<p>দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি চলছে। ক্রমে ব্যয় বাড়ছে। ভোক্তার চাহিদাও কমে গেছে। এসব মিলিয়ে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে সূক্ষ্ম অবনতি হয়েছে। </p> <p>গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান ‘লাইটক্যাসল পার্টনার্স’-এর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ‘দি লাইটক্যাসল বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স ২০২২-২৩ (বিসিআই)’ শিরোনামে প্রতিবেদনটির পঞ্চম সংস্করণ প্রকাশ করে।</p> <p>২৫টির বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সাক্ষাত্কারভিত্তিক এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান ব্যাবসায়িক পরিবেশ, বিশ্ববাজার পরিস্থিতি, সম্ভাবনাময় ব্যবসা ও শিল্প খাত, দেশে আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় ব্যবসার গতি-প্রকৃতি, অর্থনীতির অবস্থার গভীর পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে প্রশ্ন ও উত্তরের ভিত্তিতে এই ফলাফল উঠে আসে বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি।</p> <p>প্রতিষ্ঠানটির জরিপে উল্লেখ করা হয়, বিসিআই ২০২৩ কিছুটা ইতিবাচক থাকলেও তা আগের বছরের তুলনায় কম, যা সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে সূক্ষ্ম অবনতির আভাস দেয়। এর কারণ লক্ষ্য অনুযায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি, ব্যয় বাড়া ও ভোক্তার চাহিদা কমে যাওয়া। </p> <p>আশার খবর হচ্ছে, এই সময়ে পোশাকশিল্পে রপ্তানি আয় আগের চেয়ে বেড়েছে। একই সঙ্গে বহুজাতিক কম্পানির তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তুলনামূলক ভালো করেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যুদ্ধে বিশ্ববাজারে বৃহত্তর সংস্থাগুলোর ব্যাবসায়িক কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশে অস্বাভাবিকভাবে শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বেড়েছে, এতে উত্পাদন খরচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ কারণে জিনিসপত্রের দামও মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়ছে। বাড়ছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। ফলে অতি ব্যয় বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ জীবনযাপনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৫০ শতাংশ, ২০২৩ সালের মার্চে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.০৯ শতাংশ। একই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি ৮.৯১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ৯.৩৩ শতাংশে পৌঁছায়। </p> <p>খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০২২-এর সূত্র উল্লেখ করে বলা হয়, প্রতি পরিবারে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে খাবারের খরচ বৃদ্ধি এবং পরিবারের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেসরকারি খাতে যে প্রভাব পড়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো : চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যাবসায়িক আস্থা বাড়ানো, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রচারের কৌশল গ্রহণ করা, মুদ্রাস্ফীতি কমানো, শিল্পে কাঁচামালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ইত্যাদি।</p> <p>দেশের খ্যাতনামা বহুজাতিক কম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, করপোরেশন, স্থানীয়ভিত্তিক ব্যাবসায়িক সংগঠন, স্টার্টআপ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ (এসএমই) প্রতিনিধিত্বকারী ১৬৭টি ব্যাবসায়িক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাক্ষাত্কার নেওয়ার মাধ্যমে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।</p> <p>প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, এই রিপোর্টে অর্থনীতির এমন কিছু সূচক উঠে এসেছে, যা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যত্ পরিস্থিতি উপস্থাপন করেছে। দেশের নীতিনির্ধারক, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা এই জরিপ থেকে তথ্য নিয়ে আগামী দিনে কাজে লাগাতে পারবেন।</p>