিভাইসের বিস্ফোরণে লেবাননজুড়ে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে কয়েক হাজার। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এ পরিস্থিতিকে ‘প্রায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইসরায়েলের দাবি, সীমান্তে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হিজবুল্লাহর ওপর হামলার প্রয়োজন রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত করছেন, তিনটি কারণের দিকে।</p> <p>যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রগ্রামের পরিচালক সানাম ভাকিলের মতে, বর্তমান সামরিক অভিযান ও সংঘাতের বিপজ্জনক মোড় প্রধানত ‘ইসরায়েলের উত্তরে বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিজের এলাকায় ফেরত চাওয়ার ন্যায্যতা বা আবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।’</p> <p>তবে লেবাননে ইসরায়েলের বর্তমান হামলার পেছনে আরো কারণ রয়েছে বলেও মনে করেন ভাকিল। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, ইসরায়েল তার সীমান্তে গাজা ও হিজবুল্লাহ ফ্রন্টকে আলাদা করার চেষ্টা করছে।’</p> <p>ভাকিল মনে করেন, ‘ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জন করতে পারেনি এবং গাজার কারণে হিজবুল্লাহর কাছ থেকেও শান্তিচুক্তি আদায় করে নিতে পারেনি।’</p> <p>অন্যদিকে ইরান এবং তেহরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইয়েমেনভিত্তিক হুতিদের মতো একাধিক সশস্ত্র সংগঠন নিয়ে গঠিত তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ তাদের বাহিনীগুলোকে একত্র করে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।</p> <p><strong>দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধের পরের ঘটনা</strong><br /> ভাকিল বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, ইসরায়েল অবশ্যই লেবাননের হিজবুল্লাহর কারণে চিরস্থায়ী নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে।’</p> <p>২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি মাসব্যাপী যুদ্ধ জাতিসংঘের ১৭০১ রেজল্যুশনের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে চলা প্রথম যুদ্ধের পর এটিকে দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধ বলা হয়। জাতিসংঘের শর্তগুলো ছিল তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, দক্ষিণ লেবাননে লেবানিজ সেনা ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন, একই এলাকা থেকে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী ও হিজবুল্লাহর প্রত্যাহার, সেই সঙ্গে হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ।</p> <p>তবে শর্ত অনুযায়ী, হিজবুল্লাহ লেবাননের লিতানি নদী পর্যন্ত পিছু হটেনি। সীমান্ত থেকে নদীটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। শিয়া মিলিশিয়াটির সদস্যরা অস্ত্রও ত্যাগ করেনি। বরং পরের বছরগুলোতে ইরানের সমর্থনে হিজবুল্লাহর সামরিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষিত যোদ্ধার সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। এর ফলে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ভবিষ্যতে ইসরায়েলি নাগরিকদের তাদের ভূখণ্ড থেকেই অপহরণ করতে পারে—এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।</p> <p>ভাকিলের মতে, ‘ইসরায়েল (আরো একবার) হিজবুল্লাহকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ মেনে নিতে বাধ্য করতে চাইছে।’</p> <p><strong>গাজা যুদ্ধ থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা</strong><br /> তৃতীয় কারণ হিসেবে ভাকিল মনে করেন, ‘লেবাননে এই অপারেশনের ফলে গাজার দিক থেকে দৃষ্টি সরেছে।’</p> <p>গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর পরও হামাসের বন্দিদশায় থাকা ৯০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি জিম্মি রয়ে গেছেন। কিন্তু তার পরও লেবাননের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মনোযোগ গাজা থেকে সরে গেছে বলে মনে করেন তিনি।</p> <p>ভাকিলের মতে, ‘গাজা থেকে বের হয়ে আসার কোনো কৌশল ইসরায়েলের নেই এবং তারা কী পরিকল্পনা করছে, সেটাও স্পষ্ট করেনি। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন প্রক্রিয়ার কথাও তারা বলছে না।’</p> <p>তার দৃষ্টিতে, লেবাননের যুদ্ধ ‘গাজায় কৌশলের অভাব থেকে দৃষ্টি সরানোর একটি প্রচেষ্টা।’</p> <p><strong>লেবাননে স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা</strong><br /> এদিকে ইসরায়েলি জনগণ ক্রমে অধৈর্য হয়ে উঠছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে।</p> <p>বৈরুতভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পরামর্শদাতা লরেঞ্জো ট্রম্বেটা বলেন, ‘ইসরায়েলের দৃষ্টিকোণ থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ খুব বেশি এবং প্রতি সপ্তাহে তা তীব্রতর হচ্ছে।’</p> <p>তার ধারণা, ইসরায়েলি সরকারের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে। তিনি মনে করেন, এটা অর্জনের একটা উপায় হতে পারে উত্তর ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।</p> <p>তিনি বলেন, ‘তবে ইসরায়েল তা অর্জনে সক্ষম হবে কি না, সেটা বলা কঠিন।’</p> <p>ট্রম্বেটার প্রশ্ন, ‘ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হবে কি না, বা কখন হবে, কে জানে! হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলে ইরান কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে?’</p>