<p>তৈরি পোশাক শিল্পে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরসনে সরকার, স্থানীয় সরকার, মালিকপক্ষ ও ট্রেড ইউনিয়নকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন জাতীয় সংলাপে বক্তারা। তারা শ্রমিকদের সামাজিক ও পরিবেশগত মানদণ্ড তৈরি করতে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।</p> <p>আজ বুধবার (৬ মার্চ) পোশাক শ্রমিকদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিষয়সমূহের প্রভাব নিরূপণ এবং ট্রেড ইউনিয়নের করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস এর উদ্যোগে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন ও জাতীয় সংলাপ গবেষণা ও জাতীয় সংলাপের মূল উদ্দেশ্য ছিল তৈরি পোশাক শিল্পে সবুজ সামাজিক সংলাপ উন্নয়নে ট্রেড ইউনিয়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি।</p> <p>বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দির আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের। বিলস উপ-পরিচালক ও প্রধান গবেষক মনিরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য পাওয়ার-পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন। </p> <p>অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মো. রাজা মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাজমুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মির্জা আসাদুল কিবরীয়া, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক ডা. বিশ্বজিত রায়, জি আই জেড স্টাইল প্রকল্পের কমিশন ম্যানেজার ড. মাইকেল ক্লদে, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থ বিশেষজ্ঞ মো. জাকির হোসেন খান প্রমুখ।</p> <p>টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকার ১৬০টি তৈরি পোশাক কারখানার ৪০২ জন শ্রমিকের ওপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। সরকার, মালিকপক্ষ, ট্রেড ইউনিয়ন ও তৈরি পোশাক শ্রমিকরা এ গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন।</p> <p>গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, শতকরা ৯৯ ভাগ পোশাক শ্রমিক দেশের দূরবর্তী এলাকা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছেন। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শতকরা ৩৬ শতাংশ স্থানান্তরিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ফসল উৎপাদন না হওয়া, কীটপতঙ্গের আক্রমণ বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস ইত্যাদি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া শতকরা ৭ ভাগ নদী ভাঙ্গণের কারণে স্থানান্তরিত হয়েছেন বলে জানা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যায়, শতকরা ৫০ ভাগ পোশাক শ্রমিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভুগছেন, যার ফলে ছুটি/অনুপস্থিতি বেড়েছে শতকরা ২৩ ভাগের ক্ষেত্রে, দক্ষতা কমেছে শতকরা ৮ ভাগের, উৎপাদন কমেছে শতকরা ৬ ভাগের, আয় হ্রাস ও চাকরির নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে শতকরা ১৩ শতাংশ ভাগের ক্ষেত্রে। রোগে ভোগার সংখ্যা শতকরা ১০০ ভাগের, গরমে দুর্ভোগ বেড়েছে শতকরা ৬৫ ভাগের, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতায় নাকাল শতকরা ৪২ ভাগ এবং ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় দুর্ভোগের শিকার শতকরা ২০ ভাগ।</p> <p>পরিবেশ দূষণের অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যায়, পোশাক শ্রমিকদের মতে পানি দূষণ প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে, বায়ু দূষণ বেড়েছে প্রায় শতকরা ৬৪ ভাগ । এর ফলে তাদের শতকরা ২১ ভাগের মাথাব্যথা, শতকরা ১৪ ভাগের মাথা ঘোরা, শতকরা ২০ ভাগের ক্লান্তি এবং শতকরা ২৫ ভাগের শ্বাসকষ্ট বেড়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা শতকরা ৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রান্নায় গ্যাসের ব্যবহার প্রায় শতকরা ৩৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।</p> <p>জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরের পরিবেশ সম্পর্কে শতকরা ৬০ ভাগ শ্রমিকের মতে কারখানার ভেতরে তাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। শতকরা ৯৪ ভাগের মতে তাপ এবং গরমকাল বছরে ৫/৬ মাসেরও বেশি চলতে থাকে। এ ছাড়া তাপ ও গরমকালের বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা, নতুন রোগ, ছুটি/অনুপস্থিতি, কম উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থানের নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা, এবং আয় হ্রাসের বিষয়টি শ্রমিকরা উল্লেখ করছেন। শতকরা ৬০ ভাগ শ্রমিক কারখানায় পানি দূষণ, শতকরা ৪১ ভাগ বায়ু দূষণ এবং শতকরা প্রায় ৪৩ ভাগ শব্দ দূষণের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। শতকরা ৬৫ ভাগ শ্রমিক উল্লেখ করেছেন, কারখানার তরল আবর্জনা লোকাল ড্রেনে ফেলা হয়, শতকরা ৮ ভাগ বলেছেন, ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে ফেলা হয় এবং শতকরা ৮ ভাগ বলেছেন, নদী-নালা-পুকুরে ফেলা হয়।</p> <p>শতকরা ৫৫ ভাগ শ্রমিক উল্লেখ করেছেন তাদের আবাসিক এলাকায় পরিবেশগত সমস্যাগুলো অমীমাংসিত থাকে, শতকরা ২২ ভাগের মতে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সমস্যার সমাধান হয়, ১০ ভাগ বলেন, সমস্যার সমাধান হয় কমিউনিটি পর্যায়ে। শতকরা ৫৪ ভাগ শ্রমিকের মতে পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় ট্রেড ইউনিয়নের নীতিগত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে।</p> <p>স্কপ যুগ্ম সমন্বয়কারী নইমুল আহসান জুয়েল, আইবিসি সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, বিলস নির্বাহী পরিষদ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন, বিজিএমইএ, এবং বিইএফ এর প্রতিনিধি, জাতীয় পর্যায়ের ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ, আইনজীবি, সাংবাদিকসহ পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।</p>