ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ মহররম ১৪৪৭

৫ মিনিটেই জমির আরএস খতিয়ান

কালের কণ্ঠ অনলাইন
কালের কণ্ঠ অনলাইন
শেয়ার
৫ মিনিটেই জমির আরএস খতিয়ান

আগে জমির বিভিন্ন রেকর্ড যেমন—এসএ, সিএস, বিআরএস নকল/পরচা/খতিয়ান/সার্টিফায়েড কপি অনলাইনে আবেদন করে সপ্তাহখানেক পর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে পাওয়া যেত। এবার যেখান থেকে খুশি, ইচ্ছামতো সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাত্র ৫ মিনিটেই পাওয়া যাবে জমির আরএস খতিয়ান। সম্প্রতি অনলাইনেই এই সেবা চালু হয়েছে। বিস্তারিত তুহিন মাহমুদের কাছে

খতিয়ান কী?
খতিয়ান জমির পরিচিতির এক প্রকার দলিল।

সরকারিভাবে জরিপকালে জরিপ কর্মচারী দ্বারা জমিজমার বিবরণসংবলিত সরকারি দলিলই ‘খতিয়ান’ নামে পরিচিত। খতিয়ান মানেই মৌজার দাগ অনুসারে ভূমির মালিকের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা, মালিকানার বিবরণ, জমির বিবরণ, মৌজা নম্বর, মৌজার ক্রমিক নম্বর (জেএল নম্বর), সীমানা, জমির শ্রেণি, দখলকারীর নাম, অংশ প্রভৃতির একটি সুস্পষ্ট হিসাব। যখন একটি পৃথক কাগজে খতিয়ানের অনুলিপি তৈরি করা হয়, তখন সেটিকে পরচা বলে।

খতিয়ানের প্রয়োজনীয়তা
খতিয়ান জমির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

জমি কেনার সময় ক্রেতাকে অবশ্যই জরিপের মাধ্যমে প্রণীত খতিয়ান ও নকশা যাচাই করতে হবে; জমির মৌজা, খতিয়ান ও দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমাণ জানতে হবে। পরচা যাচাই করে দেখতে হবে। শুধু জমি ক্রয়-বিক্রয়ই নয়, এর সঙ্গে জমি রক্ষণাবেক্ষণ এবং দখলে রাখার ক্ষেত্রেও খতিয়ানের গুরুত্ব রয়েছে। খতিয়ান বা পরচায় কোনো রকম সমস্যা মালিকানা, জমি ক্রয়-বিক্রয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই এতে কোনো সমস্যা থাকলে তা ঠিক করে নিতে হবে। মালিকানা নির্ধারণের জন্য জমির পরিচিতির দরকার হয়। বর্তমানে মালিকানা নির্ধারণে এর গুরুত্ব বেশি। খতিয়ানে শুধু মালিকের নামই নয়; বরং এর সঙ্গে বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে মালিক হলে তাঁর মালিকানার যোগসূত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। বিক্রেতা উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হলে পূর্বমালিকানা ক্রমান্বয়ে মেলাতে হবে।
যদিও শুধু খতিয়ান দেখেই মালিকানা নিশ্চিত হওয়া যাবে না। এর জন্য হস্তান্তর দলিল, দখল, দাখিলা—সব কিছুর সমন্বয় প্রয়োজন। এ ছাড়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, দখলের প্রমাণ, হস্তান্তর, বিবাদ নিষ্পত্তি সহজকরণ, জমির দাগ, অংশ, হিসসা, শ্রেণি জানার জন্য ভূমি মালিকানার ইতিহাস সংরক্ষণ, জমি বেচাকেনার সময় যাচাই ইত্যাদি কাজে জমির খতিয়ানের প্রয়োজন হয়।

