<p>স্নায়ুঘটিত রোগ সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেরই স্পষ্ট ধারণা থাকে না।  কখন সচেতন হতে হবে, তা আমরা বুঝতেও পারি না। যে কারণে পরিস্থিতি জটিল না হলে ডাক্তারের কাছেও যাওয়া হয় না। কিন্তু ততক্ষণে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ সময় পেরিয়ে যায়। নিচের স্নায়বিক রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন:</p> <div style="background:#eee;border:1px solid #ccc;padding:5px 10px;"><strong>চল্লিশের নীচে:</strong> মাথাব্যথা, এপিলেপ্সি, স্ট্রোক। এই বয়সে সাধারণত স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা অন্য রোগের তুলনায় কম হলেও, গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী।</div> <div style="background:#eee;border:1px solid #ccc;padding:5px 10px;"><strong>চল্লিশের উপরে কিন্তু ষাটের নীচে: </strong>এপিলেপ্সি, স্ট্রোক, কোমরের নীচের দিকে ব্যথা, মাথাব্যথা।</div> <div style="background:#eee;border:1px solid #ccc;padding:5px 10px;"><strong>ষাটের ঊর্ধ্বে: </strong>স্ট্রোক, ডিমেনশিয়া, মস্তিষ্কে সংক্রমণ। যদি এপিলেপ্সির সমস্যা জিনগত কারণে হয়, তার প্রকাশ ১৮-২০ বছর বয়সেও হতে পারে।</div> <p><strong>মাথাব্যথা: </strong>এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার আজ অবধি মাথাব্যথা হয়নি। তাই বিশেষজ্ঞ বলছেন, মাথাব্যথার তীব্রতা ও কত দিন অন্তর হচ্ছে, তার উপরে নজর রাখতে হবে। এর সঙ্গে বমি, জ্বর, দেখার সমস্যা, ডাবল ভিশন বা ব্ল্যাক আউটের মতো উপসর্গ যদি দেখা যায়, বুঝতে হবে সমস্যাটি গুরুতর ও স্নায়ুজনিত। তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।</p> <p><strong>কোমরের নীচের দিকে ব্যথা:</strong> এ ক্ষেত্রেও ব্যথার তীব্রতা, ফ্রিকোয়েন্সি বিচার করতে হবে। এই ব্যথার কারণে কারও যদি দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয়, তখন সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে।</p> <p><strong>এপিলেপ্সি: </strong>সাধারণ ভাষায় 'খিঁচুনি' বলা হয় এপিলেপ্সিকে। এর রকমফেরও আছে। কিন্তু এমন কিছু এপিলেপ্সিও রয়েছে, যা সাধারণ মানুষ চিনতেই পারেন না। টেম্পোরাল লোব এপিলেপ্সির ক্ষেত্রে রোগী কথা বলতে বলতে আনমনা হয়ে যান। রোগীর বাড়ির লোক বলেন, তখন রোগী অদ্ভুত কিছু মুখভঙ্গিমা বা হাতের মুভমেন্ট করেন। রোগীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি হয়তো বলেন, ওই সময়ে তিনি কোনও অপরিচিত গন্ধ পান বা কোনও অবয়বের বিকৃতি দেখতে পান বা কোনও মন্ত্র শুনতে পান। হ্যালুসিনেশন শুনলেই আমাদের মনে হয়, রোগটি হয়তো মানসিক। সাইকায়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হই আমরা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যাটি স্নায়বিক।