<p>দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০০ মিটার রাস্তা হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) রাস্তার নির্মাণ কাজ দুই মাস আগে শেষ হয়েছে। হাসান মাহমুদ খোকা নামের এক ঠিকাদার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দরপত্রের কার্যাদেশ পান। ওই প্রকল্পের কাজ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও চূড়ান্ত বিল পাননি ওই ঠিকাদার। </p> <p>এরই মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত রাস্তার ইট তুলে সেই ইট ভেঙে খোয়া তৈরি করছেন এলজিইডির নিযুক্ত ঠিকাদার। একই রাস্তায় এবার নির্মাণ করা হবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাকা রাস্তা। তবে রাস্তার ইট তোলার ঘটনা উপজেলা প্রকৌশলী অবগত থাকলেও কোন ঠিকাদার এই কাজ পেয়েছেন, তা তিনি বলতে পারছেন না। </p> <p>স্থানীয়রা বলছেন, এটা দুর্নীতির নতুন কৌশল। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দুটি দপ্তর একই রাস্তায় তৈরি করতে মরিয়া। জনগণের টাকা এভাবেই অপচয় করছে সরকারি কর্মকর্তারা।  </p> <p>উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৫ টাকা ব্যয়ে পাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়িয়া আজিজুলে বাড়ি থেকে কমরেড কম্পরাম সিংহ কমপ্লেক্স চত্বর পর্যন্ত ৫০০ মিটার রাস্তা হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) দরপত্র আহ্বান এবং লটারিতে বিজয়ী ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদার হাসান মাহমুদ খোকা এক মাস হলো কাজ শেষ করে চূড়ান্ত বিল দাখিল করেছেন। তবে এখনো বিল পাননি তিনি। </p> <p>এরই মধ্যে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক ঠিকাদার ওই রাস্তার ইট তুলে রীতিমতো খোয়া বানাচ্ছিলেন তার লোকজন দিয়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা সাইদুর রহমান। ইউএনওকে অবগত করলে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন তিনি। </p> <p>সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের করা রাস্তার ইট তুলে রাস্তার পশ্চিম পাশে রেখেছেন এলজিইডির ঠিকাদার। প্রায় ২০০ মিটার রাস্তার ইট তোলা হয়েছে। মেশিন দিয়ে এসব ইট খোয়া তৈরির কাজ শেষের দিকে। রাস্তার ইট তুলে ফেলার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা। বালুর ওপর দিয়ে ভ্যান, ইজি বাইক, মোটসাইকেল, এমনকি বাইসাইকেল চালানো যাচ্ছে না। অনেকেই সাত কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তায় পাড়িয়া বাজার ও লাহিড়ী বাজারে যাচ্ছেন। এতে অতিরিক্ত সময় এবং ভাড়া দিতে হচ্ছে স্থানীয়দের। </p> <p>ইজি বাইক চালক আলম জানান, অনেক দিন পর ভাঙা রাস্তাটি ঠিক হয়েছিল। এক মাস ভালোভাবে গাড়ি চালিয়েছি। এখন আবার ইট তুলে নিয়েছে। বালুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলে না, পেছন থেকে ঠেলার জন্য একজন লোক দরকার হয়। বর্ষায় তো আসাও যাবে না এই রাস্তায়। </p> <p>বোরো ক্ষেতে পানি দিয়ে ভ্যানগাড়িতে মেশিন নিয়ে যাচ্ছিলেন হরিমোহন। তিনি বলেন, ‘ক্ষেত থেকে ভুট্টা ভ্যানে আনতে হচ্ছে সাত কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে। ভাড়া লাগছে দেড় গুণ। একবার রাস্তায় ইট দিচ্ছে, আরেকবার তুলে নিচ্ছে। কী যে শুরু হলো। যত ভোগান্তি আমাদের।’ </p> <p>উত্তরবঙ্গের তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতা কমরেড হেলকেতু সিংহের ছেলে বুধুরাম সিংহ জানান, অনিয়ম আর দুর্নীতির একটা সীমা আছে। সরকারের টাকা একই রাস্তায় দুটি দপ্তর অপচয়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এগুলো বন্ধ করা উচিত। </p> <p>বালিয়াডাঙ্গী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘কমরেড কম্পোরাম সিংহ স্মৃতি কমপ্লেক্স দেখতে আসা দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে আমরা রাস্তাটি হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করেছি। মাত্র কাজ শেষ হয়েছে, এখনো ঠিকাদারকে বিল দিতে পারিনি। এর মধ্যেই কাউকে কোনো বিষয়ে অবগত না করে এলজিইডির নিযুক্ত ঠিকাদার ইট তুলে খোয়া করেছেন। এলজিইডি কিভাবে এক মাসের মধ্যে একই রাস্তার কার্পেটিংসহ পাকাকরণের টেন্ডার করে, এটি মাথায় আসে না।’ </p> <p>জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী সফিউল আলম জানান, প্রায় তিন কোটি ব্যয়ে ওখানে রাস্তা পাকাকরণের একটি বড় কাজ শুরু হয়েছে। ত্রাণে এইচবিবিকরণের ইট তুলে ফেলার বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। তবে কোন ঠিকাদার করেছেন, কত মিটার রাস্তা নতুন করে পাকা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। </p> <p>বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফছানা কাওছার বলেন, না জানিয়ে ঠিকাদার ইট রাস্তা থেকে তুলে খোয়া বানিয়েছেন। এটি অনিয়ম। দুটি দপ্তরের অফিস তৃতীয় তলা এবং চতুর্থ তলায়। কাছাকাছি থাকার পরও এত সমন্বয়হীন কিভাবে হয়, জানতে চেয়ে দুই দপ্তরকেই ডাকা হয়েছে। একই সাথে বন্ধ রাখা হয়েছে এলজিইডির ওই রাস্তা নির্মাণের কাজ। </p> <p>ইউএনও আরো বলেন, ‘শুনেছি এর আগেও উপজেলাটিতে এমন কাজ করেছে এলজিইডি। মাসিক সমন্বয় সভায় এসব বিষয় তোলা হবে সমাধানের জন্য।’ </p> <p>উল্লেখ্য, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মাছ বাজার এলাকায় ২০১৯ সালে ৯৯ লাখ টাকা দিয়ে এক কিলোমিটার রাস্তা এইচবিবিকরণের কাজ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। পরে এক বছর পর সেই ইট তুলে চার লাখ টাকা বিক্রি করে ওই রাস্তা পাকাকরণের কাজ করে এলজিইডি। ওই সময় কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল আলম সুমন উপজেলা প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দিলেও করোনা এবং বিভিন্ন আলোর মুখ দেখেনি ইউএনওর সেই নোটিশ।</p>