খতিয়ান তোলার আগের পদ্ধতি
আগে জমির খতিয়ান বা পরচা তুলতে সবাইকে জেলা সদরের রেকর্ডরুম থেকে আবেদন করে হাতে লেখা খতিয়ান তুলতে প্রায় এক থেকে দুই মাস সময় লেগে যেত। অল্পদিনে খতিয়ান বের করে দেওয়ার নামে সেখানে দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ছিল। সাধারণ জনগণের কাছ থেকে অবৈধভাবে কয়েক শ থেকে হাজার টাকা হাতিয়ে নিত তারা। এসব ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতে ২০১১ সালে যশোরের তৎকালীন সহকারী জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান অনলাইনে আবেদনে জমির পরচা সরবরাহ করার উদ্যোগ নেন। পাইলট প্রকল্প শেষে ওই বছরের নভেম্বরে দেশের বাকি ৬৩টি জেলায় কাউন্টার, সার্ভাররুম সেটআপের মাধ্যমে অনলাইনে জমির পরচা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সে ক্ষেত্রেও আবেদনকারীকে জেলা সদরে যেতে হতো। এর পরের বছর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে একইভাবে জমির পরচা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সারা দেশ থেকে গ্রাহকদের মতামত নিয়ে ২০১৩ সালে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সিরাজগঞ্জের ৩০টি ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে ই-ল্যান্ড রেকর্ড সার্ভিস (ইএলআরএস) সিস্টেম চালু করা হয়। আশানুরূপ সাড়া পাওয়ায় পরবর্তীকালে ভূমি মন্ত্রণালয় সারা দেশের সব ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে এই সেবা চালু করে।

আরএস-কে পদ্ধতি চালু
ইএলআরএস সিস্টেমে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে আবেদন করা গেলেও তাত্ক্ষণিকভাবে খতিয়ান বা পরচা পাওয়ার সুযোগ ছিল না। সপ্তাহখানেক অপেক্ষার পর ওই তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকেই সেটি গ্রহণ করতে হতো। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় খতিয়ানের কপি প্রাপ্তিতে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা পরিহার, সময়, খরচ ও যাতায়াতের ভোগান্তি হ্রাস, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য হ্রাস, ভূমিসংক্রান্ত সেবা আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা, আরএস খতিয়ানগুলোকে সর্বসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করা এবং দেশের সব খতিয়ানের তথ্য একটি প্ল্যাটফরমে আনার জন্য আরএস খতিয়ান সংক্ষেপে ‘আরএস-কে’ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় আরএস খতিয়ানের ডিজিটালাইজড সংস্করণ তৈরির কাজ চলে আসছিল। সর্বশেষ এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘হাতের মুঠোয় খতিয়ান’ স্লোগানে সচিবালয়ে আরএস খতিয়ান অনলাইনে অবমুক্তকরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এর ফলে http://land.gov.bd বা http://rsk.land.gov.bd বা http://www.minland.gov.bd বা আরএস খতিয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করার সুবিধা উন্মুক্ত হয়।

দেশে প্রায় ৬১ হাজার ৫০০ (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) মৌজা রয়েছে। এর মধ্যে ৪১ হাজার মৌজার জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৩২ হাজার মৌজার জরিপে প্রকাশিত এক কোটি ৪৬ লাখ আরএস (১৯৬৫ সাল থেকে চলমান জরিপে প্রস্তুত করা খতিয়ান) খতিয়ানের তথ্য অনলাইনে পাওয়ার সুযোগ করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাকি খতিয়ানগুলো ক্রমান্বয়ে যুক্ত হতে থাকবে। জরিপ কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং জরিপ শেষ হয়েছে এমন খতিয়ানগুলো পর্যায়ক্রমে আপলোড করা হবে। জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর চূড়ান্তভাবে গেজেট প্রকাশিত খতিয়ানও এসব লিংকে আপলোড করা হবে বলে জানানো হয়। ফলে এখন থেকে আর খতিয়ানের অনলাইন কিংবা সার্টিফায়েড কপি পেতে ভূমি অফিসে কিংবা ডিসি অফিসে দৌড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

