সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২০ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র নির্বাচিত হন মো. আতিকুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রাজধানী ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করার ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। আগামীকাল সোমবার মেয়র হিসেবে তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার চার বছর পূর্তি হচ্ছে। এই চার বছরে ঢাকাকে স্মার্ট সিটি করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
মেয়র আতিকের চার বছর
আধুনিকায়নের পথে এগোচ্ছে উত্তর সিটি
- ► মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে পরিত্যক্ত উপকরণ কেনার উদ্যোগ
- ► কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের পর দ্রুত দোকান বরাদ্দ
- ► চলতি বছর লাগানো হবে ১ লাখ ২০ হাজার গাছ
জহিরুল ইসলাম

ডিএনসিসির মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জলাবদ্ধতা নিরসন, অবৈধ দখলে থাকা খাল উদ্ধার, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, যানজট নিরসন, মশা নিধন, পরিবেশবান্ধব সড়ক বাতি স্থাপন, পার্ক-খেলার মাঠ আধুনিকায়ন, ডিএনসিসি করোনা হাসপাতাল চালু, পাবলিক টয়লেট স্থাপন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নগরের উন্নয়নে সমঝোতা চুক্তিসহ জলাশয় রক্ষায় কাজ শুরু করেন।
সুস্থ ঢাকা প্রতিশ্রুতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করা, বর্জ্য অপসারণসহ ড্রেনের বর্জ্য নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাসাবাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (বর্জ্য রাখার বড় ঘর) তৈরি করা হয়েছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
সুস্থ ঢাকা ইশতেহারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র। উত্তর সিটি এলাকায় এক হাজার ২৫০ কিলোমিটার ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার করছে ডিএনসিসি।
পার্ক ও মাঠের আধুনিকায়ন
ডিএনসিসির প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, গত চার বছরে ২৪টি পার্ক ও খেলার মাঠ উদ্বোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুরে ১৬ বিঘা জমির ওপর (বালুর মাঠ) একটি মাঠের জায়গা প্রধানমন্ত্রী ডিএনসিসিকে দিয়েছেন। চলতি বছর উদ্বোধন করা হয়েছে গুলশানে ডা. ফজলে রাব্বি পার্ক।
মশা নিয়ন্ত্রণ
সিটি করপোরেশন নাগরিকদের যেসব সেবা দিয়ে থাকে এর মধ্যে মশা নিধন বা নিয়ন্ত্রণ অন্যতম। এ জন্য ডিএনসিসি ৫৪টি ওয়ার্ডে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ ছাড়া বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মশা নিধনে ল্যাব স্থাপন এবং পাঠ্যপুস্তকে এডিস মশা সম্কর্কে সচেতনতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যবস্থা নিয়েছে ডিএনসিসি। লার্ভিসাইডিং ও অ্যাডাল্টিসাইডিং করছে। এডিসের লার্ভা পেলে ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন।
যেসব পরিত্যক্ত দ্রব্যে পানি জমে এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে, সেসব দ্রব্য সিটি করপোরেশন কিনে নিচ্ছে। ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, দইয়ের কাপ, পুরনো টায়ার, কমোড, রঙের কৌটা—এগুলো ডিএনসিসির কাউন্সিলরদের কাছে নিয়ে গেলে তাঁরা কিনে নিচ্ছেন।
বায়ুদূষণ রোধ
বায়ুদূষণ রোধে জার্মান প্রযুক্তির অত্যাধুনিক স্ক্রে-ক্যানন ব্যবহার করছে ডিএনসিসি। এ ছাড়া ১০টি ওয়াটার ব্রাউজার দিয়ে দৈনিক চার লাখ লিটার পানি ছিটানো হয়। সম্ক্রতি দাবদাহের মধ্যে চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের পরামর্শে স্ক্রে ক্যাননের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানি ছিটানো হয় বলে জানান মেয়র।
গত বছর ৮০ হাজার গাছ লাগিয়েছে উত্তর সিটি। চলতি বছর আরো এক লাখ ২০ হাজার গাছ লাগানো হবে।
আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ
মেয়র আতিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর গত চার বছরে ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় ৪৯টি নতুন পাবলিক টয়লেট স্থাপনসহ ১৫টি সংস্কার করা হয়েছে। এসব পাবলিক টয়লেটে নারী ও পুরুষদের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। এ ছাড়া গোসল, অজু, লকার, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।
ঢাকার ফুটপাত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন
ডিএনসিসি মেয়র নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। রাস্তা নির্মাণে সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ পেতে হলে অবশ্যই তা ২০ ফুট প্রশস্ত হতে হবে। এমন নির্দেশনার পর মিরপুরের মোল্লা রোড, আদর্শ রোড, পীরেরবাগ, কাওলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ২০ ফুট চওড়া করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
খাল উদ্ধার
২০২১ সালে ওয়াসা থেকে ২৯টি খালের দায়িত্ব বুঝে পায় ডিএনসিসি। এরপর খাল উদ্ধার, খনন, পরিষ্কার, খালের পার সবুজায়ন, সাইকেল লেন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ শুরু করে ডিএনসিসি।
