<article> <p>পরিবার নিয়ে গাজায় বসবাসরত ছেলে শেখ হোসেন সাইদ রালীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না বাংলাদেশে বসবাস করা সাইদ আহমেদ ফিলিস্তিনি। সহযোগিতা চেয়ে তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ফিলিস্তিনে বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় এবং গাজার সংকটময় পরিস্থিতিতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায়নি। গাজায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর বাবা-ছেলের যোগাযোগ হয়েছে। স্বস্তি, আনন্দ আর অশ্রুর যেন মিলন ঘটল দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।</p> </article> <article> <p>যুদ্ধ শুরু হলে গাজায় বসবাসরত ছেলে হোসেন সাইদ রালী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশে থাকা বাবা সাইদ আহমেদের। ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরু হয়। এক মাসেরও বেশি সময় পর ১০ নভেম্বর ছেলে হোসেন সাইদ রালীর সঙ্গে কথা হয় তাঁর।</p> </article> <p>সাইদ জানান, তাঁর বাড়ির একেবারে কাছে চলে এসেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে আর ফোন করে হোসেন সাইদকে পাচ্ছিলেন না সাইদ আহমেদ। সময় যত যাচ্ছিল দুশ্চিন্তা তত বাড়ছিল। অনেক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার পর গতকাল রবিবার ভোরে হোসেন সাইদ রালীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন বাবা সাইদ আহমেদ।</p> <article> <p>বাংলাদেশ, ফিলিস্তিন—দুই দেশেরই নাগরিক সাইদ আহমেদ নিজের নামের সঙ্গে ‘ফিলিস্তিনি’ শব্দ যোগ করেছেন। তাঁর জীবনের বড় অংশ কেটেছে ফিলিস্তিনে। ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের দেহরক্ষী দলে ছিলেন তিনি। এখনো মাঝেমধ্যে ফিলিস্তিনে যান। ছেলের পরিবার থাকে সেখানে।</p> </article> <article> <p>সাইদ আহমেদ ২০১৭ সালে গাজায় নিজের বাড়িতে ছেলে শেখ হোসেন সাইদ রালীকে রেখে এসেছিলেন। হোসেন সাইদ রালী গাজায় অনেকের কাছেই পরিচিত। তিনি কোরআনে হাফেজ। সেখানেই এক ফিলিস্তিনি নারীকে বিয়ে করেছেন তিনি। তাঁরা এখন চার সন্তানের জনক-জননী। গতকাল ভোরে কথা বলার সুযোগ পেয়ে ফোনের দুই প্রান্তেই স্বস্তির কান্না কেঁদেছে দুই পরিবারের সদস্যরা।</p> <p>সাইদ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক মিনিটেরও কম সময় কথা বলতে পেরেছি। এরপরই ফোনের লাইন কেটে গেছে। যতটুকু শুনেছি, বোমায় বাড়িঘর সব ভেঙে গেছে। তারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। নাতি-নাতনিগুলো খাবারের কষ্টে আছে।’</p> <p>সাইদ আহমেদের বাড়ি গাজায় রুমাল এলাকায়। হোসেন সাইদ রালী তাঁর স্ত্রী ও চার শিশুসন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকায়। কবে নাগাদ নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই। প্রাণে বেঁচে আছেন—এতেই স্বস্তি তাঁদের।</p> <p>গাজায় অবস্থানরত শিক্ষক ও মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হামজা ইব্রাহিম গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কালের কণ্ঠের জন্য দুটি লেখা লিখেছেন। তারপর তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতকাল তাঁর সঙ্গেও কালের কণ্ঠের যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। তিনি বলেন, বাইরের সঙ্গে তো বটেই, গাজার ভেতরেই যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির পর সবাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িঘরে ফিরে আনন্দ করছে। একই সঙ্গে খোঁজ নিচ্ছে, স্বজন-প্রতিবেশী কে বেঁচে আছে আর কে বেঁচে নেই। টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি সচল হয়নি বলেও জানান হামজা।</p> <p><strong>মুক্ত আকাশে তাকানোর স্বাধীনতা</strong></p> <p>হামজা ইব্রাহিম বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির কারণে এখন আকাশের দিকে তাকানো যাচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের দিনগুলোতে ফিলিস্তিনের আকাশে ইসরায়েলের ড্রোন উড়ত। সব সময় আমাদের আতঙ্কে থাকতে হতো, এই বুঝি আকাশ থেকে বোমা পড়ছে।’</p> <p>হামজা ইব্রাহিম জানান, তিনি গাজার কেন্দ্রস্থলে তাঁর নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। তাঁর পাশের বাড়িতেই বোমা পড়েছিল। আর সেই ভবন ভেঙে তাঁদের বাড়ির ওপর এসে পড়েছে।</p> <p>সেই হামলার রাতের কথা স্মরণ করে হামজা বলেন, লোকজন আহত ও রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য হাসপাতালে ফোন করা প্রয়োজন। কিন্তু মোবাইল ফোন কাজ করছিল না। শেষ পর্যন্ত তিনি সাইকেল নিয়ে হাসপাতালে যান একটি অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজে। ঘুটঘুটে অন্ধকার, চারপাশে ধ্বংসস্তূপ। বজ্রপাতের মতো বোমার ঝলকানিতে পথ-ঘাট দেখা যাচ্ছিল। খুবই ভয়ংকর পরিবেশ ছিল সেটা।</p> <p><strong>খাবারের সংকট কাটেনি</strong></p> <p>হামজা ইব্রাহিম জানান, ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজায় ঢুকতে শুরু করেছে। কিন্তু ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা এখনো যথেষ্ট নয়। তাই খাবারের সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এবার আমাদের বড় সংকট ছিল খাবার পানির। এতটা সংকট আমি আগে আর কখনো দেখিনি।’</p> <p><strong>স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন</strong></p> <p>হামজা ইব্রাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কী দুঃসহ দিনরাত গেছে তা আপনারা হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না। ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসার জন্য মানুষের ভরসাস্থল হাসপাতালকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। আমরা সেই দিনগুলোতে আর ফিরতে চাই না।’</p> <p>হামজা বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী শান্তি প্রয়োজন। আমরা আমাদের জীবন নিজ দেশে নতুন করে শুরু করতে চাই। লোকজন তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। নতুন করে জীবন শুরুর জন্য স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।’</p> </article>