যেভাবে পাবেন আরএস-কে সেবা
অনলাইনে আরএস খতিয়ান পেতে চাইলে আগ্রহীকে প্রথমে https://www.land.gov.bd/pages/R-S-Khotian অথবা এই উদ্যোগের মূল ওয়েবসাইট ত্ংশ.ষধহফ.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে যেতে হবে। মূল ওয়েবসাইটের হোম পেইজের মাঝামাঝি লেখা নাগরিক কর্নারে ক্লিক করতে হবে। এরপর খতিয়ান ও দাগের তথ্য অনুসন্ধানের অনলাইন আবেদন পেইজ আসবে। সেখানে ড্রপডাউনের মাধ্যমে নির্ধারিত বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও মৌজা বাছাই করতে হবে। এরপর খতিয়ান নম্বর, বা দাগ নম্বর বা মালিকানার নাম কিংবা পিতা বা স্বামীর নাম দিতে হবে। এর যেকোনো একটি দেওয়ার পর নিরাপত্তার জন্য সেখানে থাকা ‘যোগফল প্রদান করুন’ ঘরটি পূরণ করতে হবে। তারপর ‘নিচে খুঁজুন’ বাটনটি চাপতে হবে। লোডিংয়ের মাধ্যমে নিচে দ্রুততম সময়ে মালিক, অকৃষি প্রজা বা ইজারাদারের তথ্য, দাগের সংখ্যা ও মোট জমির পরিমাণ দেখাবে। সেখানে নিচে ‘এই খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করুন’ কিংবা ‘অনলাইন কপির জন্য আবেদন করুন’ নামে দুটি লিংক বাটন আছে।

সেবাগ্রহীতা আরএস খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি (হার্ড কপি) নিতে চাইলে প্রথম বাটনটি চাপতে হবে। তাহলে নতুন একটি পেইজ আসবে। সেখানে সাধারণ নাকি জরুরি ডেলিভারি, ডেলিভারির মাধ্যম অফিস কাউন্টার নাকি ডাকযোগে সেটি নির্বাচন করে দিতে হবে। এরপর নির্ধারিত ঘরে নাম, মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ই-মেইল, ঠিকানা বা পোস্টাল অ্যাড্রেস এবং যোগফল প্রদান—ঘরগুলো পূরণ করতে হবে। সাধারণ ডেলিভারিতে পাঁচ দিন এবং জরুরি ডেলিভারিতে তিন দিন সময় লাগবে। অফিস কাউন্টার থেকে নিলে ডেলিভারি চার্জ প্রযোজ্য হবে না। এ ক্ষেত্রে ইউক্যাশের মাধ্যমে কোর্ট ফি যথাক্রমে ২২ অথবা ২৭ টাকা দিতে হবে। আর ডাকঘরের মাধ্যমে নিলে ডেলিভারি চার্জসহ ইউক্যাশের মাধ্যমে যথাক্রমে সর্বমোট ৭২ টাকা অথবা ৭৭ টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাই ইউক্যাশ নম্বর লেখা ঘরে সেবাগ্রহীতা যে ইউক্যাশ নম্বর থেকে ফি পরিশোধ করবেন, সেটি দিতে হবে। এরপর নিচে ‘টাকা পরিশোধ করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে আবেদন অনুযায়ী অফিস কাউন্টার কিংবা প্রত্যাশিত ঠিকানায় ডাকযোগে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে আরএস খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে অনলাইন কপি নিতে চাইলে ‘অনলাইন কপির জন্য আবেদন করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। পরবর্তী পেইজে উপরোক্ত নিয়মে নাম, মোবাইল নম্বর ও যোগফল প্রদান ঘর বাধ্যতামূলকভাবে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ই-মেইল, ঠিকানা ঘরগুলো প্রযোজ্য হলে পূরণ করতে হবে। এরপর নিচে প্রিন্ট বাটন ক্লিক করলে নতুন পেইজে আরএস খতিয়ানের পিডিএফ ওপেন হবে। সেটি প্রয়োজনে ডাউনলোড বা প্রিন্ট করা যাবে।

