<p style="text-align:justify">দেশে বন্যার পর উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। এর মধ্যে বন্যাক্রান্ত ২১ জেলায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৬৭ হাজার মানুষ। আর বন্যায় বিভিন্নভাবে প্রাণহানি হয়েছে ১০১ জনের। বন্যাক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে ছয় জেলায় ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, চর্ম ও চোখের প্রদাহজনিত রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বন্যাক্রান্ত জেলাগুলোর এসব তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার। দেশে বন্যা শুরু হয় জুন মাসে। সেই থেকে দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা হাসপাতালগুলো থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই শাখা।</p> <p style="text-align:justify">স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩৩ জন, চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ১৩৮ জন,  শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ৩০৭ জন। এ ছাড়া আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে ৭৫৯ জন, সর্পদংশনে আক্রান্ত হয়েছে ৫৬৪ জন, আর চোখের প্রদাহে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩৮ জন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>১৪ জেলায় ১০১ মৃত্যু</strong></p> <p style="text-align:justify">স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর বন্যায় বিভিন্নভাবে সবচেয়ে বেশি ২০ জনের প্রাণহানি হয়েছে কুমিল্লা জেলায়। এরপর ফেনী জেলায় ১৫ জন, নোয়াখালী জেলায় ১১ জন, মৌলভীবাজার জেলায় ১০ জন, বাহ্মণবাড়িয়ায় ৯ জন, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে সাতজন করে, চট্টগ্রাম, সিলেট  গাইবান্ধায় পাঁচজন করে, কক্সবাজার ও লক্ষ্মীপুরে তিনজন করে এবং লালমনিরহাটে একজনের মৃত্যু হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এর মধ্যে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে, ডায়রিয়ায় মারা গেছে চারজন, আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এবং সর্পদংশনে মারা গেছে তিনজন, বজ্রপাতে দুজন, অন্যান্য কারণে ১৮ জন।</p> <p style="text-align:justify">জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্যায় নানাভাবে পানি দূষণযুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় হলো, বন্যাকবলিত এলকায় সুপেয় ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা। কেউ যেন কোনোভাবে দূষণযুক্ত পানি পান না করে সেটিসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা নিশ্চিত করা গেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সহজ হবে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘যে কারণেই ডায়রিয়া হোক না কেন, ওআরএস ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে। যাতে কোনো ডায়রিয়া রোগী ওআরএসের (স্যালাইন) কারণে পানিশূন্য হয়ে মৃত্যুবরণ না করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই সময় শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ অসংক্রামক রোগে ভোগা রোগীর দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ এরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>রোগী বেশি যে ছয় জেলায়</strong></p> <p style="text-align:justify">বন্যাকবলিত ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় ডায়রিয়া ও চর্মরোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ১৮ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আক্রান্ত ১৮৬ জন রোগী, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ২০ শয্যার বিপরীতে ২৪৮ জন রোগী ও লক্ষ্মীপুর জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার বিপরীতে ৯৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">ধারণক্ষমতার ১১ গুণ বেশি রোগী আসায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এর মধ্যে ২৫০ শয্যা ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রোগীদের ঠাঁই না হওয়ায় হাসপাতালের সামনের রাস্তা ও গাছের নিচে সেবা দেওয়া হচ্ছে অনেক রোগীকে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>চর্মরোগে করণীয় কী?</strong></p> <p style="text-align:justify">চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্যা-পরবর্তী চর্মরোগের অন্যতম কারণ ভেজা কাপড়ে দীর্ঘ সময় থাকা। যেহেতু এ সময় বিভিন্ন বর্জ্য ও কেমিক্যাল পানিকে দূষিত করে দেয়, ফলে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ বেড়ে যায়। ছত্রাক সংক্রমণ মাথার ত্বকে হলে টিনিয়া ক্যাপিটিস, কুঁচকিতে হলে টিনিয়া ত্রুরিস, হাত-পায়ে হলে টিনিয়া পেডিস বলা হয়।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘এই সময় খোসপাঁচড়া হয়। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় একজনের হলে খুব দ্রুতই আশপাশের লোকজনদের আক্রান্ত করে। এ জন্য পরিবারের কারো খোসপাঁচড়া হলে সবার চিকিৎসা নিতে হবে। আরেকটা হলো, আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ধরনের রোগীদের পরিমাণ মতো ওষুধ দেওয়া জরুরি। নয়তো ক্ষতস্থানে সংক্রমণ বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর যাদের আগে থেকে চর্মরোগ রয়েছে, তাদের সাবধানতা খুব জরুরি।</p>