<p>আজকের প্রযুক্তির যুগে আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া খুবই সহজ। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি শরীরের অবস্থা ঠিক আছে কিনা। তবে আমাদের দেহ প্রায়ই বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আগেই জানান দেয়। কিছু সহজ পরীক্ষা রয়েছে যা আপনি বাড়িতে বসেই করতে পারেন। এগুলো শুধু প্রাথমিক ধারণা দেয়। তারপরও এসব পরীক্ষায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একজন পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।</p> <p><strong>ঘড়ির ছবি আঁকা</strong><br /> কাগজের ওপর একটি ঘড়ির ছবি আঁকা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা এ পরীক্ষাটি করে থাকেন। যদি সংখ্যা বা কাঁটায় কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায় তবে তা মস্তিষ্কের সমস্যা আছে বলে ধরে নিতে হবে। বিশেষ করে আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার লক্ষণ বোঝা যায়। এসব ক্ষেত্রে নিউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।</p> <p><strong>সিট অ্যান্ড স্ট্যান্ড পরীক্ষা</strong><br /> এই পরীক্ষায় পা ক্রস করে মেঝেতে বসতে এবং পুনরায় দাঁড়াতে বলা হয়। এর মাধ্যমে শরীরের নমনীয়তা, ভারসাম্য এবং পেশী শক্তি যাচাই করা হয়। যদি একাধিকবার অন্যের সাহায্য নিয়ে উঠতে-বসতে হয় তবে শরীরের শক্তি কমে যাওয়া বা হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সংকেত হতে পারে।<br />  </p> <p><strong>পায়ে গর্ত</strong><br /> পায়ের পাতায় চাপ দিয়ে দেখা যায় শরীরে পানি জমেছে কিনা। যদি চাপ দেয়ার পরে কিছুক্ষণ আঙুলের দাগ থাকে তবে বুঝতে হবে শরীরে পানি জমেছে, যা স্বাস্থ্যগত সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।</p> <p><strong>আঙ্গুলের ওপর চাপ</strong><br /> আঙ্গুলের নখে চাপ দিন। নখের রঙ পরিবর্তন হবে। নখ থেকে চাপ তুলে নিন। যদি নখের রঙ আগের অবস্থায় ফিরে আসতে খুব বেশি সময় না লাগে বুঝতে হবে রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাকভাবে চলছে। আর যদি নখের রঙ আগের অবস্থায় দেরি বুঝতে হবে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা আছে। দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।</p> <p><strong>শরীরে দাগ</strong><br /> শরীরে অনেক দাগ বা তিল থাকলে তা ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনা নির্দেশ করতে পারে। তবে দাগ দেখে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।</p> <p><strong>নিয়মিত নিজেকে পরীক্ষা</strong><br /> নারীদের জন্য নিয়মিত স্তন পরীক্ষা খুবই জরুরি। যেকোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। স্তনে বা শরীরের অন্য কোথাও চাকা চাকা বা অস্বাভাবিক গোটার মতো কিছু অনুভূত হলে কিংবা তরল নিঃসরিত হলে সেটা নিয়ে হেলাফেলা করবেন না। এটা ক্যান্সারের লক্ষণ।</p> <p><strong>ব্যথার উৎস</strong><br /> যদি আপনার পেশীতে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং নড়াচড়া করলে ব্যথা আরও বেড়ে যায়, তাহলে গরম পানির ব্যাগ দিয়ে সেই জায়গায় সেক দিতে পারেন। কারণ তাপ পেশীগুলোকে শিথিল করতে সাহায্য করে, যা ব্যথা কমাতে কার্যকর।</p> <p>টর্টিকলিস এবং হার্নিয়ার মতো সমস্যাগুলোর প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে পেশীতে ব্যথা দেখা দিতে পারে। টর্টিকলিস হলে সাধারণত ঘাড়ে ব্যথা হয় এবং মাথা একদিকে হেলে যায়। ঘাড়ের পেশী বেকায়দায় রেখে ঘুমানো, আঘাত পাওয়া, বা ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।</p> <p>হার্নিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের পেশী বা টিস্যু ছিঁড়ে ভিতরের অংশগুলো বেরিয়ে আসে, যা সাধারণত পেটের নীচের অংশে দেখা যায়।</p> <p>গরম সেক শুধু পেশীর ব্যথা নয়, বুকে ব্যথা, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা এবং পেটের ব্যথার ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে। তবে ব্যথা কমে গেলেও, এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে দেরি করবেন না।</p> <p><strong>শ্রবণশক্তি পরীক্ষা:</strong><br /> মোবাইল ও কম্পিউটারের অ্যাপ স্টোরগুলোতে কিছু শ্রবণশক্তি পরীক্ষার অ্যাপ পাওয়া যায়। এসব অ্যাপে কয়েক মিনিটের মধ্যেই শ্রবণশক্তির পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায়। তবে এই পরীক্ষার সময় সম্পূর্ণ শান্ত পরিবেশে থাকা জরুরি।</p> <p>পরীক্ষার শুরুতে আপনার বয়স ও লিঙ্গসহ কিছু মৌলিক তথ্য জানতে চাওয়া হবে। এরপর বিভিন্ন অডিও ফাইল শোনানো হবে, যা আপনাকে হেডফোন বা স্পিকারের মাধ্যমে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। এসব অডিওর মাধ্যমে আপনার কানের সংবেদনশীলতা মাপা হয়। বিভিন্ন স্তরের শব্দ যেমন নিম্ন, মধ্যম ও উচ্চ টোনের শব্দ শোনানো হবে এবং আপনি কোন স্তর পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছেন তা নোট করে রাখা হবে।</p> <p>পরবর্তীতে উচ্চ শব্দের পরিবেশে শব্দ শণাক্ত করতে বলা হবে, এবং আপনার পারফরম্যান্স অনুযায়ী স্কোর দেয়া হবে। এই স্কোরের ভিত্তিতে আপনার শ্রবণশক্তি কতটা স্বাভাবিক আছে এবং তা নিয়ে চিন্তার কারণ আছে কিনা তা জানানো হবে।<br /> যদি আপনার শ্রবণশক্তি নিয়ে সন্দেহ হয়, তাহলে অবশ্যই একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকরা এই অ্যাপের মাধ্যমে করা পরীক্ষাকে প্রাথমিক ধারণার জন্য যথাযথ মনে করেন, তবে আরও বিশদ পরীক্ষার জন্য অডিওমেট্রি মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হয়।</p> <p>তবে মনে রাখতে হবে, বাহ্যিক শব্দ পরীক্ষার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, যেমন মোবাইল বা পরিবেশ থেকে আসা শব্দগুলোর পার্থক্য।</p> <p><br /> এসব পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে পারেন। তবে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে পেশাদার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>সূত্র: বিবিসি</p> <p><br />  </p>