অ্যাপেও পাওয়া যাবে সেবা
স্মার্টফোনে অ্যাপের মাধ্যমেও সেবাটি দেওয়ার জন্য প্লেস্টোরে ‘আরএস খতিয়ান’ নামে একটি অ্যাপ উন্মুক্ত করা হয়েছে।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.softbdltd.rsk লিংক থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। ডাউনলোড ও ইনস্টল সম্পন্ন হলে অ্যাপটি ওপেন করতে হবে। এরপর ওয়েবসাইটের মতোই এই অ্যাপেও একইভাবে আবেদনের মাধ্যমে সেবা পাওয়া যাবে।

আছে ট্র্যাকিং সুবিধাও
যারা সার্টিফায়েড কপির জন্য আবেদন করবেন তাঁরা https://www.land.gov.bd/pages/R-S-Khotian লিংক কিংবা অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের আবেদন ট্র্যাকিং করতে পারবেন। এ জন্য ট্র্যাকিং বক্সের অধীন আবেদন আইডি, মোবাইল নম্বর এবং যোগফল প্রদান করুন ঘরগুলো পূরণ করে খুঁজুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে ওই আবেদনের বর্তমান অবস্থা জানা যাবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

রিলস দেখতে আর স্ক্রল করতে হবে না, যে আপডেট নিয়ে আসছে ইনস্টাগ্রাম

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রিলস দেখতে আর স্ক্রল করতে হবে না, যে আপডেট নিয়ে আসছে ইনস্টাগ্রাম
সংগৃহীত ছবি

আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিলস বা শর্ট ভিডিও অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শত কাজের মাঝে একটু সময় পেলেই অনেকে ঢুঁ মারেন ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে। কিন্তু রিলস দেখতে গেলে বারবার স্ক্রল করতে হয়। তবে এখন থেকে আর তেমনটা স্ক্রল করতে হবে না ইনস্টাগ্রামে।

আরো সহজ হতে চলেছে রিলস দেখা।

কী এই ফিচার

খুব শিগগির রিলসে ‘অটো স্ক্রল’ ফিচার আনছে ইনস্টাগ্রাম। এর ফলে রিলস দেখতে গেলে আর স্ক্রল করতে হবে না। মোবাইল স্ক্রিনে চলতে থাকবে একের পর এক রিলস।

ইতিমধ্যেই আইফোনে এসে গেছে ইনস্টাগ্রামের নতুন এই ফিচার। তবে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কবে আসবে, তা এখনো জানা যায়নি।

আরো পড়ুন
ঘড়ি বাঁ হাতে পরা হয় কেন, ডান হাতে পরলে কী হয়?

ঘড়ি বাঁ হাতে পরা হয় কেন, ডান হাতে পরলে কী হয়?

 

কিভাবে এই ফিচারটি চালু করবেন

‘অটো স্ক্রল’ ফিচারটি চালু করতে গেলে প্রথমে যেকোনো একটি রিলস ওপেন করতে হবে। তারপর ডানদিকে নিচে তিনটি বিন্দু দেওয়া একটি অপশন ক্লিক করতে হবে।

তারপর ‘অটো স্ক্রল’ ফিচারটি চালু করতে হবে। একবার এই ফিচারটি চালু করা হয়ে গেলে রিলস দেখার সময় আর বারবার স্ক্রল করতে হবে না।

সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন

মন্তব্য

অ্যানোনিমাস পেজ থেকে গুজব ছড়াচ্ছে বেটিং চক্র

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
অ্যানোনিমাস পেজ থেকে গুজব ছড়াচ্ছে বেটিং চক্র

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাস। এই স্ট্যাটাসটি ছিল ২০ জুলাইয়ের। যেখানে দাবি করা হয়, ‘একটি বিদ্যালয়ের বিল্ডিং ধসে পড়বে, অনেক শিশুর প্রাণহানি ঘটবে। এমনটা ঘটবে বিদ্যালয়ের বিল্ডিংয়ের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের কারণে।

