<p style="text-align: justify;">মাসটা কার্তিক হলেও ভোরের কুয়াশা এখনো নামেনি। সকালে উজ্জ্বল রোদে চারদিক ঝকঝক করছে। হালকা হিমেল হাওয়া বইছে। ফরিদপুরের নগরকান্দায় এক রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ চোখ আটকে গেল পথের পাশে ডোবার ধারের এক ঝোপে।</p> <p style="text-align: justify;">উজ্জ্বল সবুজ পাতার ঘন ঝোপের মাথায় হলদে রঙের লাঠির মতো ফুলের বিজয়ধ্বজা দুলছে। খাড়া হয়ে যেন ফুলগুলো আকাশ ছুঁতে চাইছে। গাছটাকে চিনতে কষ্ট হলো না। গত বছরও এই গাছের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তখন গাছে এত ফুল ছিল না।</p> <p style="text-align: justify;">তাই রাস্তার ঢাল দিয়ে নেমে ঝোপটার কাছে গিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম।<br /> গাছটার নাম দাদমর্দন। এই গাছটা নিয়ে কখনো কিছু লিখিনি। কার্যত আগাছা হলেও এর কিছু ঔষধি গুণ আছে।</p> <p style="text-align: justify;">দাদমর্দনের ইংরেজি নাম ক্যান্ডেল বুশ, নামটা সার্থক। মোমবাতির মতো লম্বা ফুলের মঞ্জরি, মাঝখানে একটা সরু ডাঁটিকে ঘিরে উজ্জ্বল হলুদ রঙের অনেক ফুল ফোটে গাদাগাদি করে। প্রায় ১৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা পুষ্পমঞ্জরিগুলো থাকে একেবারে গাছের চূড়ায়। অনেক পুষ্পমঞ্জরি একটা গাছের মাথায় থাকে, আকাশের দিকে খাড়া মুখ করে।<br /> পাশাপাশি অনেক গাছের ঝোপে এই ফুলগুলোকে দেখলাম, উজ্জ্বল রোদ পেয়ে হলদে ফুলগুলো যেন সেই বুনো ঝোপকে আলোকিত করে ফেলেছে।</p> <p style="text-align: justify;">পুষ্পমঞ্জরির মাথার দিকে না ফোটা ফুলগুলোর রং গাঢ় হলুদ বা কমলা হলুদ। একটা বুনো ফুলেরও এমন রূপ হয়!<br /> সচরাচর ফুল বলতে আমরা যেমন দেখি, দাদমর্দনের ফুলগুলো সে রকমের না। ফলও তেমনি। একটু লক্ষ করতেই কয়েকটা ডালে ফুল ফোটা প্রায় শেষ হওয়া মঞ্জরিদণ্ডের চারদিকে লম্বা সরু কামরাঙার মতো খাঁজকাটা কয়েকটা ফলও চোখে পড়ল। কাঁচা ফল সবুজ হলেও পাকলে হয়ে যায় বাদামি। একটি ফলের ভেতরে প্রায় ৫০টা বীজ থাকে। বীজ থেকেই চারা হয়। ফল ফেটে বীজগুলো পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। পানিতে বীজ ভেসে ভেসে অন্য জায়গায় চলে যায় ও সেখানে থিতু হয়ে নতুন আবাসস্থল তৈরি করে। একবার কোনো জায়গায় জন্মালে সেখান থেকে এদের উচ্ছেদ বা নির্মূল করা কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন এদের নির্মূল করতে পারছে না নিউগিনি দ্বীপের লোকেরা। সেখানে দাদমর্দন এক আগ্রাসী আগাছা ও সমস্যা।</p> <p style="text-align: justify;">দাদমর্দনগাছের পাতা বেশ বড়। সকালের উজ্জ্বল আলো পেয়ে পাতাগুলোর ঘুম ভাঙে ও পত্রদণ্ডের দুই পাশে নিজেদের মেলে ধরে। কিন্তু সাঁঝ হতেই আবার পাতাগুলো ভাঁজ হয়ে ঘুমাতে যায়। ফুল ফোটা শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাস থেকে, শেষ হয় জানুয়ারিতে। গাছ গুল্ম প্রকৃতির, নরম কাষ্ঠল ডালপালা, এক থেকে তিন মিটার লম্বা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">ইংরেজি নামের সার্থকতা খুঁজে পেলেও বাংলা নাম দাদমর্দন কেন হলো? গাছটার কোনো অংশ কি দাদের ওপর মর্দন করা হয়! তথ্যের জন্য দ্বারস্থ হলাম বনৌষধি বইয়ের। সেখানে চর্মরোগ দাদের চিকিৎসায় এর ব্যবহারের কথাই পেলাম। জানা গেল, দাদকে মারতে পারে বলে এর আয়ুর্বেদিক নাম দাদমারি। এই গাছে ক্রাইসোফেনিক এসিড থাকায় চর্মরোগ নিরাময়ে, বিশেষ করে দাদ ও পাঁচড়া রোগ সারাতে তা উপকারী। এই গাছের ব্যাকটেরিয়ানাশক গুণ আছে। কেউ কেউ দাদমর্দনগাছ ফুলের গাছ হিসেবে বাগানে লাগান।</p> <p style="text-align: justify;">সিসালপিনিয়েসি গোত্রের এই গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Senna alata, আদিনিবাস সুদূর মেক্সিকো। আগে গ্রামের ডোবার ধারে, রাস্তার ঢালে ও নিচু জলাজমিতে এসব গাছ অনেক দেখা যেত, দিন দিন কমে যাচ্ছে। সারা দেশেই দাদমর্দন গাছ দেখা যায়, তবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ও মধ্যাঞ্চলে বেশি চোখে পড়ে। ঢাকায় মিরপুরে বোটানিক্যাল গার্ডেনে আছে দাদমর্দন গাছ।</p>