<p>বাংলাদেশের কিছু খেলা একদম হারিয়ে গেছে। কিছু হারিয়ে যেতে বসেছে। কিছু কিছু খেলা এখনও আছে। ওপেন টু বায়োস্কোপ হারিয়ে যাওয়া একটা খেলা। ১৫ বছর আগেও সারাদেশে ছেলেমেয়েরা এই খেলা খেলত। এখনও খেলে, তবে খুব কম। ওপেন টু বায়োস্কোপ কিন্তু খেলা। খেলায় দল গঠণ করার একটা পদ্ধতি। সেই পদ্ধতিটাও আবার ভারি মজার। খেলায় যেমন ছেলেমেয়েরা আনন্দ পায়। দল গঠন করতেও তেমনি মজা পায়। পাওয়ারই কথা, এটাও যে একটা খেলা!। তার মানে খেলা শুরু করতে হয় আরেকটা খেলা দিয়ে। সেটারই নামে ওপেন টু বায়োস্কোপ।</p> <p>কেন খেলা শুরু করার আগে এই খেলা খেলতে হয়? আগেই বলা হয়েছে, দল গঠণ করার জন্য। সেটা কেমন একটু জেনে নেয়া যাক। ধরা যাক, দশ জন ছেলেমেয়ে মাঠে গেছে খেলতে। দাঁড়িয়াবান্ধা খেলবে তারা। </p> <p>একদলে তো আর সবাই খেলতে পারে না। খেলার জন্য দরকার দুটো দল। পাঁচ জন পাঁচ করে ভাগ করে দুটো দল তৈরি করা যায়। কিন্তু সবাই তো সমান দক্ষ নয়। কেউ হয়ত ভালো খেলে। কেউ খুব খারাপ আবার কেউ মোটমুটি খেলা পারে। সমঝোতা করে ভালো-মন্দ মিশিয়ে দুটো দল তৈরি করা যায়। কিন্তু ছোটরা অত সমঝোতার ধার ধারবে না। </p> <p>একজন হয়তো খুব ভালো খেলে। তার আরেক বন্ধুও খুব ভালো খেলে। দুজনে খুব ভাব। তাই দুজনেই একদলে খেলতে চায়। তাদের আরেক বন্ধুও খুব ভালো খেলে। সেও হয়তো ওই দুজনের দলে খেলতে চাইবে। তখন বাঁধে বিপত্তি। </p> <p>এক দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই যদি ভালো হয়, অন্য দলের বেশির ভাগই যদি খারাপ হয়। তাহলে খেলা কি জমে? এমন হলে ভালো দলই শুধু জিতবে। খারাপটা হারবে। এটা কেমন হয়, খেলার মজা থাকে?<br /> এই সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য ভাগাবাগির দরকার। কিন্তু সেই ভাগটা হওয়া চাই নিরেপেক্ষ। এজন্য চাই নিরপেক্ষ একটা পদ্ধতি। সেটাই হলো ওপেন টু বায়োস্কোপ।</p> <p>এই খেলায় আগে দুজন সেরা খেলোযাড় বাছাই করা হয়। এদেরকে বলে রাজা। ফুটবল ক্রিকেটে যেমন অধিনায়ক থাকে, গ্রামীণ এসব খেলায় তাকে রাজা। দুই রাজা প্রথমে মুখোমুখি দাঁড়ায়।  দুই হাত উঁচু করে তোরণ তৈরি করে। ওপরের ছবির মতো।</p> <p>বাকি খেলোয়াড়রা লাইন দিয়ে দাঁড়ায়। তারপর পরস্পরের কাঁধে হাত রেখে রেলগাড়ির একটা সারি তৈরি করে। তারপর সেই রেলগাড়ি তোরণের ভেতর দিয়ে পার হয়। ওপরের ছবির দিকে তাকালেই বুঝতে পারবে। </p> <p>তোরণের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় ছেলেমেয়ে এক যোগে একটা ছড়া কাটে ওরা—<br /> `ওপেন টু বায়োস্কোপ<br /> নাইন টেন তেইশ কোপ<br /> সুলতানা বিবিয়ানা<br /> সাহেব-বাবুর বৈঠকখানা<br /> সাহেব বলেছে যেতে <br /> পানের খিলে খেতে<br /> পানে তে মৌরি বাটা<br /> স্প্রিংয়ের চাবি আঁটা<br /> যার নাম মণিমালা<br /> তারে দেব মুক্তার মালা।’</p> <p>মুক্তার মালা বলার সাথে সাথে ছড়া শেষ হয়ে যায়। ছড়া শেষের মুহূর্তে যে খেলোয়াড় তোরণের ভেতর আটকা পড়ে তাকে দুই রাজা গলায় মালা দেয়ার মতো করে বন্দি করে। </p> <p>আগেই ঠিক করা থাকে যে খেলোয়াড় প্রথম ধরা পড়বে সে কোন রাজার দলে খেলবে। </p> <p>এভাবে প্রথম খেলোয়াড়ের দল নির্বচন হয়ে গেলে তাকে বাদ দিয়ে আবার শুরু হয় রেলগাড়ি চলা। সাথে ছড়াতো আছেই। দ্বিতীয়বারে যে ধরা পড়ে সে দ্বিতীয় রাজার দলে খেলে। এভাবে একজন করে নিজ ধরে দলে ভেড়ায় রাজারা।</p>