এরপরই সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজের প্রাইমারি ভবনে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরেই অনেকে দাবি করতে শুরু করেন, হয়তো এই ঘটনার সঙ্গে স্ট্যাটাসের কোনো যোগসাজশ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই একই পেজ থেকে উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরই অপর এক স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়, তারা আগেই সতর্ক করেছিল। একদিন আগেই এমন কিছু ঘটবে, সেটার আগাম বার্তা দিয়েছিল। একের পর এক গুজব ছড়ানো হচ্ছিল পেজটি থেকে।

এছাড়া সোমবার সন্ধ্যায় ওই একই পেজ থেকে আরো একটি স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়- বাংলাদেশে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি বোমা বিস্ফোরিত হবে। এটি হতে পারে কোনো হোটেল কিংবা হাসপাতালে।

মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুলস্থূল শুরু হয়। অনেকেই তাদের সেই পোস্ট শেয়ার করে এক ধরনের আতঙ্ক-উদ্বিগ্নের কথাও প্রকাশ করেন।

তবে বিষয়টি বেশি দূর গড়ানোর আগেই এই ফেসবুক পেজের মুখোশ উন্মোচন করেছেন আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির। 

নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘অনলাইন জুয়াড়িদেরকে খোদা বানিয়ে ফেলা বন্ধ করুন! আজকের এই দিনে এমন জিনিসে অ্যাটেনশন দিতে হবে তা ভাবাও কষ্টকর। ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নিয়ে যে হাইপ তোলা হয়েছে, তারপর একটু সময় দিলাম পেইজটার পেছনে। যা পেলাম তা হচ্ছে--- প্রথমত, এটি অ্যানোনিমাস হ্যাকার গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু নয়। অ্যানোনিমাস এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যে ফেসবুক পেইজ দেওয়া আছে সেটি এই পেইজ নয়।

‘দ্বিতীয়ত, ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামক পেইজটি ঘেঁটে জানা গেছে, এটি একটি অনলাইন জুয়ার পেইজ। মূলত অনলাইন জুয়া প্রমোট করা (টিকিট বিক্রির), নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তারা অনলাইন গেমিং বা জুয়া সংক্রান্ত পোস্ট দিয়ে থাকে। তৃতীয়ত, তাদের যে পোস্ট ভাইরাল হয়েছে ‘স্কুল ভবন ধসে’ পড়া সংক্রান্ত সেটিতে লেখা হয়েছিল: ‘A school building will collapse leaving lots of kids l!veless. We see a terrible disaster fast coming, This will be as a result of poor maintenance on the building. We shall do everything in our power to avert this terrible catastrophe we’ve seen coming.’

‘এখানে কোনোভাবেই বাংলাদেশের নাম উল্লেখ নেই। আর বাংলাদেশে আজ যে ঘটনা ঘটেছে তাতে স্কুল ভবন ধসে পড়েনি। ভবনের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। যারা মারা গেছেন কেউ ভবনের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কারণে মারা যাননি। মারা গেছেন বিমান বিস্ফোরিত হয়ে লাগা আগুনে। ফলে এটা কোনোভাবেই বলার সুযোগ নেই যে, ওই পেইজে বাংলাদেশের এই ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।’

‘গুজবে আজমসহ কিছু আওয়ামী লীগার তাদের ফেসবুক পেইজগুলোতে এই উপসংহার টানার চেষ্টা করেছেন, যা আসলে মূল পোস্টের সঙ্গে মিলে না। চতুর্থত, এই পেইজটি যে একটি স্ক্যামার জুয়াড়ি গ্রুপ দ্বারা পরিচালিত তা স্পষ্ট হচ্ছে তাদের ওই পোস্টটি বাংলাদেশে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে। ভাইরাল হওয়ার প্রথম দিকেও পেইজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন চেক করে দেখা গেছে এটি ৩টি দেশ থেকে চালানো হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপ, আরেকটি নাইজেরিয়া এবং তৃতীয়ত দেশের নাম এডমিন প্রকাশ করেনি।’ 

