<p>টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলাকে বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে ওঠার সেই অঙ্কের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। এক ধাপ ওপরে ওঠা তো আবার পা পিছলে অনেক ধাপ নিচে নেমে যাওয়া। ওঠার চেয়ে বেশি নামার এই খেলায় অবশ্য কয়েকবারই দিন বদলের সুর শোনা গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধরলে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে মিরপুরে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি ঐতিহাসিক জয় সামনের কাতারে থাকবে।</p> <p>কিন্তু ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে স্পিন স্বর্গ বানিয়ে পাওয়া সেই দুটি জয় টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। পালাবদলের স্লোগান এর পরও আরেকবার উঠেছিল। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাওয়া দুটি জয়ের চেয়েও বিস্তৃত আকারে সেই আওয়াজ শোনা গিয়েছিল মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পর। প্রতিপক্ষের ওপর অমন প্রভাব বিস্তারি জয় টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ।</p> <p>দেখলেও কোনো প্রতিপক্ষই তখন নিউজিল্যান্ডের মতো অতটা অজেয় ছিল না। ওই সময়ে যে তাদের মাথায়ই শোভা পাচ্ছিল প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট। সেই কিউইদেরই তাদের মাটিতে হারানোর সাফল্য গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত থাকার পর নিজেদের মাটিতে সেটিই ছিল কিউইদের প্রথম হার।</p> <p>ওই টেস্ট দিয়ে ম্যাচ জেতানো পেসার হিসেবে এবাদত হোসেনের আবির্ভাব। গতির সঙ্গে সুইং আর বাউন্সে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন গুঁড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের পেস বিপ্লবের সূচনাও সেখান থেকেই।</p> <p>কিন্তু হায়! ক্রাইস্টচার্চে পরের টেস্টেই আবার পুরনো চেহারা। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের পাহাড়সম রানের জবাব দুই ইনিংস মিলেও দিতে পারেনি বাংলাদেশ। তাতে ইনিংস ও ১১৭ রানের বড় হার সঙ্গী হয়েছিল।</p> <p>মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পর থেকে এই সংস্করণে সেই ওঠা-নামাই চলেছে বাংলাদেশের। মাঝে মাঝে কিছু ঝলক থাকলেও শেষ বিচারে তাদের উত্থানটা আর হয়নি। এ কারণেই ৩০ আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডিতেই শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টটি বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠেছে আরো বড় পরীক্ষা। বড় এক সাফল্যের পর যে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের মতো ভেঙে পড়ার নজিরই বেশি। পিন্ডিতেই ঐতিহাসিক জয়ে দেশের ক্রিকেটে নতুন সূর্যোদয় হয়েছে বলে ধরা হচ্ছে। বাজে পারফরম্যান্সে সেই সূর্য আবার মেঘে ঢেকে যাবে না তো? পেছনের দিনগুলো সেই শঙ্কা জাগিয়ে রাখছে বলেই নাজমুল হোসেনদের জন্য পরের টেস্ট ম্যাচটি হয়ে গেছে আরো বড় অগ্নিপরীক্ষার প্রতিশব্দ। বাংলাদেশ অধিনায়কেরও সেটি অজানা নয়। তাই আগাম সতর্কতাই যেন উচ্চারিত হলো তার মুখে।</p> <p>এই সতর্কতা জেতার জন্য আগেই মরিয়া না হয়ে নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া মেনে চলার। সেটি ঠিকঠাক মানতে পারলে যে জয়ও ধরা দেয়, এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ তো নাজমুলরা নিজেরাই তৈরি করেছেন প্রথম টেস্টে। ড্রকেই ভবিতব্য বলে ধরে নেওয়া ম্যাচ বোলারদের দাপটে বের করে ফেলে বাংলাদেশ। এই জয়ের নায়ক নির্দিষ্ট কেউ নন, অনেকে। দলীয় খেলায় দলগত প্রচেষ্টার এই ‘মডেল’ই নিয়মিত অনুসরণ করতে চান নাজমুল, ‘পুরো দলেরই অবদান এতে। মুশফিক ভাইয়ের ইনিংসটা অসাধারণ ছিল। আমাদের দলকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে যদি পুরো ম্যাচটা দেখেন, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, আমরা সব বিভাগেই পারফরম করেছি। আমি অধিনায়ক হিসেবে সব সময় চিন্তা করি, আমরা যেন দল হিসেবেই প্রতিটা ম্যাচ খেলি। কখনো ফল আসবে, কখনো আসবে না। তবু যেন দল হিসেবে খেলি। এই ম্যাচে আমরা পুরোটা সময় দল হিসেবেই খেলেছি।’</p> <p>সামনের পরীক্ষায় পাস করতে চান প্রক্রিয়া মেনে চলার ফর্মুলায়, ‘পরবর্তী ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে জিতব, সেটার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আমরা সবাই বিশ্বাস করি, পরের ম্যাচ আমরা জিততে পারব। এটা পুরোটাই প্রক্রিয়ার ব্যাপার। আমরা ম্যাচ জেতার কথা ভাবছি না। আমরা কিভাবে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাব এবং সেশন ধরে ধরে খেলব, সেই চিন্তাই করছি।’ প্রথম টেস্টে এই ফর্মুলা অব্যর্থ ছিল। আসল পরীক্ষায়ও তা থাকবে তো?</p>