জলাবদ্ধতা নিরসন ও রাস্তা প্রশস্ত করার উদ্যোগ
ইসিবি স্কয়ার থেকে কালশী পর্যন্ত ৩.৭০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করেছে ডিএনসিসি। এ ছাড়া কুড়িল ফ্লাইওভার সংলগ্ন জলাধার ভরাট করে পাঁচতারা হোটেল নির্মাণের কাজ শুরু করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্মাণকাজ স্থগিত করেন ডিএনসিসি মেয়র। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করে দিয়েছে ডিএনসিসি। জনদুর্ভোগ দূর করতে কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়া এলাকায় ওয়াসা থেকে পাওয়া ড্রেনেজ অংশ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করা হয়েছে।
যানজট নিরসন
যানজট নিরসনে প্রথম ধাপে গুলশানের পাঁচটি স্কুলে স্কুল বাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। মহাখালী বাস টার্মিনাল ভাটুলিয়ায় এবং গাবতলী আন্ত জেলা বাস টার্মিনাল সরিয়ে হেমায়েতপুর নেওয়া হবে। তেজগাঁও এলাকায় অবৈধ পার্কিং বন্ধে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকা বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের কাজ চলমান।
ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আনুমানিক ৫০টি ইলেকট্রিক বাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। অবশ্য চলতি বছরের মধ্যে নগর পরিবহনে ১০০টি ইলেকট্রিক বাস চালু করার উদ্যোগ থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
স্মার্ট হাট স্মার্ট বাংলাদেশ
২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ডিএনসিসি ডিজিটাল পশুর হাট চালু করেন মেয়র। গত বছরও ডিজিটাল পশুর হাট আয়োজন করে সংস্থাটি। এবারও ডিজিটাল পশুর হাটের আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে।
ই-ট্রেড লাইসেন্স সেবা
বর্তমানে ঘরে বসেই একজন গ্রাহক অনলাইনের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স পাবেন। কিউআর কোডভিত্তিক রিকশার লাইসেন্স, ক্যাশলেস মার্কেট ব্যবস্থা, ডিএনসিসি-১, খিলগাঁও তালতলা মার্কেটকে কিউআর কোডভিত্তিক ক্যাশলেস মার্কেট হিসেবে ঘোষণা করেছে ডিএনসিসি। টিকাদানের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ই-ট্র্যাকার জিআইএসের মাধ্যমে শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
সম্পর্কিত খবর

ঘরে ঘরে জ্বর, আতঙ্ক ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া নিয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ টানা তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ফার্মেসির ওষুধে জ্বর না কমায় তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফারুক জানান, প্রথমে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন, পরে তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানও জ্বরে ভুগতে শুরু করে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় ফারুক আহমেদের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাতাসে আর্দ্রতার ওঠানামার কারণে ভাইরাসজনিত জ্বর বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের চেম্বারে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
সোমবার ও মঙ্গলবার রাজধানীর ডিএনসিসি হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি শিশু এখন জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাল জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও রোটা ভাইরাসও বাড়ছে।
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ বি এম মাহফুজ হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এখন ভাইরাল জ্বরের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি চলছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মৌসুমও। বেশির ভাগ রোগী তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, শরীরে র্যাশ—এসব উপসর্গ নিয়ে আসছে। অনেকের ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষায় ধরা পড়ছে না।’
জ্বর কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি উপসর্গ বা সতর্কবার্তা। সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দিকাশির পাশাপাশি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া—এসব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। টিকা নেওয়া, টিউমার, ফোড়া, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের সংক্রমণ, পিরিয়ড বা মানসিক চাপ থেকেও জ্বর হতে পারে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকেই এসির নিচে চলে যায় বা ঠাণ্ডা পানি পান করে। এই গরম-ঠাণ্ডার তারতম্য থেকেই জ্বর-সর্দি হতে পারে। প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় টাইফয়েড ও পানিবাহিত রোগও বেড়েছে।’
ডা. লেলিন আরো বলেন, ‘এসব জ্বর সাধারণত প্যারাসিটামল খেলেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়ে না। তবে জ্বর যদি সপ্তাহখানেকের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’
সাধারণ জ্বর কিভাবে বুঝব?
