<p>রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজার গাবতলীর আমিনবাজারে স্থানান্তর করা নিয়ে ব্যবসায়ী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মধ্যে টানাপড়েন চলছে। উপযুক্ত সড়ক ও স্থাপনা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারকে আমিনবাজারে সরিয়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা ব্যবসা গোছাতে আরো সময় চান। একই সঙ্গে কারওয়ান বাজারেই আধুনিক বাজার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।</p> <p>ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, কারওয়ান বাজারে সারা দেশ থেকে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ ট্রাক কাঁচামাল নিয়ে প্রবেশ করে। বাজারে প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে আমিনবাজারে একসঙ্গে এত ট্রাক প্রবেশ করে অল্প সময়ের মধ্যে মাল খালাস করে বেরিয়ে যেতে পারবে না। ফলে নষ্ট হবে কাঁচামাল, ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা। তাই নতুন করে ব্যবসা দাঁড় করানোর শঙ্কাসহ নানা কারণে ব্যবসা গোছাতে আরো সময় চান কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা।</p> <p>জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর দ্রুতই কারওয়ান বাজারের দোকান স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে কারওয়ান বাজারের পরিত্যক্ত ঘোষিত কাঁচামাল আড়ত ভবনের ১৭৬টি এবং এর দুই পাশে টিনের ছাউনিতে থাকা অস্থায়ী কাঁচাবাজারের আরো ১৮০টি দোকান রাজধানীর গাবতলী এলাকায় আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে স্থানান্তর করা হবে।</p> <p>কারওয়ান বাজার পাকা আড়ত ভবন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমিনবাজার উপযোগী নয়। এটার অন্যতম কারণ হচ্ছে শাটারওয়ালা ছোট ছোট দোকান। কাঁচামালের ব্যবসা শাটারযুক্ত আড়তে করা যায় না। কাঁচামালের আড়ত থাকতে হয় খোলামেলা। চারপাশে যে পরিমাণ রাস্তার প্রয়োজন সেই পরিমাণ রাস্তা নেই। ৪০০ থেকে ৫০০টি ট্রাক লোড-আনলোডের জন্য যে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা দরকার, সেটা নেই আমিনবাজারে।’</p> <p>সাইফুর রহমান আরো বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে কারওয়ান বাজারে ব্যবসা করছেন হাজার হাজার ব্যবসায়ী।</p> <p>এর সঙ্গে যুক্ত আছেন লাখ লাখ শ্রমিক। এই বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যাংক, রেস্তোরাঁসহ নানা ধরনের ব্যবসা। এখান থেকে বাজার তুলে দেওয়া হলে হাজার হাজার ব্যবসায়ী তাঁদের পুঁজি হারাবেন। বেকার হবেন লাখ লাখ শ্রমিক। কারওয়ান বাজার থেকে কাঁচামালের আড়ত সরালে পুরো দেশে সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতির একটা প্রভাব পড়তে পারে। আগে সিটি করপোরেশন বলেছিল কারওয়ান বাজারের স্থায়ী বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীদের যাত্রাবাড়ীতে নেবে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে আমিনবাজারে নেওয়া হবে। কাঁচামালের ব্যবসা করার মতো আমিনবাজারে সেই পরিবেশ নেই।’</p> <p>কারওয়ান বাজার স্থানান্তর কমিটির সদস্যসচিব ডিএসসিসির অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, ‘কারওয়ান বাজার থেকে তো ব্যবসায়ীদের আর উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। সব সুবিধা নিশ্চিত করেই ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করা হচ্ছে। তাই আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে না যাওয়ার কোনো কারণ নেই।’</p> <p>প্রতিদিন কারওয়ান বাজারে রাজধানীর প্রায় এক লাখ মানুষ কেনাকাটা করতে যান। মাছ-মাংস থেকে শুরু শাক-সবজি সবই তাঁরা এই বাজার থেকে নিয়মিত কেনেন। কারওয়ান বাজার স্থানান্তর হলে তাঁরাও বড় বিড়ম্বনায় পড়বেন। আবার যেসব খুচরা ব্যবসায়ী কারওয়ান বাজার থেকে কিনে আশপাশের বাজারগুলোতে বেচেন, তাঁদেরও ছুটতে হবে আমিনবাজারে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।</p> <p>রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কারওয়ান বাজার থেকে নিয়মিত আমরা বাজার করি। কারণ অন্যান্য বাজারের চেয়ে এই বাজার থেকে সব জিনিস অনেকটাই কমে কেনা যায়। এই পাইকারি বাজারটি আমিনবাজারে চলে গেলে আমাদের মতো হাজার হাজার ভোক্তা ক্ষতির মুখে পড়বেন। কারণ এখান থেকে বাজার করলে সংসারের খরচ দুই-তিন হাজার টাকা সাশ্রয় হয়।’</p> <p>ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘বিদেশিদের সুন্দর ভিউ দেওয়ার জন্য কাঁচাবাজার সরে যাবে, এটি হতে পারে না। বরং কারওয়ান বাজারের ভবনগুলো যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলো অপসারণ করে সেখানে একটি আধুনিক কাঁচাবাজার হতে পারে। কারণ যখন কাঁচাবাজারটি গাবতলীতে স্থানান্তর হবে, তখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যেতে পারে।’ কারওয়ান বাজারে কাঁচামালের আড়তের ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, ‘দীর্ঘ সময় কাঁচামালের আড়তগুলো লাখ লাখ মানুষের জীবিকার একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। এখন আড়ত ভবন ভেঙে ফেললে সব খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’</p>