<p>পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি বিভাগের কমিশনার লিয়াকত আলি চাথা শনিবার তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গ্যারিসন সিটিতে বড় আকারের নির্বাচনী কারচুপির মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা আরো বেড়ে গেছে এবং এতে তিনি অনুতপ্ত।</p> <p>এদিন রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় লিয়াকত আলি তাঁর শহরের মানুষের প্রতি অবিচার করেছেন স্বীকার করে তাঁর অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। </p> <p>রাওয়ালপিন্ডি বিভাগে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ১৩টি আসন রয়েছে, যেখানে ১১টিতে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রার্থী জিতেছেন। বাকিগুলোর একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং অন্যটিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জিতেছে। এ ছাড়া বিভাগটিতে ২৭টি প্রাদেশিক আসনও রয়েছে, যেখানে পিএমএল-এন ১২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১১টিতে জিতেছেন।</p> <p>লিয়াকত আলির চমকপ্রদ এ ঘোষণার পর পুলিশ প্রথমে বলেছিল, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু পরে রাওয়ালপিন্ডি পুলিশের মুখপাত্র এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এই শীর্ষ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।</p> <p>কমিশনার লিয়াকত তাঁর বিরল সংবাদ সম্মেলনে রাওয়ালপিন্ডি বিভাগে ভোটে ‘কারচুপির’ দায়ভার গ্রহণ করেছেন। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে বলেছেন, ‘আমরা ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিতদের বিজয়ীতে রূপান্তরিত করেছি। আমি আমার বিভাগের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’ তাঁর অধীনস্থদের যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা নিয়ে তাঁরা কাঁদছিলেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি।</p> <p>এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ এবং বিদেশে থাকা পাকিস্তানিদের চাপের মধ্যে ছিলেন জানিয়ে লিয়াকত জোর দিয়ে বলেন, তিনি আজ সকালে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন।</p> <p>এদিকে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) রাওয়ালপিন্ডি কমিশনারের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, কমিশনের কোনো কর্মকর্তা ফলাফলের হেরফের সম্পর্কে তাকে কোনো নির্দেশ দেননি। নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের জারি করা বিবৃতি অনুযায়ী, কোনো বিভাগের কমিশনার কোনো জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নন। পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনায় তাঁদের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। তবে নির্বাচন কমিশন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ বিষয়ে তদন্ত করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।</p> <p>পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভিও বিষয়টি নিয়ে কঠোর নোটিশ নিয়েছেন এবং অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, নিরপেক্ষ তদন্ত হবে এবং প্রকৃত ঘটনা সামনে আনা হবে।</p> <p>এ ছাড়া পাঞ্জাব সরকারের মুখপাত্রও ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তার কারচুপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক তথ্যমন্ত্রী আমির মীর বলেছেন, এটি কোনো অপরাধের স্বীকারোক্তি নয়। এটি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার দাবি ও অভিযোগ। তিনি চাথার অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।</p> <p>আমির মীর আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি আত্মহত্যার কথা বলে, সে কেবল একজন সাইকোপ্যাথ হতে পারে। চাথা ১৩ মার্চ অবসরে যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অবসরের কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি একটি রাজনৈতিক স্টান্ট করছেন। আমি মনে করি, তিনি একটি রাজনৈতিক ক্যারিয়ার করতে চান।’</p> <p>নির্বাচনের দিন লিয়াকতের অধীনে কাজ করা লোকজনের কান্নার বিষয়ে চাথার দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে মীর বলেন, গণমাধ্যম কাউকে কাঁদতে দেখেনি।</p> <p>অন্যদিকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা আলী মুহাম্মদ খান বলেছেন, রাওয়ালপিন্ডি কমিশনার আজ একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং তাঁর অভিযোগ প্রমাণ করে, তাঁর দলের ম্যান্ডেট চুরি করা হয়েছে।</p> <p>তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের আসন চুরি করেছে এবং এখন আমাদের দাবি সহজ। আমরা চাই প্রধান বিচারপতি এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হন, নির্বাচন কমিশন যেন তার ভুল শুধরে নেয় এবং আমাদের ম্যান্ডেট আমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।’</p> <p>পিএমএল-এনের জ্যেষ্ঠ নেতা রানা সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, চাথা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন এবং মানসিক সমস্যার জন্য তাঁর চিকিত্সা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘তবে এ রকম কিছু হলে তিনি আমাকে বলতেন।’ কারচুপির অভিযোগ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন সানাউল্লাহ।</p> <p>সূত্র : জিও নিউজ</p>