<p>সত্তরের দশকের শুরু থেকে বলিউডে এক নতুন অ্যাকশন হিরোর আগমন। তিনি ধর্মেন্দ্র। একের পর এক সুপারহিট অ্যাকশন ফিল্ম উপহার দিয়েছেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ফুল অউর পাত্থার, আখে, রাজা রানি, লোফার, ইয়াদো কি বারাত, ধারাম-ভীর, শোলে’র মতো কালজয়ী সিনেমা তার নামের পাশে। বিরাট এক স্টারডম উপভোগ করেছেন এই অভিনেতা।</p> <p>ধর্মেন্দ্রর পর সেই জায়গা দখল করেন তার ছেলে সানি দেওল। চলচ্চিত্র অঙ্গনে সুপারস্টার বাবা-মায়ের সঠিক উত্তরসূরি হওয়াটা কঠিনই বটে। তবে সানি দেওল নিজেকে ব্যতিক্রম প্রমাণ করেছেন। এমনকি পিতা ধর্মেন্দ্রকেও ছাড়িয়ে যান এই অভিনেতা। আশির পরে নব্বইয়ের পুরোটা দশকজুড়ে সানি দেওল ছিলেন বলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী নায়ক। যেকোনো চিত্রনাট্য লেখা হলে তা আগে সানির কাছেই যেত, এমন অবস্থান তৈরি করেছিলেন এই অভিনেতা। ঘায়েল, ঘাতক, জিৎ, গাদার, বর্ডার, দামিনি, ডর, মা তুঝে সালাম-এর মতো ব্লকবাস্টার সব চলচ্চিত্র তার নামের পাশে। বলিউডের বক্স অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে একাই রাজত্ব করেছেন তিনি।</p> <figure class="image"><img alt="1" height="400" src="https://assets.telegraphindia.com/telegraph/2023/Oct/1697457228_deol.jpg" width="600" /> <figcaption><sub><em>দেওল পরিবার</em></sub></figcaption> </figure> <p>সানির পাশাপাশি নব্বইয়ের দশকের দিকে চলচ্চিত্রে পা রাখেন তার ছোট ভাই ববি দেওল। বড় ভাইয়ের মতো বিশাল স্টারডম না পেলেও আলাদা একটা ফ্যানবেজ তৈরি করেন এই অভিনেতা। দিয়েছেন একের পর এক হিট চলচ্চিত্র। সোলজার, গুপ্ত, বারসাত, বাদল, বিচ্ছু’র মতো সিনেমা রয়েছে তার নামের পাশে। রোমান্টিক হিরোর তকমাও জুটিয়ে নেন নিজের সঙ্গে। সঙ্গে বাবা-ভাইয়ের মতো অ্যাকশন ইমেজ। ববি দেওলও তার সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হন।</p> <p>তবে এসব অতীতের গল্প। মাঝের সময়টা দেওল পরিবারের জন্য বিষাদময় কেটেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রায় দেড় দশক দেওল পরিবার বলিউডে তেমন প্রভাব রাখতে পারেননি। সানি দেওল তো মুখই ফিরিয়ে নিয়েছিলেন ক্যামেরার জগত থেকে। ববি দেওলও ধীরে ধীরে হারিয়ে যান। একটা সময় কাজহীন হয়ে পড়েন এই অভিনেতা। তবে ২০০৭ সালে ‘আপনে’ দিয়ে ফের প্রত্যাবর্তন ঘটে দেওল পরিবারের। সিনেমাটি বক্স অফিসে হিট হয়। এরপর ২০১১ সালে তিনজন আবার একফ্রেমে হাজির হন ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা’ দিয়ে। সেটিও বক্স অফিসে হিট হয়। তারপর ২০১৩ সালে সিনেমাটির সিক্যুয়েল নিয়ে আসেন বাপ-বেটা তিনজন। সেই সিনেমাটিও ভালো সাড়া পায় বক্স অফিসে।</p> <p>দীর্ঘদিন পর সাফল্য পেলেও ফের খেই হারিয়ে ফেলেন দেওল পরিবার। নিয়মিত আর দেখা যায়নি পর্দায় তাদের। তবে ভিন্ন ভিন্ন সিনেমায় হাজির থেকেছেন ধর্মেন্দ্র ও ববি দেওল। সানি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। ২০১৩ সালে সানি দেওল ‘সিং সাব দ্য গ্রেট’ নিয়ে ফিরলেও সিনেমাটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ২০১৬ সালে পর্দায় আনেন তার ক্যারিয়ার সেরা চলচ্চিত্র ‘ঘায়েল’-এর সিক্যুয়েল। তবে সেটিও বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।</p> <p>তবে ২০২৩ সাল যেন দেওল পরিবারের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। এই বছর দেওল পরিবারের সবাই নিজেদের স্টারডম ফিরে পেয়েছেন। পর্দায় ফিরেছেন আর দর্শকহৃদয়ে ঝড় তুলেছেন। দেওল পরিবারের উপস্থিতির আলাদা আলাদা তিনটি চলচ্চিত্রই বক্স অফিসে সুপারহিট! একই বছরে বাবা-ছেলে তিনজন তাদের পুরনো ইমেজে ফিরেছেন, যা ভক্তদের জন্যও দারুণ এক বার্তা বয়ে এনেছে।