‘পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর তাদের পেইজের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠায় এডমিনদের অবস্থানকারী দেশের তথ্য তারা হাইড করে দিয়েছে। আফ্রিকায় নাইজেরিয়া অনলাইন জুয়াড়িদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। জুয়ার প্রমোশনমূলক ওদের একটা পুরনো ভিডিওতে একজন আফ্রিকানকে দেখা গেছে। অর্থাৎ, এটির সঙ্গে নাইজেরিয়ান জুয়াড়িদের কানেকশন থাকার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে।’

‘তাদের পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পরে যখন বুঝতে পেরেছে তারা বাংলাদেশিদের অ্যাটেনশন পাচ্ছে (বিকেল থেকে তাদের ফলোয়ার ২ লাখের কাছাকাছি থেকে ৩ লাখের ওপরে উঠেছে) তখন একের পর এক বাংলাদেশ বিষয়ক পোস্ট দেওয়া শুরু করেছে। এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভয়ঙ্কর কিছু বাংলাদেশের মার্কেটগুলোতে ঘটবে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। একইসঙ্গে তাদের আরো নানান জুয়ার পেইজ প্রমোট করা শুরু করেছে বাংলাদেশি নতুন ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে। আহ্বান জানাচ্ছে দ্রুত ফলোয়ার হওয়ার জন্য। এই পেইজটি ফলো করে জানি না কতজন অনলাইন জুয়ায় ঝুঁকে ফতুর হয়। এমনিতেই বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া নানানভাবে বাড়ছে।’

মন্তব্য

চলতি সপ্তাহেই আসতে পারে আইওএস ২৬

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
চলতি সপ্তাহেই আসতে পারে আইওএস ২৬
ছবি : অ্যাপল

চলতি বছরের জুন মাসে অ্যাপলের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপারস কনফারেন্স (ডব্লিউডব্লিউডিসি) থেকে আইওএস ২৬ ডেভেলপার বিটা প্রকাশ করা হলেও সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এটি প্রকাশ হয়নি। তবে ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর, গুজব রয়েছে আইওএস ২৬ পাবলিক বিটা এ সপ্তাহেই প্রকাশ হতে যাচ্ছে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদক মার্ক গুরম্যানের সর্বশেষ পাওয়ার অন নিউজলেটারে এমন তথ্যই জানা গেছে। সেখানে গুরম্যান জানিয়েছেন, আইওএস ২৬ আগামী সপ্তাহে পাবলিক বিটা পর্যায়ে যাবে বলে সব ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

এটি আপডেট করা অপারেটিং সিস্টেমটিকে বর্তমানে যে পরিমাণ দর্শক আছে তার চেয়ে অনেক বেশি দর্শকের কাছে নিয়ে যাবে। যদিও এটি প্রকাশের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত নয়, এটি সেপ্টেম্বরে আইফোন ১৭-এর সঙ্গে প্রকাশ হতে পারে।

গত সপ্তাহে এক্সে একটি পোস্টে গুরম্যান বলেছিলেন, আইওএস ২৬ পাবলিক বিটা ২৩ জুলাই বা তার কাছাকাছি সময়ে প্রকাশ হতে পারে। পরবর্তী পাওয়ার অনের তথ্য থেকে মনে হচ্ছে, গুরম্যান সেই সময়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।

গুরম্যানের প্রতিবেদনে ২০২৬ সালে প্রকাশ হতে যাওয়া আইওএস ২৭ সম্পর্কেও সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। গুরম্যান বিশ্বাস করেন, অ্যাপল ইতিমধ্যেই এই সফ্টওয়্যারটির উন্নয়নকাজ শুরু করেছে, যা অ্যাপলের ভাঁজযোগ্য আইফোনের সঙ্গে আসতে পারে। গুজব রয়েছে যে এটি ২০২৬ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৭ সালের প্রথম দিকে বাজারে আসবে। বাজারে বর্তমান সেরা ভাঁজযোগ্য ফোনগুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাপলের এটি প্রথম প্রচেষ্টা।

