<p><strong>মরিস জেসাপ</strong><br /> পৃথিবীতে এমন সব মানুষ আছেন, যারা বিজ্ঞানের চাদর মুড়ি দিয়ে অলৌকিকতার চর্চা করেন। আত্মা, দেবতা, ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব এমনকি এলিয়েনের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে চান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বহুদিন ধরে এ চেষ্টা চলছে। মধ্যযুগে অ্যালকেমির চর্চাও আসলে একই ছিরিছাদে পরিচালিত হতো। মরিস জেসাপ ছিলেন ওই ধরনের বৈজ্ঞানিক। জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনাও।</p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/09/09/1423710">আরো পড়ুন : ফিলাডেলফিয়া রহস্য : পর্ব ২</a></p> <p>১৯০০ সালের ২০ মার্চ তাঁর জন্ম, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রকভিল শহরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সকয় মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখানেই গ্র্যাজুয়েশনও শেষ করেন তিনি। তখন সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি হয়। যুদ্ধ শেষ হয়, সেনাবাহিনী ছেড়ে আবার পড়াশোনা শুরু করেন, আইওয়ার ড্রেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন (পিএইচডি নয়)। সেখানেই গণিত ও জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে ১৯২০ সালে, যখন তিনি পিএইচডি গবেষক, তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণ করেন, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের সঙ্গে। দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা মানমন্দিরে বেশ কিছুদিন গবেষণা করেন। সেখানে তারা বেশ কিছু আবিষ্কার করেন যুগল তারা বা টুইন স্টার। ১৯৩৩ সালে তিনি সেই গবেষণার ভিত্তিতে লেখেন একটা থিসিস পেপার। কিন্তু তিনি আসলেই পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছিলেন কি না তার প্রমাণ নেই।</p> <p>জেসাপ যখন শিক্ষকতা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে তখন মন্দা চলছে। তাই শিক্ষক বা গবেষকদের পড়ানো বা গবেষণার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করতে হচ্ছিল। জেসাপকেও যেতে হয় একটি অভিযানে, একদল গবেষকদের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কৃষি বিভাগ তাদের পাঠায় ব্রাজিলে। খবর ছিল, অ্যামাজন নদীর উৎস মুখে নাকি আছে অপরিশোধিত রাবারের ভাণ্ডার। সেই কাজ তারা সফলভাবে শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। তখন তিনি আরেকটা কাজ পান। এবাররের অফারটা আসে ওয়াশিংটন ডিসির কার্নোগি ইনস্টিটিউট থেকে। আরেকটা অভিযান, তবে এবার দক্ষিণ আমেরিকায় নয়, মতো মধ্য আমেরিকায়। একদল গবেষক সেখানে যাচ্ছেন মায়া সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো খুঁজে বের করতে। জেসাপ যাচ্ছেন সেই অভিযানের ফটোগ্রাফার হিসেবে।</p> <p>প্রথমে মেক্সিকো, তারপর পেরু। মায়া ও ইনকা সভ্যতায় তাঁর দল অনুসন্ধান চালায়। জেসাপের সঙ্গী গবেষকরা কী ভেবেছিলেন জানা যায় না, কিন্তু ধংসাবশেষ, পাথরের তৈরি বিশাল সব স্থপনা, সেগুলোর নিপুণ কারকার্য দেখে অনুমান করেন, এসব যারা বানিয়েছিল, তারা মাপজোখ হিসাব-নিকাশ, প্রকৌশলবিদ্যা খুব ভালোভাবেই জানত। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, এ পর্যন্ত বেশ ভালোভাবে হিসাব কষেছিলেন জেসাপ। কিন্তু এর পরেই তিনি ভুলটা করলেন। নিজের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ে যান কনস্পাইরেসি থিওরির দিকে। এত বড় বড় পাথর পরিবহন, সেগুলো ওপরে তোলা, সেই যুগের মানুষের কিছুতেই পক্ষে সম্ভব ছিল না বলে মনে করেন জেসাপ। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভারবাহী পশু হলো লামা। এদের পক্ষেও সম্ভব নয়, এত বড় বড় পাথর পরিবহন করা। তাহলে কিভাবে করা হলো, কিভাবেই বা অত উঁচুতে তোলা হলো পাথরগুলো।</p> <p>চলবে...<br /> সূত্র : অল অ্যাবাউট হিস্ট্রি</p>