<p>চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুন পর্যন্ত গত পাঁচ মাসে সারা দেশে সাপের কামড়ের শিকার হয়েছে ৬১০ জন। এদের মধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৩৫ জন পুরুষ ও তিনজন নারী। বুধবার (১০ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এ তথ্য জানায়।</p> <p>সাম্প্রতিক সময়ে ‘রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া’ সাপ নিয়ে ভয় ও আতঙ্কে থাকা সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।<br />  <br /> সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন জানান, সাপের কামড় বা দংশনের পরে দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা গেলে এর অ্যান্টিবডিগুলো সাপের বিষকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। যার ফলে রোগীর আক্রান্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো বেঁচে যায়, শঙ্কামুক্ত হয় রোগীও। <br /> দেশে চার লাখের অধিক মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। মারা যায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ। তবে কোন সাপের কামড়ে কত মৃত্যু হয়েছে এ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তথ্য থাকলে সারা দেশের কোনো তথ্য বা গবেষণা নেই।</p> <p>মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, সাপ বিষয়ে অপর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান বিষধর সাপের মধ্যে গোখড়া, ক্রেইট ( কালাচ), চন্দ্রবোড়া (রাসেলস ভাইপার) ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্যও আছে।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছরে এ পর্যন্ত মোট ৪১৬ জন সাপে কামড়ের রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে বিষধর সাপের কামড়ের শিকার ৭৩ জন। চন্দ্রবোড়া ১৮ জন, ক্রেইট ১২, কুবরা ১৩ ও অন্যান্য ৩০। মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। এর মধ্যে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে ৫ জন, ক্রেইট ২, কুবরা ১ ও অন্যান্য তিনজন।</p> <p>চন্দ্রবোড়া সাপের মৃত্যু ২৯ শতাংশ</p> <p>স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চন্দ্রবোড়ার অস্তিত্ব এবং এর দংশনে মৃত্যু ইতিহাস ১৯২০ সালেই স্বীকৃত আছে। তবে ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই সাপের দংশনের প্রথম রিপোর্ট লিপিবদ্ধ হয়। প্রাথমিকভাবে সাপটি রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা গেলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এটি ২৭ জেলায় ছড়িয়েছে। </p> <p>২০১৩ থেকে চলতি বছরের ১২ জুন পর্যন্ত রাজশাহী মেডিক্যালে চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে শিকার হওয়ার ২৩৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। সুস্থ হয়েছে ১৬৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের। যা মোট আক্রান্তের ২৯.৩৬ মৃত্যু হয়েছে।</p> <p>কী করা যাবে কী করা যাবে না<br />  <br /> বিষধর সাপের কামড়ে দংশিত স্থান দ্রুত ফুলে যায়, ক্রমাগত রক্তপাত হয়, রোগীর ঘুম ঘুম ভাব হওয়া বা চোখের ওপরের পাতা ভারী হওয়া বা বুজে আসা, প্রস্রাব কমে যাওয়া, কালো  রঙের প্রস্রাব হওয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে বিষধর সাপে কামড়িয়েছে। </p> <p>এ সময় দংশিত অঙ্গ বিশ্রাম ও অচল করে রাখতে হবে এবং মোটরযানে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। দংশিত স্থানে কোনো রকম গিঁট দেওয়া যাবে না। দংশিত স্থানে কাটা বা সুঁই ফুটানো কিংবা কোনো প্রলপ দেওয়া যাবে না। ওঝা বা বৈদ্য দিয়ে চিকিৎসা কিংবা ঝাড়-ফুঁক করে অযথা সময়ক্ষেপণ করা যাবে না।<br />  <br /> টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও মেডিসিনে অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, ‘আমরা যে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করি এগুলো দক্ষিণ ভারতের চার ধরনের সাপ থেকে বিষ নিয়ে এগুলো তৈরি হয়। এটি কিন্তু একেবারে উত্তম মানের অ্যান্টিভেনম নয় এবং এটি প্রায় একশ বছরের পুরনো প্রযুক্তি।’</p> <p>এম এ ফয়েজ বলেন, ‘আমার যে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করি এগুলো কাজ করে কি না এগুলো দেখার জন্য আমাদের কীট দরকার। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার অধীনে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে এক ধরনের গবেষণা হচ্ছে। এখানে শনাক্তকরণের জন্য প্রায় ৩৫০ সাপ রয়েছে। এসব সাপের বিষ নিয়ে অ্যান্টিভেনমের জন্য গবেষণা হচ্ছে।’<br />  <br /> তিনি বলেন, বিষধর সাপের কামড়ে অ্যান্টিভেনম চিকিৎসা একমাত্র চিকিৎসা না। এটা হলো অন্যতম প্রধান চিকিৎসা। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পরও ২০ থেকে ২২ ভাগ রোগীর মৃত্যু হয়। এখানে সময় এবং সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য কমপক্ষ বড় হাসপাতালগুলো যদি ২৪ ঘণ্টার জন্য স্নেক বাইট ক্লিনিক করা যায় তাহলে মৃত্যু কিছু কমানো সম্ভব। মনে রাখতে হবে আনুষঙ্গিক কিছু চিকিৎসা রয়েছে। সেগুলো যত দ্রুত দেওয়া যাবে ফল ততো ভালো হবে দেরিতে দিলে ফল কম পাওয়া যাবে।<br />  <br /> বাংলাদেশে সর্প দংশনের কর্মকৌশল ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২০২৮) তৈরি করা হয়েছে। সর্পদংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ ৫০ ভাগ মৃত্যু এবং অক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যে এই কর্মকৌশল সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখবে।</p>