</p> <figure class="image"><img alt="1" height="338" src="https://static.toiimg.com/photo/msid-101184968/101184968.jpg" width="600" /> <figcaption><sub><em>‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’তে ধর্মেন্দ্র</em></sub></figcaption> </figure> <p>ধর্মেন্দ্র, আইকনিক অ্যাকশন হিরো, ২০২৩ সালে দেখিয়ে দিলেন যে বয়স কেবল একটি সংখ্যা। ৮৭ বছর বয়সে, তিনি ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’তে অষ্টাদশী দাদার চরিত্রে অভিনয় করে পুনরায় দর্শক হৃদয় জয় করেছেন। পর্দায় তার অনস্ক্রিন ক্যারিশমা ধরে রেখেছিলেন এই অভিনেতা। শাবানা আজমির সাথে তার অনস্ক্রিন চুম্বনে শিরোনামও হয়েছেন। করণ জোহর পরিচালিত সিনেমাটি চলতি বছর অন্যতম একটি হিট সিনেমা। বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ৩৪০ কোটি আয় করেছে এটি। এতে মুল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রণবীর সিং ও আলিয়া ভাট। তবে ধর্মেন্দ্র প্রশংসা কুড়িয়েছেন আলাদা করে।</p> <figure class="image"><img alt="1" height="338" src="https://variety.com/wp-content/uploads/2023/08/Gadar-2.jpg" width="600" /> <figcaption><em><sup>‘গাদার ২’তে সানি দেওল</sup></em></figcaption> </figure> <p>২০২৩ সালে ‘গাদার ২’-এর মেগা ব্লকবাস্টার সাফল্যের মাধ্যমে সানি দেওল ফিরেছেন স্বমহিমায়। বহু বছর পর প্রত্যাবর্তন করেই ফের বক্স অফিসে সুনামি তুললেন সানি দেওল। চলতি বছর সানি দেওলের মুক্তিপ্রাপ্ত  ‘গাদার ২’ আয় করেছে বক্স অফিসে। ভারতীয় বক্স অফিসে ৫২৬ কোটির মতো আয় করেছে সিনেমাটি। হিন্দি চলচ্চিত্রে সর্বোচ্চ আয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ‘গাদার ২।’ বিশ্বব্যাপী ৬৯০ কোটির মতো আয় করে নিয়েছে এটি। সামনে এই অভিনেতার হাতে রয়েছে একাধিক প্রজেক্ট। শোনা যাচ্ছে ‘বর্ডার ২’ এবং ‘লাহোর ১৯৪৭’ নামে প্রজেক্ট ইতোমধ্যেই হাতে নিয়েছেন তিনি। সর্বোচ্চ ৫০ কোটি পারিশ্রমিকও নিতে চলেছেন সানি দেওল।</p> <figure class="image"><img alt="1" height="338" src="https://www.masala.com/cloud/2023/09/29/SLvgdpZP-image-1024x576.png" width="600" /> <figcaption><sup><em>‘অ্যানিমেল’-এ ববি দেওল</em></sup></figcaption> </figure> <p>রণবীর কাপুরের সঙ্গে ‘অ্যানিমেল’ দিয়ে নিজের ফর্মে ফিরেছেন ববি দেওল। শুধু ফেরাই নয়, একে বলে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন! মুক্তির মাত্র পাঁচ দিনে ২৮৩ কোটি আয় করে নিয়েছে সিনেমাটি। যা ববি দেওলের ক্যারিয়ার সেরা সিনেমা হতে যাচ্ছে। অ্যানিমেলে ববির লুক, অভিনয় আর হিংস্রতা, সবকিছুই তুমুল প্রশংসা পাচ্ছে দর্শকদের কাছে। অতিরিক্ত ভায়োলেন্সের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনেমাটির নিন্দা হলেও ববি দেওল পাচ্ছেন পূর্ণ সমর্থন ভক্তদের। যদিও বাবা ধর্মেন্দ্র আর ভাই সানি দেওলের মতো দীর্ঘ বিরতিতে ববি ছিলেন না। অ্যানিমেলের আগে ‘আশ্রম’ সিরিজ দিয়েও ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন এই অভিনেতা। মাঝে করেছেন সালমান খানের সঙ্গে ‘রেস ৩’ এবং অক্ষয় কুমারের সঙ্গে ‘হাউজফুল ৪’। তবে অ্যানিমেল যেন ভিন্ন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে এই অভিনেতাকে। বছরের অন্যতম প্রত্যাশিত সিনেমাটি মুক্তির পরেও এখন তুমুল আলোচিত। আর ববি দেওলও উপভোগ করছেন সেই সাফল্য।</p> <p>পরিশেষে বলাই যায়, বছরটাই দেওল পরিবারের প্রত্যাবর্তনের। একে একে তিন দেওল দর্শক হৃদয়ে ঝড় তুলে ফিরলেন স্ব-মহিমায়। বক্স অফিসেও রাখলেন অবদান। প্রমাণ করলেন, বলিউডে প্রায় ৭ দশক ধরে নিজেদের স্টারডম রাখা দেওল পরিবার হারিয়ে যায়নি। বরং ফিরেছে আরো ভয়ঙ্কর রুপে। দর্শকদের জন্য, পরিবারের জন্য, বলিউডের বক্স অফিসে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করার জন্য দেওল পরিবারের প্রত্যাবর্তন সিনেমাপ্রেমীদের কাছেও বেশ স্বস্তির বার্তা হয়েই এসেছে।</p>