<p>ইলমে ওহি বা আসমানি প্রত্যাদেশভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্র বা মাদরাসার প্রথম সূচনা মসজিদ থেকে ৷ মসজিদে নববী কেন্দ্রিক সুপ্রসিদ্ধ যে মাদরাসাটি গড়ে উঠেছিল, ইতিহাস তাকে 'সুফ্ফা' নামে অভিহিত করেছে ৷ এই মাদরাসায় যেসব সাহাবায়ে কেরাম সীমাহীন ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করে নিজেদের নাম লিপিবদ্ধ করেছিলেন, ইতিহাস আজো তাঁদের 'আসহাবে সুফ্ফা' নামে অভিহিত করে ৷ এ পরিচয়েই তাঁরা ভাস্বর হয়ে থাকবেন কিয়ামত পর্যন্ত ৷ ইসলামের প্রচার-প্রসার বা দাওয়াতের জন্য মুবাল্লিগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সর্বাগ্রে এখানের ছাত্রদেরই প্রেরণ করা হতো মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে ৷ </p> <p>হিজরি চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত শিক্ষাদীক্ষার কার্যক্রম মসজিদ কেন্দ্র করেই সম্পাদিত হয়ে আসছিল ৷ সে যুগে এমন কোনো মসজিদ পাওয়া কঠিন ছিল, যাকে কেন্দ্র করে কোনো মাদরাসা বা মক্তব গড়ে উঠেনি ৷মাদরাসা প্রতিষ্ঠার এই রেওয়াজ সে সময় এতো ব্যাপকতা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে কোথাও মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অথচ তাকে কেন্দ্র করে মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, তা ছিলো কল্পনাতীত ব্যাপার!</p> <p>ইসলামের ইতিহাসে বর্তমানে প্রচলিত মাদরাসার সূচনা হয় হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে ৷ বিশ্বে সর্বপ্রথম হিজরি ৪৫৯ সনে বাগদাদে নিজামুল মুলক তুসি (৪৮৫ হি./১০৯২ খ্রি.) মাদরাসায়ে নিজামিয়া নামে এই ঐতিহাসিক মহান কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন বলে ব্যাপক শ্রুতি থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এই কাজের শুভ সূচনা করেন বুখারার আবু হাফস বুখারি (রহ.)।<br /> <br /> অনেকে সুলতান মাহমুদ গজনবি (রহ.) (৯৭১-১০৩০ খ্রি.)-এর প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাকে সর্বপ্রথম মাদরাসা হিসাবে উল্লেখ করলেও ইতিহাসে এর আগে প্রতিষ্ঠিত আরো বেশ কিছু মাদরাসার কথা পাওয়া যায় ৷ যেমন 'মাদরাসাতুল ইমাম আবু হানিফা' (যা মাদরাসায়ে নিজামিয়ার পাঁচ মাস আগে প্রতিষ্ঠিত), নিসাপুরের 'মাদরাসাতু আবি বকর আল বুসতি'(৪২৯ হি.-এর আগে), 'আল মাদরাসাতুল বায়হাকিয়্যাহ '(যা নিজামুল মুলক তুসির জন্মের আগে প্রতিষ্ঠিত), 'অাল মাদরাসাতুস সদিরিয়্যাহ' (যা আমির সদির ইবনে আব্দুল্লাহ ৩৯১ হিজরিতে দামেশকে প্রতিষ্ঠা করেন ), 'মাদরাসাতু মুহাম্মাদ বিন অাব্দুল্লাহ' (যা ৩৮৮ হিজরির আগে প্রতিষ্ঠিত), 'মাদরাসাতু আবিল ওয়ালিদ '(এই মাদরাসাটি ৩৪৯ হিজরির আগে প্রতিষ্ঠিত) ও ৩০৫ হিজরির দিকে প্রতিষ্ঠিত 'মাদরাসাতু ইবনি হায়্যান' ইত্যাদী ৷ ( الإدارة التربوية في المدارس في العصر العباسي :94)</p> <p>প্রাপ্ত তথ্য মতে, উপমহাদেশের সর্বপ্রথম মাদরাসা হলো আমির শিহাবুদ্দিন মুহাম্মাদ ঘোরি কর্তৃক আজমিরে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা, যা তিনি হিজরি ৫৮৭ সালে আজমি জয়ের পরে প্রতিষ্ঠা করেন ৷ <br /> المدرسة مع التركيز على النظاميات: 336)</p> <p>আমাদের দেশে শাইখ আবু তাওয়ামা (রহ.) -এর ১২৭৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাকে প্রথম মাদরাসা হিসাবে অনেকে মত প্রকাশ করলেও বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজির মাদরাসাই এ দেশের প্রথম মাদরাসা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ৷ তিনি ১২০৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে গৌড়ে একটি মসজিদ ও মাদরাসা নির্মাণ করেছিলেন ৷ প্রাচীন গৌড়ের যে অংশটুকু আমাদের দেশের চাপাইনবাবগন্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত, সে অঞ্চলের পুরনো স্হান ও স্হাপত্যের ইতিহাসে ইখতিয়ার উদ্দিন কর্তৃক নির্মিত মসজিদের কথাও পাওয়া যায় ৷<br /> আর দেওবন্দি ধারার প্রথম মাদরাসা সিলেটের ঝিংগাবাড়ী মাদরাসা, যা হাটহাজারী মাদরাসা (১৮৯৬ খ্রি.)-এর প্রায় বাইশ বছর আগে ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিা লাভ করে ৷</p> <p>এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে, রাজধানী ঢাকায় প্রথম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন আমিরুল উমারা খ্যাত বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খান, যা বর্তমানে মির্টফোড হাসপাতাল এলাকায় 'শায়েস্তা খাঁর মসজিদ' নামে পরিচিত ৷ মগবাজারের প্রসিদ্ধ বুযুর্গ হযরত শাহ নূরী (রহ.) হিজরি ১১২০ সালের দিকে পায়ে হেঁটে এ মাদরাসাতেই পড়তে আসতেন ৷ </p> <p>আর দেওবন্দি ধারার প্রথম মাদরাসা হিসাবে ঢাকায় ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বড় কাটারা মাদরাসার ব্যাপারে জনশ্রুতি থাকলেও মূলত প্রথম মাদরাসা হচ্ছে ঢাকার তাঁতীবাজার মাদরাসা ৷ ১৯২০ সালে নবাব খাজা হাবীবুল্লাহর দাওয়াতে ইতিহাসের সর্বাধিক গ্রন্থের রচয়িতা, মহান সাধক, হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) ঢাকায় আগমন করলে তাঁর হাতে এর শুভ সূচনা হয় ৷ আল্লাহ ইসলামের এ দুর্গগুলোকে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত<br /> রাখুন৷ <br /> (ہندوستان کی قدیم درسگاہیں: 23) </p>