</p> <p><strong>হাত কাঁপা: </strong>স্নায়ুর সমস্যার ক্ষেত্রে হাত কাঁপা বহুল প্রচলিত একটি উপসর্গ। বয়স্কদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা হলেই অনেকে ভাবেন, পারকিনসনস ডিজ়িজ়। এই রোগটির ক্ষেত্রে রোগীর হাঁটা-চলা অস্বাভাবিক ভাবে ধীর গতির হয়ে যায়। যে কাজটির ক্ষেত্রে আগে তার পাঁচ মিনিট লাগত, সেটি করতে আধ ঘণ্টা লেগে যায়। তবে পারকিনসনস ডিজ়িজ় ক্ষেত্রবিশেষে খুব তাড়াতাড়ি বা খুব আস্তে আস্তে প্রকট হয়।</p> <p><strong>এসেনশিয়াল ট্রেমর: </strong>অনেকের জিনগত ভাবেই হাত কাঁপার সমস্যা থাকে। তাদের ক্ষেত্রেও সমস্যাটির লক্ষণ আগেভাগেই প্রকট হয়।</p> <p><strong>সমস্যাটি স্নায়বিক না মানসিক?</strong></p> <p>টেম্পোরাল লোব এপিলেপ্সির মতো আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে উপযুক্ত ধারণার অভাবে আমরা বুঝতে পারি না, কার সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। যেমন, স্মৃতিলোপ ছাড়াও ডিমেনশিয়ার সমস্যা হতে পারে। খুব শান্তশিষ্ট ব্যক্তি হঠাৎ চনমনে হয়ে উঠলেন। ডিমেনশিয়ার কারণেই হয়তো তার এই পরিবর্তন। কিন্তু তার স্মৃতির সমস্যা হয়নি বলে ধরে নিই, হয়তো সাইকায়াট্রিস্টের পরামর্শ প্রয়োজন। কিন্তু ঠিক সময়ে ডিমেনশিয়া ধরা পড়লে চিকিৎসা ও ক্ষেত্রবিশেষে নিরাময় সম্ভব।</p> <p>নিকোটিন ও অ্যালকোহলের প্রভাব: চল্লিশ বছরের নীচে যারা স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে লাগামছাড়া মদ্যপান একটি বড় কারণ। এর সঙ্গে সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, হাইপার টেনশন, ডায়াবিটিসও স্ট্রোকের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যারা দীর্ঘ দিন ধরে মদ্যপান করছেন, তাদের মধ্যে এপিলেপ্সি, আর্লি কগনিটিভ ডিক্লাইন, পেরিফেরাল নার্ভ ড্যামেজ ও ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।</p> <p><strong>নিকোটিন: </strong>হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের জন্য অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর।</p> <p><strong>মোবাইলের ব্যবহার: </strong>স্মার্ট ফোনের ক্রমাগত ব্যবহার ও হ্যান্ড মুভমেন্টের কারণে কবজির নার্ভ অনেক ক্ষেত্রেই সংকুচিত হয়ে যায়। স্পাইনাল কর্ডের সমস্যাও হতে পারে।</p> <p><strong>স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ:</strong><br /> ⇒ কেউ অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বললে বা ভুল বাক্য গঠন করলে, সেটাও কিন্তু স্ট্রোকের উপসর্গ হতে পারে।<br /> ⇒ ডাবল ভিশন, মাথা ঘোরাও স্ট্রোকের উপসর্গ।<br /> ⇒ সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেনের ব্যথা নয়। কোনও রোগীর দশ বছর ধরে মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলেও, মাথাব্যথার ধরন, ফ্রিকোয়েন্সি ও তীব্রতার উপরে রোগ নির্ণয়ে হেরফের হতে পারে।<br /> ⇒ ঘাড়ে ব্যথা ছাড়াও স্পাইনাল কর্ড ডিজ়অর্ডার দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীর ভারসাম্য রাখতে সমস্যা তৈরি হবে।<br /> ⇒ সার্ভাইকাল স্পন্ডিলোসিস কখনও ভার্টিগোর কারণ নয়। কান ও মাথার ব্যালান্সিং নার্ভের সমস্যার কারণে ভার্টিগো হয়। এটি নিউরোলজিক্যাল সমস্যা। ঘাড়ের ব্যায়াম করে এই রোগের নিরাময় সম্ভব নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।</p>