<p>ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তঃদেশীয় রেল চলাচলের তিনটি পথেই নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে ট্রেন চালাতে সম্মতি দিচ্ছে না ভারত। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে চলমান যাত্রীবাহী তিন ট্রেন বন্ধ, সেখানে রাজশাহী-কলকাতা নতুন রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর বিষয়টি কোনো আলোচনাতেই নেই।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ট্রেন চালানোর প্রসঙ্গে ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে বেশ কয়েকবার অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করে। কিন্তু এতে তেমন কোনো সুফল আসেনি। ট্রেন চালানোর বিষয়ে সায় দেয়নি ভারত। তবে গত সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালন বিভাগ থেকে ভারতীয় রেলের পরিচালন বিভাগে পণ্যবাহী ট্রেন চালুর বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠির বিপরীতে সোমবার রাতেই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে অনাপত্তি পায়। ফলে বাংলাদেশে আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রেনের খালি বগি (ওয়াগন) গত মঙ্গলবার থেকে ভারতে প্রবেশ করে। একই সঙ্গে ভারতে আটকে থাকা মালগাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কিন্তু যাত্রীবাহী ট্রেনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।</p> <p>জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু যাত্রীবাহী ট্রেন নিয়ে ভারতের দিক থেকে কোনো আলোচনা নেই। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে।’</p> <p>বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচলের কথা উল্লেখ করে রেলপথ মন্ত্রণালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য সচিবের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন ওই সময়ের সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। </p> <p>চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলকারী আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন, মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন এবং বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনসহ মালবাহী ট্রেন পুনরায় চলাচল বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। এছাড়া বর্তমানে ভারতীয় রেলের ২৫৫টি খালি ওয়াগন (পণ্যবাহী বগি) বিভিন্ন স্টেশনে অপেক্ষমান রয়েছে। ফলে খালি ওয়াগনগুলো স্টেশনের ইয়ার্ড লাইন দখল করায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সেগুলো নেওয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করা হলেও বগিগুলো নেওয়া হয়নি। এছাড়া খালি বগিগুলো নিতে কোনো লাইট ইঞ্জিন পাঠানো হয়নি।</p> <p>এছাড়া বিভিন্ন ইন্টারচেঞ্জ (দুই দেশের রেলের সীমান্ত কেন্দ্র) বুটের মাধ্যমে ১২ আগস্ট ভারত থেকে লোড রেক বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে অনুমতি দিলেও এখন কোনো লোড ট্রেন পাঠানো হয়নি।</p> <p>রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৮টি ইন্টারচেঞ্জ থাকলেও সচল রয়েছে ৫টি। এর মধ্যে তিনটি পথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। ১৭ জুলাই রাতে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছায়। ট্রেনটি পরদিন রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে ছেড়ে যায়নি। ট্রেনটি বর্তমানে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান করছে। ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ির রুটে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ, ঢাকা-কলকাতা রুটে মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করতো।</p> <p>এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি এখন সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হবে। দুই দেশের রেলওয়ে দিয়ে সমাধান হচ্ছে না। আমরা একাধিকবার চেষ্টা করে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করতে পেরেছি। কিন্তু যাত্রীবাহী ট্রেনের ক্ষেত্রে ভারতীয় রেল নীরব থাকছে। তারা তাদের সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’</p> <p>এদিকে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি উত্থাপন করেছে বলে রেল মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সূত্র রবিবার কালের কণ্ঠকে আভাস দিয়েছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। </p> <p>জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দ্বিপাক্ষিক পূর্ব-পশ্চিম) মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যারা জানেন তারাও এভাবে বলবে না। আপনি ব্রিফিংয়ে বিষয়টি জানতে চাইতে পারেন।’</p> <p>তবে পক্রিয়া সম্পর্কে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা যেহেতু দুই দেশের বিষয়, তাই হাই কমিশনে জানানোর আগে বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। একটি চলমান বিষয়ে ভারত যেহেতু এখন চাচ্ছে না, তাই আলোচনার দরকার হবে। হাই কমিশনের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’</p> <p>দেশের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গত ১৮ জুলাই দেশের সব ধরণের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ওই দিন থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে চলমান আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২৫ জুলাই আন্তঃদেশীয় মালবাহী ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ১২ আগস্ট সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।</p>