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে কভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে কাশি, গন্ধ না পাওয়া, শ্বাসকষ্ট দেখা যেত। এখন অনেক কভিড রোগীও গায়ে ব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসছে। তাই পরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ডা. ফজলে রাব্বি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় গায়ে বেশি ব্যথা, বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা ও দ্রুত র্যাশ দেখা দেয়। সাধারণ ভাইরাল জ্বরে হালকা গায়ে ব্যথা ও সর্দিকাশি হয় এবং তা চার দিনের মধ্যে সেরে যায়। চার দিনের বেশি জ্বর থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের কয়েকজন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বারডেম হাসপাতালের পাশের ওই কার্যালয়ের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
সূত্র জানায়, হামলার শুরুতে তাঁরা প্রথমে ওই কার্যালয়ে তালা লাগান। পরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে ভাঙচুর করা হয়।
তবে রাতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর জানান, টাকা না পেয়ে আহতরা ক্ষুব্ধ হয়ে অফিসে তালা লাগিয়ে দেন।
ফাউন্ডেশনের একজন কর্মচারী খারাপ আচরণ করলে সেখানে ভাঙচুর করা হয় বলে আহতদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
ভাঙচুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক চেয়ার এলোমেলো পড়ে আছে। পানির ফিল্টার ও তিনটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে কাচের টুকরা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
গত বছর আন্দোলনে গিয়ে আহত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন জানিয়ে মামুন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার মাথার ভেতরে গুলি, ১১ মাস যাবৎ চিকিৎসাধীন। আমাদের জীবনের নিশ্চয়তা কী? তো কিসের জুলাই ফাউন্ডেশন?’
সাভার সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহত নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপের টাকার জন্য সাত মাস ধরে ঘুরছি। টাকা দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও বারবার ডেট দিয়ে আমাদের টাকা দিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল আকবর বলেন, ‘জুলাই আহতদের অনেকে এখনো মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন।
এই ফাউন্ডেশনে সাত কোটি টাকা আছে জানিয়ে কামাল আকবর বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে আহত ও শহীদ পরিবারগুলোকে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তা ছাড়া আহতদের তালিকা থেকে ৩৯ জন ভুয়া আহতকে বাদ দিতে এবং শহীদদের তালিকা থেকে চারজনের নাম বাদ দিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার
নির্বাচনের তারিখ আমি নিজেই জানি না
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এখনো জানেন না। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। পরে বিকেলে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি (আরএফডি) আয়োজিত ফল উৎসব ও সাংবাদিক অ্যাকসেস কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন।
এ ছাড়া সিইসি সাংবাদিকদের জানান, আগামী নির্বাচনে ভোটের প্রচারে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ভবনে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিসইউজ অব এআই আমাদের জন্যও হুমকি। এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে কানাডা।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রস্তুতি নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে আমরা ঠিকমতো ডেলিভার করতে পারব কি না সে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছেন তাঁরা। আমাদের প্রস্তুতির বিষয়টা বিস্তারিত জানিয়েছি। বিশেষ করে দেশজুড়ে ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করতে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। ভোটার সচেতনতা ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, এজেন্টদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কাজে কানাডা পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘কানাডা আমাদের সহায়তার জন্য প্রস্তুত এবং আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। তারা চায় যে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন যেন হয়। আমাদের ভোটার নিবন্ধনে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে, পার্বত্য এলাকায় ভোটার সচেতনতামূলক কাজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছি।’
