<article> <p style="text-align: justify;">লেখকরা যখন সাময়িকভাবে আর কিছুই লিখতে পারেন না, মাথায় আসে না নতুন ভাব, সেই পরিস্থিতিকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘রাইটার্স ব্লক’। একজন লেখকের সৃষ্টিশীল লেখনী অচল হয়ে যাওয়া তাঁর জন্য খুবই পীড়াদায়ক। সে অভিজ্ঞতার কথা তাঁরা অনেক সময় ঘনিষ্ঠজনদের জানান। বিখ্যাত লেখক ফ্রাঞ্জ কাফকার রাইটার্স ব্লকের সঙ্গে তাঁর নিজের সংগ্রামের কথা লিখেছেন এমন একটি বিরল চিঠি নিলামের জন্য উঠছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">লন্ডনে নিলামটি চলবে ২৬ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত।</p> <p style="text-align: justify;">বর্তমান চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগে জন্মগ্রহণকারী কাফকা সবচেয়ে বিখ্যাত তাঁর ১৯১৫ সালের নাতিদীর্ঘ উপন্যাস ‘দ্য মেটামরফোসিস’-এর জন্য। স্বল্পায়ু জীবনজুড়েই উদ্বেগ, হতাশা আর বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন কাফকা। এ বিষয়গুলোই তাঁর সাহিত্যকর্মকে রূপ দিয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কাফকার লেখা এক পৃষ্ঠার চিঠিটি লন্ডনের সাদাবিজ নিলাম হাউসে বিক্রি হবে। নিলামে এর দাম ৭০ হাজার থেকে ৯০ হাজার পাউন্ডের মধ্যে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। জার্মান ভাষার চিঠিটি লেখা হয়েছিল ১৯২০ সালের বসন্তে। সে হিসাবে এটা কাফকার যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা চলার সময় লেখা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">তখন থেকে বছর তিনেক আগে রোগটি ধরা পড়েছিল। এই অসুস্থতার সময় তিনি বীমা কম্পানির চাকরি থেকে মাঝেমধ্যে ছুটি নিয়ে স্বাস্থ্যনিবাসে কাটাতেন। ১৯২২ সালে অবসর নেওয়ার দুই বছর পরই অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার কাছে একটি ক্লিনিকে মারা যান কাফকা।</p> <p style="text-align: justify;">নিলামে উঠতে যাওয়া চিঠিতে কাফকা তাঁর বন্ধু অস্ট্রিয়ান কবি অ্যালবার্ট এহরেনস্টাইনকে আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘আমি তিন বছর ধরে কিছুই লিখিনি। এখন যা প্রকাশিত হচ্ছে তা আগের লেখা।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">আর নতুন কোনো কাজ নেই। এমনকি কিছু লেখা শুরুও করতে পারছি না।’</p> <p style="text-align: justify;">লেখালেখিতে এই খরা দেখা দেওয়ার কারণ বলতে গিয়ে কাফকা চিঠিতে লিখেছেন—‘উদ্বেগগুলো অন্তর্গত অস্তিত্বের একটি নির্দিষ্ট স্তরে প্রবেশ করলে স্বাভাবিকভাবেই লেখালেখি এবং অভিযোগ করা বন্ধ হয়ে যায়। সত্যি বলতে, আমার লড়াইয়েও খুব জোর ছিল না।’</p> <p style="text-align: justify;">বন্ধু এহরেনস্টাইন তাঁর পত্রিকার জন্য লিখতে বলায় জবাবে ওই কথা লিখেছিলেন কাফকা।</p> <p style="text-align: justify;">সাদাবিজ নিলাম হাউসের বই ও পাণ্ডুলিপি বিশেষজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল হিটন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘লেখালেখি কাফকার ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করেছিল এ চিঠিটি তারই প্রমাণ। নিরাপত্তাহীনতা আর নিজের লেখার সারবত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লড়ছিলেন তিনি। তাই প্রয়োজন হয়েছিল ব্যাপক অন্তর্গত শক্তির স্ফুরণ। কাফকা যে রাইটার্স ব্লক সত্ত্বেও কলম চালিয়ে গেছেন সে জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।’</p> <p style="text-align: justify;">চিঠিটি লেখার সময়ই কাফকার সঙ্গে চেক সাংবাদিক ও লেখক মিলেনা এসেনস্কার গভীর প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। স্বাস্থ্যের ক্রমাগত অবনতি হতে থাকলেও এসেনস্কার অনুপ্রেরণা কাফকাকে নতুন করে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ‘এ হাঙ্গার আর্টিস্ট’ এবং ‘দ্য ক্যাসেল’সহ তাঁর শেষ সাহিত্যকর্মগুলো শুরু করতে সক্ষম হন কাফকা। তাঁর মূল সাহিত্যিক খ্যাতি এসেছে মৃত্যুর পরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান সাহিত্যের ওপর তাঁর সৃষ্টিকর্ম গভীর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। ১৯৬০-এর দশক নাগাদ এ প্রভাব ছড়িয়ে যায় বিশ্বব্যাপী।</p> <p style="text-align: justify;">সূত্র : সিএনএন</p> </article>