আইওএস ২৬ ছাড়াও অ্যাপল প্রায় নিশ্চিতভাবেই একই সময়ে ম্যাকওএস ২৬, আইপ্যাড ২৬, ওয়াচওএস ২৬, টিভিওএস ২৬-এর জন্য পাবলিক বিটা ও হোমপ্যাডের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য আপডেট প্রকাশ করবে।

আইওএস ২৬ আপগ্রেডটি লিকুইড গ্লাসের নতুন নকশার পাশাপাশি স্প্যাম কল থেকে বর্ধিত সুরক্ষা, নতুন গেমস অ্যাপ, অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের আপডেট ও আরো অনেক কিছুর আমূল পরিবর্তন ও নতুন অনুভূতি নিয়ে আসবে।

সূত্র : টেক রাডার

মন্তব্য

প্রথমবারের মতো এআই দিয়ে তৈরি দৃশ্য ব্যবহার করল নেটফ্লিক্স

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
প্রথমবারের মতো এআই দিয়ে তৈরি দৃশ্য ব্যবহার করল নেটফ্লিক্স
ফাইল ছবি : এএফপি

নেটফ্লিক্স তাদের টেলিভিশন শোতে প্রথমবারের মতো উৎপাদনক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) তৈরি ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ব্যবহার করেছে।

স্ট্রিমিং জায়ান্টটির সহ-প্রধান নির্বাহী টেড সারান্দোস বলেছেন, ‘আর্জেন্টিনার বিজ্ঞান কল্পকাহিনি শো ‘দি এটারনাউট’ একটি ভবন ধসের দৃশ্য তৈরি করতে প্রম্পটের ওপর ভিত্তি করে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও ও ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রযুক্তি প্রযোজনা দলকে দ্রুত ও কম খরচে দৃশ্য সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছে।’

অন্যদের কাজ ব্যবহার করে তাদের সম্মতি ছাড়াই কনটেন্ট তৈরি করায় ও মানুষের কাজ প্রতিস্থাপন করার আশঙ্কায় বিনোদন শিল্পে উৎপাদনক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেশ বিতর্কিত।

 

সারান্দোস এমন একটি সময়ে এ মন্তব্য করলেন যখন, জুন মাসের শেষ পর্যন্ত তিন মাসে নেটফ্লিক্সের আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মুনাফা ২.১ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩.১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

‘দি এটারনাউটে’ ব্যবহৃত জেনারেটিভ এআই প্রযোজনা দলকে বুয়েনস এইরেসে ভবনধসের একটি দৃশ্য স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ গুণ দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছে সারান্দোস।

সারান্দোস বলেন, ‘এটি আসলে পর্দায় প্রদর্শিত নেটফ্লিক্সের একটি অরিজিনাল সিরিজ বা ছবিতে প্রথম এআই তৈরি দৃশ্য।

তাই নির্মাতারা এর ফলাফলে রোমাঞ্চিত।’

২০২৩ সালে হলিউড ধর্মঘটের সময় উত্থাপিত প্রধান উদ্বেগগুলোর মধ্যে এআই ছিল অন্যতম। তিন মাসের ওই ওয়াকআউটের সময় স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড-আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টস ইউনিয়ন এআই ব্যবহারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছিল।

চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই এআইকে শিল্পের জন্য অবমাননাকর বলে অভিহিত করেছেন।

সিঙ্গাপুর অ্যানিমেশন স্টুডিও ক্রেভএফএক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেভিয়ার ইউন বলেছেন, ‘নেটফ্লিক্সের এআই গ্রহণ কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়, কারণ অন্য বড় স্টুডিওগুলোও প্রযুক্তিটিকে স্বাগত জানাচ্ছে। এটা সময়ের ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে। এআই অবশ্যই ছোট স্টুডিওগুলোকে বড় বাজেটের ভিজ্যুয়াল তৈরির সুযোগ করে দেওয়ার দরজা খুলে দিচ্ছে। তবে অবশেষে এআই নয়, শিল্পীই সিদ্ধান্ত নেন চূড়ান্ত ছবিতে কী থাকবে।’

সূত্র : বিবিসি

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