নির্বাচন কবে বা ভোটের সম্ভাব্য সময়সীমা বিষয়ে কানাডার হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “উনি জানতে চেয়েছেন ভোটের স্পেসিফিক ডেট হয়েছে কি না। আমি বলেছি ‘নো’। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। সময়সীমা সম্পর্কে আপনারা যা জানেন, আমিও তাই জানি। যেদিন ভোট হবে, তার দুই মাস আগে আমি জানিয়ে দেব।”
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবজারভার হিসেবে কাজ করার জন্য জিজ্ঞেস করেছি। নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। ইইউকে বলা হয়েছে, আগেই যেন জানিয়ে রাখা হয়। তাদের ২৮টি দেশের অবজারভারকে সমন্বয় করে পাঠাতে হবে, এ জন্য আগেভাগে স্বাগত জানিয়েছি।’
পক্ষপাতদুষ্ট বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘গত তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁদের (অনুমোদন) দেব কেন? যেসব পর্যবেক্ষক গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন খুব সুন্দর হয়েছে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলেছেন, তাঁদের কি আমাদের নেওয়া উচিত? আমরা দেখে-শুনেই নেব। যাঁরা অভিজ্ঞ, ডিপেন্ডেবল, রিলায়েবল এবং বিভিন্ন দেশে নির্বাচন অবজার্ভ করেছেন, তাঁদের নেব। তিনটি নির্বাচনকে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তাঁদের কোনোমতেই নেওয়া হবে না।’
বিকেলে আরএফইডির অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ‘আমরা বারবার প্রমাণ করেছি; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পেরেছিলাম। এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলব, মানুষের শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারের এটিই সময়। ভাবমূর্তি রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন এসেছে।’
সিইসি বলেন, ‘ভোটের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে কমপক্ষে দুই মাস আগেই সব কিছু জানিয়ে দেওয়া হবে, কোন দিন ভোট, কোন দিন মনোনয়ন—এসবসহ।
গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে সিইসি বলেন, ‘আমরা আজকে যা কিছু করছি, তা আপনাদের মাধ্যমেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে আজকে আলাপের সময় দেখি উনি (কানাডার হাইকমিশনার) সব জানেন—ভোটার রেজিস্ট্রেশন, ইউএনডিপির সহযোগিতা, ক্যামেরা, ল্যাপটপ সব কিছু। তার মানে আমাদের সংবাদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের সময় একটু সচেতন থাকবেন। দেখেছি অনেক সময় ভেতরে পজিটিভ রিপোর্ট থাকলেও হেডলাইন বা স্ক্রলে নেগেটিভ বার্তা থাকে। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, মন খারাপ হয়। দয়া করে শিরোনাম, ক্যাপশন এমন দিন, যাতে মানুষ পজিটিভ বার্তা বুঝতে পারে।’
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বিভিন্ন ‘ওয়্যারনেস রেইজিং ক্যাম্পেইন’ চালু করবে। আমরা সাংবাদিকদের পার্টনার করে কাজ করতে চাই। সচেতনতামূলক প্রচারে আপনাদের যুক্ত করব। ২০১৮ সালের মতো অভিযোগ আর যেন না ওঠে। প্রশাসন, পুলিশ, প্রিজাইডিং অফিসার, সব কর্মকর্তাকে বলব, এটা ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের সময়।” আরএফইডির সভাপতি কাজী এমাদ উদ্দীনের (জেবেল) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

মিডিয়াকে হুমকি
ক্র্যাব, অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের উদ্বেগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের এক নেতা কর্তৃক মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) ও অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্স।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গণমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশে প্রেস কাউন্সিল ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত করা যাবে না।
অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত মত প্রকাশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হুমকি কিংবা ভয় দেখানোর চেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এর আগে গত সোমবার ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল এবং সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে মানানসই নয়। যেসব কারণে জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ।
বিবৃতিতে ক্র্যাব নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল রয়েছে। প্রচলিত আইনের বিধি অনুযায়ী আদালতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এই হুমকি দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের প্রতিবন্ধক বলে আমরা মনে করি।