<p>চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস ঘিরে ক্রমেই ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। করোনা ভাইরাসের থাবায় লাফিয়ে লাফিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে চীনে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, সোমবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮১। আক্রান্তের সংখ্যাটাও বাড়ছে হু হু করে। এই সংখ্যাটা প্রায় দুহাজার।</p> <p>ইতিমধ্যেই এই ভাইরাস চীনের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, মালয়েশিয়ায়। সংক্রমণ ছড়িয়েছে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাতেও। যে গতিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে চীনে, তা সামাল দিতে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে চীনা সরকারকে।</p> <p>কতটা ভয়ঙ্কর এই করোনা ভাইরাস, জেনে নিন এ ভাইরাস সম্পর্কে কিছু তথ্য-</p> <p>চীনের উহান শহর থেকেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। সেখানে চলছে কড়া নজরদারি। সকল বহির্গামী উড়ান, ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বিশেষ কারণ না থাকলে কাউকে শহর ছাড়তে মানা করা হয়েছে।</p> <p>উহানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সেই সংখ্যাটা ৪,০০০ হতে পারে। চীনা সরকারি হিসেব যা বলছে বাস্তবে তার দশ গুণ। চীনের ‘ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন’-এর বিজ্ঞানীরা তেমনটাই মনে করছেন।</p> <p>থাইল্যান্ডে এই অসুখে চারজন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রে একজন করে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের প্রত্যেকেই হয় উহানের বাসিন্দা অথবা সম্প্রতি সেখানে গিয়েছিলেন।</p> <p>উহান থেকে আসা যাত্রীদের ‘স্ক্রিনিং’ বা পরীক্ষা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশে। রাশিয়াও পরিচ্ছন্নতা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নজর দিয়েছে।</p> <p>বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করছে, সপ্তাহব্যাপী চীনের চান্দ্র নববর্ষ উদযাপনের সময় বিপুল সংখ্যক মানুষের চীনে আসা বা চীন থেকে বাইরে যাওয়ার কারণে এই অসুখ আরও দ্রুত ছড়াতে পারে।</p> <p>করোনা ভাইরাসটির নাম 2019-nCoV। সার্স ভাইরাসের মতোই ক্ষমতা এই ভাইরাসের। প্রসঙ্গত, ২০০২-০৩ সালে সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে ৩৪৯ জন ও হংকংয়ের ২৯৯ জন মারা যান। সারা বিশ্বের সব মিলিয়ে ৮০০ জন মারা গিয়েছিলো সার্স ভাইরাসের আক্রমণে।</p> <p>ভাইরাসটিকে পরীক্ষা করে মনে করা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের উৎস হতে পারে বাদুড় ও সাপ। বেইজিংয়ের ‘চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ এমনই মনে করছে।</p> <p>যদিও করোনা মহামারীর নেপথ্যে সাপই দায়ী কি-না, নতুন করে সেই প্রশ্ন তুলেছেন একদল গবেষক।</p> <p>এদেরই একজন ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট ডেভিড রবার্টসন। তার দাবি, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিই যে নতুন এই করোনা ভাইরাসের বাহক, তার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু সাপ এই ভাইরাসের বাহক, এমন প্রমাণ মেলেনি। ফলে সাপের থেকে মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, একথা বলার মতো কোনও প্রমাণ নেই। যে কারণে এই পরিস্থিতির জন্য সাপকে দায়ী করা যায় না।</p> <p>বিখ্যাত জার্নাল‘ন্যাচার’কে এমনটি জানিয়েছেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। তবে কোন প্রাণী থেকে নতুন প্রজাতির করোনা মানুষের মধ্যে ছড়াল, তা এখনও অজানাই বলে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।</p> <p>রবার্টসনের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত ইউনিভার্সিটি অব সাও পাওলো’র ভাইরোলজিস্ট এডুয়েরডো ব্র্যানডাও। তার মতে, একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখির মাধ্যমেই নতুন এই করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে। তারাই এর বাহক। ফলে সাপকে এই মহামারীর জন্য দায়ী করা যায় না।</p> <p>বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী করোনাভাইরাস জুনোটিক। অর্থাৎ এই ভাইরাস পশুর দেহ থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সিফুড এবং বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে অজ্ঞাত কোনও প্রাণীর থেকে সেটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।</p> <p>সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, চীনসহ বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মূল উৎসই হচ্ছে বিষধর চীনা সাপ ক্রেইট এবং কোবরা সাপ।</p> <p>আক্রান্তদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ফুলে যাওয়া কিংবা সর্দির মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে সার্স আক্রান্তদের মতোই।</p> <p>বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই অসুখের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের নির্দেশিকা সকল হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। </p> <p>সূত্র: এফপি, রয়টার্স ও পিটিআই</p>