<p>‘বড় সংকটে পড়িয়া দয়াল, বারে বার ডাকি তোমায়; ক্ষম, ক্ষম অপরাধ’। </p> <p>লালন কি জানতেন, এ রকম ভয়ংকর, শ্বাসরুদ্ধকর একটা সময় আমাদের জীবনে আসবে! পৃথিবী নামক গ্রহটি মহাসংকটে হাবুডুবু খাবে! মহামানবেরা হয়তো ভবিষ্যত দেখতে পান। সে কারণেই হয়তো লালন ফকিরের কলমে বা কণ্ঠে উঠে এসেছিল এ রকম গান। তার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়, প্রকৃতি মানবজাতিকে ক্ষমা করো। মানবজাতি আর সহ্য করতে পারছে না। </p> <p>অজানা আতঙ্কে মহাবিশ্বের সাতশত কোটি মানুষের ঘুম হারাম। এই বুঝি ‘মৃত্যুদূত’ আমাদের ওপর আঘাত হানলো! প্রকৃতির কী খেয়াল কে জানে! তার ওপর জুলুমবাজি! কোনোভাবেই সে মেনে নেয় না। প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। প্রতিশোধ তাকে নিতে হয়। তা না হলে মানুষ ভুলে যায় তার সৃষ্টিকর্তাকে। ভুলে গিয়ে অন্যায় অন্যায়-অপকর্পে লিপ্ত হয়। তাদের নিষ্ঠুরতার মাত্রা বেড়ে যায়। </p> <p>আমরা দেখে আসছি, দেশে দেশে, ধর্মে ধর্মে হানাহানি, রক্তপাত দিন দিনই বাড়ছে। দুর্নীতি, অনিয়ম, অপকর্ম চলছে লাগামহীনভাবে। বেড়ে চলেছে নারী ধর্ষণ, শিশু ও নারী নির্যাতন, মানুষ হয়ে মানুষের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ। এসব যেন প্রকৃতিও সহ্য করতে পারছে না। বিশ্বব্যাপী প্রকৃতির ওপর যে নির্মমতা চলেছে,  তাও কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তারই প্রতিশোধ নিতে হয়তো নভেল করোনাভাইরাস এসেছে। </p> <p>ভাইরাসটি কি মানবসৃষ্ট নাকি প্রকৃতির? এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক চলছে। কেউ বলছেন, চীনের ল্যাবরেটরিতে ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছে। উহান ছিল তাদের ‘টেস্ট কেইস’। এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন। চীন বলেছে, করোনার কোথা থেকে বিস্তার ঘটেছে তার কি কোনো নিশ্চিত তথ্য আছে? </p> <p>অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দেশ আমেরিকা এখনো বের করতে পারেনি আসলে ভাইরাসের স্রষ্টা কে? তাই আমরা বলতে পারি, প্রকৃতিই মানবজাতিকে ‘শায়েস্তা’ করার জন্য ভাইরাস ছেড়েছে। আর মানবজাতি সেই অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। </p> <p>কী উন্নত কী উন্নয়নশীল, কোনো দেশই ভাইরাসটির কবল থেকে মুক্তি পায়নি। সবাইকে একেবারে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে। কতদিন এর রেশ থাকে, কত বছরে এর রেষ কাটবে তা এখনো কেউ বলতে পারছেন না। তবে এটা সবাই বুঝতে পারছেন, বিশ্বের অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ আঘাত আসবে। বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ ঘরছাড়া হবে এবং চাকরি হারাবে। কয়েক কোটি মানুষ দরিদ্র হবে। তারপর কি হবে? প্রকৃতি কি আমাদেরকে নতুন একটা পৃথিবী উপহার দেবে?</p> <p>আজ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন; পহেলা বৈশাখ। সব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সর্বজনীন উৎসব। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী স্বতঃস্ফুর্ত উৎসব আজ করোনার তাণ্ডবের কারণে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। উৎসবে মাতবে না কোনো বঙ্গসন্তান। অথচ এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, পোশাক শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। তাদের মাথায় হাত! কে ভেবেছে কালবোশেখীর চেয়েও বড় তাণ্ডব নেমে আসবে আমাদের জীবনে!</p> <p>কেউ ধৈর্য হারাবেন না। ধৈর্যের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। নিশ্চয়ই আগামী বছর আরো ভালোভাবে, নতুন পরিবেশে আমরা বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন করব। প্রকৃতি নিশ্চয়ই বড় শাস্তির পর বড় পুরস্কার আমাদের দেবে। নতুন আশা, নতুন প্রতাশ্যায় আমরা বুক বাঁধি। </p> <p>আমরা আশা করি, মানবজাতি উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেবে এবং অন্যায় অনিয়ম, ব্যাভিচার, অত্যাচার ও নিষ্ঠুরতার পথ পরিহার করে আলোর পথে আসবে। করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পর আমরা যে পৃথিবী পাবো সেখানে ‘প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’-এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হবে। আমরা বিশ্বাস করি, নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য কল্যাণ অনিবার্য। </p> <p><strong>লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কালের কণ্ঠ ও সাহিত্যিক</strong></p>
