<p>মামলা, আদালতে ছোটাছুটির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন দৌঁড়ে অনেকটাই এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ সাউথ ক্যারোলাইনায় দলের প্রাইমারিতে বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিকে। নানা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যেই তিনি নিজের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে—‘বাইডেন, ইউ আর ফায়ারড! গেট আউট, গেট আউট!’</p> <p>আসছে নভেম্বরে জো বাইডেনের চোখে চোখ রেখে এই কথাটা বলবেন, ফেব্রুয়ারিতেই সেই ঘোষণা দিয়ে রাখছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাউথ ক্যারোলাইনায় দলের প্রাইমারিতে নিকি হ্যালির বিরুদ্ধে বড় জয়ের পর রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি। দ্বিতীয়বার তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ ছিল খোদ রিপাবলিকান দলের মধ্যেই। কিন্তু এখন মনোনয়নের দৌড়ে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মাত্র একজন প্রার্থী, তাও ট্রাম্প থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে।</p> <p>সাউথ ক্যারোলাইনা হ্যালির নিজের রাজ্য হওয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্টের জয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও নিকি হ্যালি এখনই লড়াই ছাড়ছেন না। তিনি অন্তত ‘সুপার টুইসডে’ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ৫ মার্চ সেই মঙ্গলবার। সেদিন ১৬টি রাজ্যের রিপাবলিকানরা তাঁদের রায় জানাবেন। তবে সাউথ ক্যারোলাইনার জয় উদযাপন করার সময় ট্রাম্প হ্যালির কথা একবারও উল্লেখ করেননি। তাঁর নজর নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের দিকে।</p> <p><strong><span style="background-color:#ecf0f1;">আরো পড়ুন : </span><a href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/02/26/1366780"><span style="color:#3498db;"><span style="background-color:#ecf0f1;">ট্রাম্পের জয়যাত্রা সত্ত্বেও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন নিকি হ্যালি</span></span></a></strong></p> <p>হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পেরই উত্তরসূরি বাইডেনের সঙ্গে একটি ‘রি-ম্যাচ’ বা পুনঃলড়াইয়ের সম্ভাবনা এখন প্রবল। শনিবারের ফলাফলের পর দলের ‘ঐক্যের’ প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। তাঁর মতে, ‘এমন মনোভাব আগে কখনো ছিল না। আমি রিপাবলিকান পার্টিকে এতটা ঐক্যবদ্ধ কখনো দেখিনি।’</p> <p><strong>মামলার জাল</strong><br /> এদিকে এই দৌঁড়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে প্রতিবন্ধকতাও নেহায়েত কম নয়। সপ্তাহ খানেক আগেই তাঁকে প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার জরিমানা করেছেন দেশটির একজন বিচারক। তবে সুদসহ এই অঙ্ক দাঁড়াতে পারে ৪৫ কোটি ডলারে। সম্পত্তির মূল্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের তহবিলে এই জরিমানা দিতে হবে তাঁকে।</p> <p>এ ছাড়া নিউ ইয়র্কের কোনো ব্যাংক থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য ঋণ নেওয়ার বিষয়েও তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন বিচারক আর্থার এনগোরন। পাশাপাশি ট্রাম্প তাঁর কম্পানির পরিচালকও থাকতে পারবেন না বলে আদেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>এই রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। ট্রাম্পের পাশাপাশি তাঁর দুই ছেলে ডোনাল্ড জুনিয়র আর এরিককেও ৪০ লাখ ডলার করে জরিমানা দিতে হবে। সেই সঙ্গে দুই বছরের জন্য তাঁদের নিউ ইয়র্কে ব্যবসা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে রায়ে।</p> <p>এসব বাদেও একটি মানহানির মামলায় লেখক ই জন ক্যারলকে প্রায় সাড়ে আট কোটি ডলার জরিমানা দেওয়ার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এর মধ্যে সরকারি গোপন নথি নিজের কাছে রাখা এবং ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে।</p> <p><strong>তবুও ট্রাম্পের এত জনপ্রিয়তা?</strong><br /> ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি ঝামেলা দিন দিন যতই বাড়তে থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। গত এপ্রিলে প্রথমবারের মতো অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকে বস্তুত তাঁর পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। যদিও ট্রাম্পই হলেন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়া প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।</p> <p>প্রথমবার গ্রেপ্তার হওয়া ও আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর থেকেট্রাম্পই পরিণত হয়েছেন রিপাবলিকান ভোটারদের প্রথম পছন্দে।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রে ইপসসের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা ক্লিফোর্ড ইয়ং মনে করেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকদের মধ্যে যে একাত্মতাবোধ, তা ভাঙা কঠিন হবে।’</p> <p>রিপাবলিকান ভোটারদের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই ট্রাম্প সমর্থক এবং ইয়ং বলছেন, তাঁরা ট্রাম্পের চোখ দিয়েই দুনিয়াকে দেখেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা বিশ্বাস করেন ট্রাম্পের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ গোপন দলিলপত্র নিজের কাছে রাখার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে মামলা, তা নিয়ে বিবিসি কিছু রিপাবলিকান ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছে এবং একই রকম মতামত পেয়েছে।</p> <p>এ বছরের শুরু থেকেই ট্রাম্পকে একদিকে প্রচারাভিযানের সময়সূচি এবং আরেকদিকে আদালতে হাজিরা দেওয়া—এ দুটিই সামাল দিতে হচ্ছে।</p> <p>দোষী সাব্যস্ত হলেও বা দণ্ডিত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে না দাঁড়ানোর ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন দিয়েছেন এই রিপাবলিকান। আপাতত যা দেখা যাচ্ছে তা হলো, ট্রাম্প জনসমর্থনের দিক থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে কিছুটা এগিয়েই আছেন। দ্য ইকোনমিস্টের সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন ৪৬ শতাংশ জনমত ট্রাম্পের পক্ষে। আর বাইডেনকে চান ৪৪ শতাংশ মার্কিনি।</p> <p>জরিপের গ্রাফে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জনপ্রিয়তায় বর্তমান প্রেসিডেন্টকে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেন ট্রাম্প।</p> <p><strong>জো বাইডেনের চ্যালেঞ্জ</strong><br /> এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাইডেনের ফিটনেস নিয়ে আলোচনা গড়িয়েছে অনেক। সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়া কিংবা বিমান উঠতে গিয়ে হোঁচটা খাওয়ার ঘটনাগুলো খুব একটা ভালো ধারণা দেয় না তাঁর শারীরিক সক্ষমতার ব্যাপারে। বিপাকে আছেন স্মৃতি বিভ্রমের ঘটনায়ও। কয়েকবার গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় ভুলে গেছেন বা ভুল বলেছেন—এমন ঘটনাও ঘটেছে।</p> <p>নিজের স্মৃতিশক্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সপ্তাহ দুয়েক আগে। সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, ‘আমার স্মৃতিশক্তি ঠিক আছে।’</p> <p>স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট হার অতি গোপনীয় নথি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে বাইডেনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু কঠোর সমালোচনাও রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের স্মৃতিশক্তিতে ‘উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা’ রয়েছে।</p> <p>এতে আরো বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নথিগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করার অভিযোগ আনাটা মুশকিল। কারণ ‘বিচারের সময় বাইডেন বিচারকের সামনে নিজেকে একজন সহানুভূতিশীল, সদালাপী এবং দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বয়স্ক মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করবেন, আমাদের সামনেও তিনি যেটি করেছেন।’</p> <p>এর প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন বলেছেন, বয়স সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তিনিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।</p> <p>এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ৭৭ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।</p>