<p>আসন্ন ঈদ যাত্রায় রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলা মিলিয়ে প্রায় কোটি মানুষ ঘরে ফিরবে আপনজনের কাছে। এই যাত্রায় সঙ্গী হিসেবে পছন্দের পরিবহনের তালিকায় শীর্ষে থাকে ট্রেন। সড়কের যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতেই মূলত ট্রেনের প্রতি যাত্রীদের এত আগ্রহ। কিন্তু এই সুফল পাবেন অল্পসংখ্যক যাত্রী।</p> <p>ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন ঢাকা (কমলাপুর) রেলস্টেশন থেকে আন্ত নগর, ঈদ বিশেষ, কমিউটার, মেইল ট্রেনসহ ৫৪ জোড়া ট্রেন ছেড়ে যাবে। আন্ত নগর, ঈদ বিশেষ ট্রেনে সব আসনে ঢাকা থেকে ৩৩ হাজার ৫০০ যাত্রীর জন্য আসনের টিকিট পাওয়া যাবে।</p> <p>এর বাইরে আসনের ২৫ শতাংশ যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করার জন্য স্ট্যান্ডিং টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। সব ট্রেন মিলিয়ে ৫০ হাজারের মতো মানুষ ট্রেনে স্বস্তির যাত্রার সুফল পাবেন। কিন্তু টিকিটের চাহিদার বিপরীতে স্বল্পতায় বেশির ভাগ টিকিটপ্রত্যাশী এবারও বঞ্চিত হবেন।</p> <p>এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সরদার সাহাদাত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, টিকিটের তুলনায় যাত্রীর চাহিদা অনেক বেশি। তাই সবাই টিকিট পাবেন না—এটা স্বাভাবিক। ট্রেনের ইঞ্জিন বগি ও চালকের সংকটের কারণে চাহিদা থাকলেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না।</p> <p><strong>কাল থেকে মিলবে অগ্রিম টিকিট</strong></p> <p>আগামীকাল রবিবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সব টিকিট শুধু অনলাইনে বিক্রি হবে। ঈদের অগ্রিম টিকিট কাউন্টারে পাওয়া যাবে না। ঈদ যাত্রার জন্য সংগ্রহ করা টিকিট ফেরতও দেওয়া যাবে না। </p> <p>কাল ২৪ মার্চ দেওয়া হবে ৩ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট, ২৫ মার্চ দেওয়া হবে ৪ এপ্রিলের টিকিট, ২৬ মার্চ দেওয়া হবে ৫ এপ্রিলের টিকিট, ২৭ মার্চ দেওয়া হবে ৬ এপ্রিলের টিকিট, ২৮ মার্চ দেওয়া হবে ৭ এপ্রিলের টিকিট, ২৯ এপ্রিল দেওয়া হবে ৮ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট, ৩০ এপ্রিল দেওয়া হবে ৯ এপ্রিলের টিকিট।</p> <p>এদিকে সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। সার্ভারের ওপর চাপ কমাতে রেলের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট আলাদা সময় বিক্রি করা হবে। পূর্বাঞ্চলের টিকিট সকালে এবং পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিকেলে বিক্রি হবে। কমলাপুর থেকে চাপ কমাতে দেশের উত্তরাঞ্চলের ট্রেন রাজধানীর বনানীর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়া হবে। জয়দেবপুর স্টেশন থেকেও বিশেষ ট্রেন চলবে।</p> <p>নাম প্রকাশ না করা শর্তে সহজ ডটকমের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। এবারও এই অভিযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু সার্ভার ডাউন যেন না হয় আমরা সে বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এবার দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ একসঙ্গে সার্ভারে টিকিটের জন্য  ঢুকতে পারবে।’ </p> <p><strong>কবে কোথায় চলছে বিশেষ ট্রেন</strong></p> <p>ঈদ যাত্রায় নিয়মিত চলাচলের বাইরে সারা দেশে ১৬টি বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর পথে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল নামের চারটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহ পথে ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চলবে। ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ পথে চলবে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল নামে দুটি ট্রেন। এসব ট্রেন ৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ও ঈদের পরের দিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলবে।</p> <p>এ ছাড়া ঈদের আগে ৮ ও ৯ এপ্রিল এবং ঈদের পরদিন থেকে তিন দিন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পথে দুটি বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। আর শুধু ঈদের দিন ভৈরব বাজার থেকে কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল নামে দুটি করে চারটি ট্রেন চলবে।</p> <p>আর ঈদের আগে ৭ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিন এবং ঈদের পর দ্বিতীয় দিন থেকে তিন দিন পর্যন্ত জয়দেবপুর থেকে পার্বতীপুর পথে দুটি বিশেষ ট্রেন চালাবে রেলওয়ে।</p> <p><strong>উত্তরের ২ ট্রেন ক্যান্টনমেন্ট থেকে</strong></p> <p>কমলাপুরের ওপর চাপ কমাতে দেশের উত্তরাঞ্চলের দুটি ট্রেন ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়বে। আগামী ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। ট্রেন দুটি হলো— নীলসাগর ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস। এর বাইরে উত্তরাঞ্চলের বাকি ট্রেনগুলো কমলাপুর থেকেই ছেড়ে যাবে।</p> <p>এতে করে যাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হতে পারে—এমন প্রসঙ্গে রেলওয়ের পরিচালন বিভাগের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, যাত্রীদের সুবিধার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর সব ট্রেন তো সরানো হয়নি, মাত্র দুটি ট্রেন কমলাপুরের পরিবর্তে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছাড়বে।</p> <p><strong>যাত্রা পথে নিরাপত্তা </strong></p> <p>ঈদের ট্রেন যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। এতে করে ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা কমে আসবে। তবে যাঁরা ভ্রমণের সুযোগ পাবেন তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রা করতে পারবেন। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।</p> <p>ঢাকা ছাড়ার বড় দুই রেলওয়ে স্টেশন কমলাপুর ও বিমানবন্দরে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্টেশনে প্ল্যাটফরমের বাইরে থেকেই লাইন তৈরি করে ‘এক্সেস কন্ট্রোল’ করা হবে। বিমানবন্দর ও টঙ্গী স্টেশন কমলাপুরের তুলনায় উন্মুক্ত হওয়ায় সেখানে নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হবে।</p> <p>জানতে চাইলে পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ট্রেনের প্রতি মানুষের ব্যাপক আগ্রহ আছে। তাই চাহিদাও বেশি। কিন্তু ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতার সক্ষমতা বাড়ছে না। রেলে লাখো কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে। বড় বড় অবকাঠামো হচ্ছে। এসব সুফল তখনই মিলবে যদি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়ে। সেটা না হলে প্রকৃত লাভ কোথায়।</p>