<p>আজ ৯ জানুয়ারি, বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৯৮ সালের এই দিনে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানীরা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই আবিষ্কারটির ফলে মহাবিশ্বের প্রসারণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের পুরানো ধারণা একেবারেই পাল্টে যায়। </p> <p>সেই সময় আন্তর্জাতিক জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানীদের দুটো পৃথক টিম দূরবর্তী A1 টাইপ সুপারনোভার ঔজ্জ্বল্য নিয়ে গবেষণা করছিলেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এ ধরনের সুপারনোভাকে স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এগুলোর ঔজ্জ্বল্য সবসময় স্থির অবস্থায় থাকে। এসব সুপারনোভার আলোক বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর ছুটে চলার গতি ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। দেখে মনে হয় কোন এক অদৃশ্য শক্তি গ্যালাক্সিগুলোকে ক্রমাগত দূর থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এই যুগান্তকারী আবিস্কারটির পেছনে ছিলো তিনজন জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা। এরা হলেন, অ্যাডাম রিস, সল পার্লমাটার এবং ব্রায়ান স্মিড। এই আবিস্কারটির জন্য ২০১১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে তাঁরা তিনজনই যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। </p> <p>গ্যালাক্সিগুলোর তরান্বিত এই প্রসারণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এর পেছনে এক ধরনের গুপ্ত শক্তি কাজ করছে। বিজ্ঞানীরা এই গুপ্তশক্তির নাম দিয়েছেন ডার্ক এনার্জি। তাঁরা হিসেব করে বের করেছেন, মহাবিশ্বের শতকরা ৭০ ভাগই হচ্ছে ডার্ক এনার্জি। মহাশূন্যের সর্বত্রই রয়েছে এর সুষম অবস্থান। অন্যভাবে বলতে হয়, প্রকৃতপক্ষে এটি মহাশূন্যেরই একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মহাশূন্য আসলে শূন্য নয়, এর সর্বত্রই রয়েছে ডার্ক এনার্জি। এই গুপ্ত শক্তির প্রভাবেই গ্যালাক্সিগুলোর দূরে সরে যাবার গতি ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। এক কথায় বলতে হয়, মহাকর্ষের বিপরীতে কাজ করছে ডার্ক এনার্জি। </p> <p>ডার্ক এনার্জির উৎস নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি। এ ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ফিল্ড সমীকরণ থেকে বাদ পড়া কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের মাধ্যমে ডার্ক এনার্জির সবচেয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। এখানে বলে রাখি, ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ফিল্ড সমীকরণে একটি ধ্রুবকের আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই ধ্রুবকটির নাম হলো, কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট। গ্রীক অক্ষর ল্যামডা দিয়ে তিনি একে চিহ্নিত করেছিলেন। তখন ধারণা করা হতো মহাবিশ্ব চিরকাল স্থির অবস্থায় রয়েছে। পরবর্তীতে যখন বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব আবিষ্কৃত হলো তখন সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য আইনস্টাইন তাঁর সমীকরণ থেকে ল্যামডাকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট হচ্ছে তাঁর বিজ্ঞানী জীবনের সবচাইতে বড় ভুল। </p> <p>কিন্তু বর্তমান যুগের অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, আইনস্টাইনের ফিল্ড সমীকরণ থেকে বাদ পড়া সেই কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্টের মাধ্যমেই ডার্ক এনার্জির সবচেয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। আবার অনেকে মনে করেন, মহাশূন্যের অসীম শূন্যতার মাঝে সর্বদাই কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশনের ফলে ডার্ক এনার্জির সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এর স্বপক্ষে এখনো কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। ডার্ক এনার্জির রহস্য এখনো অধরাই রয়ে গেছে।</p> <p>সূত্র: স্পেস ডট কম<br />  </p>