<p>তথ্য-প্রযুক্তিতে কর অব্যাহতি তুলে দিলে এই খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হয়ে যাবে। কম্পানিগুলো মুনাফা না করতে পারলে কর্মীদের ছাঁটাই করে দেবে। এতে কর্মসংস্থান হারাতে পারে অনেকেই, যা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত করতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। অন্যদিকে, কর অব্যাহতির কারণে আইসিটি খাত থেকে সরকার এক হাজার ৪৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে তথ্য দিয়েছে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কর অব্যাহতির কারণে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাত ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার সুবিধা পাচ্ছে। তবে আরো পাঁচ বছর পর ৫ শতাংশ হারে করপোরেট ট্যাক্স বসানো যেতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p> <p style="text-align:center"><img alt="তথ্য-প্রযুক্তি" height="151" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/04.April/25-04-2024/Slp/kalerkantho-OA-1A.jpg" width="600" /></p> <p>গতকাল বুধবার রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউতে অবস্থিত ডেইলি স্টার ভবনে ‘লোকাল টেক স্টার্টআপস’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ইডিটেক ও আইআইডি।</p> <p>অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বিডি জবসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘এনবিআর বলেছে, আইটি ও সফটওয়্যার কম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকার প্রতিবছর এক হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। তার মানে দেখা যাচ্ছে, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লাভ করছে। এটা যদি সঠিক হতো, তাহলে আমরা দুবাই বা অন্য কোনো জায়গায় ভালো একটা সময় কাটাতে পারতাম। এখানে বসে সময় নষ্ট করা লাগত না। আমরা ব্যবসায় কিন্তু এত টাকা লাভ দেখি না। এখানে মিসম্যাচ হচ্ছে। সরকার ও এনবিআর মনে করছে আমরা লাভ করছি, কিন্তু দিচ্ছি না। অথবা আমরা অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছি। এটা মূল সমস্যা। আমাদের হিসাবে সরকার ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে না। বেশির ভাগ আইটি কম্পানির লাভ বা মুনাফা খুব বেশি না। আমাদের হিসাবে ৫ থেকে ১০ শতাংশ।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আইটি খাত থেকে যদি কর সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে। আর স্থানীয় উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারাবেন।’ স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্নেহাশীষ বড়ুয়া (এফসিএ) বলেন, ‘আমাদের সরকার ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশের কনসেপ্ট নিয়ে এগোচ্ছে। এই স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি পিলার ডিজিটাইজেশনকে কেন্দ্র করে। এই মুহূর্তে যদি পলিসি সাপোর্ট আমরা তুলে নিই তাহলে সরকারের ভিশন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। একই সঙ্গে আইটি খাতে ধীরগতি নেমে আসতে পারে। অন্যদিকে ২০২৫ সালের মধ্যে আইটি খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটাও বাধাগ্রস্ত হবে। এতে যে কম্পানিগুলো আছে তারা যখন ট্যাক্স দেওয়ার জন্য, কমপ্লায়েন্স হতে চাপ পাবে, লাভে থেকে লসে চলে যাবে, তখন তারা কর্মী ছাঁটাই করে দিতে বাধ্য হবে।’</p> <p>বেসিসের সাবেক সভাপতি শামীম আহসান বলেন, ‘আমাদের ই-জেনারেশন একটি এসএমই কম্পানি। আমরা প্রতিবছর এখন এআইটি, ভ্যাট ও ট্যাক্স মিলিয়ে তিন কোটি টাকা দিচ্ছি। কর্মীরা আরো ৫০ লাখ টাকা ট্যাক্স দিচ্ছে। পাঁচ বছর আগে হয়তো রাজস্ব দিতাম এক কোটি টাকা, সেটা এখন তিন গুণ হয়েছে। কর্মীদের দেওয়া করও তিন গুণ হয়েছে। আমি হিসাব করেছিলাম আরো পাঁচ বছর যদি কর অব্যাহতি থাকে, পরের পাঁচ বছর যদি ৫ শতাংশ করে করপোরেট ট্যাক্স দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, আমাদের মতো একটি এসএমই কম্পানি সরকারকে আগামী ১০ বছরে ১০০ কোটি টাকা কর-ভ্যাট দিতে পারবে। আবার সরকার যদি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, করপোরেট ট্যাক্স এখন আমাদের মতো কম্পানির ওপর আরোপ করে, হিসাব করে দেখেছি, প্রবৃদ্ধিটা বন্ধ হয়ে যাবে।’ </p> <p>বেসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সামিরা জুবেরী হিমিকা বলেন, ‘কর অব্যাহতি তুলে দিলে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের যে ক্ষতি হবে, সেই হিসাব ও ডাটা তৈরি করে সরকারের কাছে আমাদের তুলে ধরতে হবে। কর অব্যাহতির এই সুযোগ অব্যাহত রাখতে এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে আমাদের সহায়তা করতে হবে। আর এই কাজটি আমাদের আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই করতে হবে। আমরা এখন সেই কাজটি করছি।’ তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতই বাংলাদেশকে বড় করেছে, বেসরকারি খাতই বাংলাদেশকে বড় করবে, সরকার সেখানে নীতিগত সহায়তা দেবে।’</p> <p>সভায় আরো বক্তব্য দেন কন্টেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এস এম রফিক উল্লাহ, বন্ডস্টাইন টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শাহরুখ ইসলাম, এ আর কমিউনিকেশনসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এম আসিফ রহমান, সিনদাবাদ ডটকমের সহপ্রতিষ্ঠাতা জিসান কিংশুক, চালডাল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জিয়া আশরাফ, টেনমিনিট স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সালমান, ট্রাক লাগবে-এর সিইও এনায়েত রশিদ প্রমুখ।</p>