<p>২০০৫ সালে কলম্বোর পি সারায় সিরিজের একটি ওয়ানডে শেষে বাংলাদেশকে ধুয়েই দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে, ‘এমন ক্রিকেট খেলে কী লাভ বাংলাদেশের? অর্থহীন!’ প্রত্যাশিতভাবে স্বাগতিকরাই জিতেছিল। মাহেলার ক্ষোভের কারণ ছিল ভিন্ন। হার নিশ্চিত ধরে নিয়ে যে ঢিমেতালে খেলছিল বাংলাদেশ, সেটি নিরর্থক মনে হয়েছিল তাঁর।</p> <p>মাহেলার দেশেরই একজন চন্দিকা হাতুরাসিংহে। কোচিং ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় অস্ট্রেলিয়ায় কাটানোয় তাঁর সিস্টেমে আবার অজি-মেজাজও মিশে আছে। বাংলাদেশ দলের হেড কোচের ক্রিকেট দর্শন একমুখী এবং কিছুটা মারমুখীও—জিততে হবে, যেকোনো মূল্যে। সেই মনোভাব যদি হারের খাদে ঠেলেও দেয়, সমস্যা নেই। নিয়মিত বিরতিতে সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে এই মানসিকতার সুফল দেখা যায়।</p> <p>টেস্ট ক্রিকেটও মারমুখী! তবে এই মেজাজ বল আছড়ে সীমানার বাইরে ফেলা নয়। এই আক্রমণাত্মক মনোভাবের সারবত্তা হলো, যেকোনো মূল্যে নিজের উইকেট আগলে রাখা। লড়াইটা সময়ের সঙ্গে। সময় যত গড়াবে, এই আক্রমণাত্মক মেজাজ ততটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে দলকে। কামিন্দু মেন্ডিস কিংবা ধনঞ্জয়া ডি সিলভার কথাই ধরুন। সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন এই দুই শ্রীলঙ্কান। ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় এ নিয়ে মহাকাব্য লেখা যায়। প্রথম ইনিংসে দুজনেই করেছেন ১০২ রান করে। কামিন্দু আর ধনঞ্জয়ার ইনিংস বাদ দিলে শ্রীলঙ্কার অন্য ব্যাটাররা মিলে করেন মোটে ৭৪ রান।</p> <p>দল হিসেবে বিচ্ছিরি ব্যাটিং প্রদর্শনী। তবে এটাই তো টেস্ট ক্রিকেট। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কামিন্দু আর ধনঞ্জয়া চাইলে ধ্বংসস্তূপের চাপে বিপথগামী হলে উইকেট বিলিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা টেস্টের কার্যক্রম আক্রমণাত্মক মানসিকতার প্রয়োগ করেছেন সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে। এতে হয় কি, বিপর্যস্ত ড্রেসিংরুম নতুন করে উজ্জীবিত হয়। দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেছেন কামিন্দু ও ধনঞ্জয়া। তবে এবার দলের স্কোর ২৮০ নয়, অন্যদের টুকটাক অবদানে ৪১৮ রান করে ফেলে সফরকারীরা। প্রতিপক্ষের এই পুনরুজ্জীবনের তেজে পুড়ে ছাই বাংলাদেশ দল। কিসের লড়াই, ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব ম্যাচটা হারতে তৈরি নাজমুল হোসেন শান্তরা। নির্দিষ্ট কারোর নাম ধরে বাংলাদেশের পুরো ব্যাটিং ইউনিট আড়াল দেওয়ার সুযোগ নেই। ১৮৮ ও ১৮২ রানের দুটি অকার্যকর ইনিংসের দায় পুরো ব্যাটিং অর্ডারের। আরো বেশি দায় ‘টাইমড আউট’ ব্যাটিং মানসিকতার। সিলেটের উইকেটে বোলারদের জন্য সামান্য সহায়তা ছিল। দুই শর নিচে গুটিয়ে যাওয়া প্রথম দলও বাংলাদেশ নয়। তাই বলে অসহায় আত্মসমর্পণ তো গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো স্বীকৃত ব্যাটারকে দেখে মনে হয়নি লড়াই করতে ইচ্ছুক তিনি।</p> <p>জাতীয় দলের সাবেক এক অধিনায়ক আরো বিস্মিত চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং দেখে, ‘সিলেটে না হয় উইকেট কিছু ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি। তাই বলে চট্টগ্রামে এমন ব্যাটিং করবে? এটা অগ্রহণযোগ্য।’ যথারীতি বড় ব্যবধানেই হেরেছে বাংলাদেশ দল। তবে হারে তো কোনো সমস্যা নেই। হারের ব্যবধান নিয়েও কিছু বলার নেই। হার তো হারই। কিন্তু ব্যাটারদের লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে আসার মানসিকতা অগ্রহণযোগ্য। একবার নয়, দুই টেস্টের এই সিরিজে চার-চারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চরম উদ্বেগজনক।</p> <p>ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যুগে টেস্ট-অনীহার কথা বলা হয়। আগ্রহ বাড়াতে বোর্ড ম্যাচ ফি বাড়িয়েছে। প্রতি টেস্টে একজন ক্রিকেটার পান আট লাখ টাকা। অঙ্কের হিসাব বলছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে ক্রিকেটাররা সম্মিলিতভাবে ম্যাচ ফি পেয়েছেন ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সবাই মিলে রান করেছেন ৮৬৬। তাতে রানপ্রতি খরচ দুই হাজার টাকার কিছু বেশি। উল্লেখ্য, পাঁচতারা আবাসন, চার্টার্ড ফ্লাইট ও দৈনিক ভাতার খরচ, কোচিং স্টাফ ও চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের বেতন আমলে নেওয়া হয়নি!</p>