<p>করোনা তাণ্ডবে বিধ্বস্ত দেশ। ক্রমেই বিপর্যয় বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা, সংক্রমণ। গত দেড় বছর ধরে চলা সংকট কোনোভাবেই নিরসন হচ্ছে না বরং ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। এর ভয়াবহতার আঁচ পড়ছে হ্যান্ড টু মাউথ শ্রেণির ওপর। কেননা দিন এনে দিনে খেয়ে তাদের দিনযাপন সম্পন্ন হয়। সেখানে ৭ দিনের খাবার যোগাড় করে রাখার সক্ষমতা কতটুকু কিংবা ১৪ দিনের অথবা মাসের? </p> <p>এমন সময়েই সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সরকারি ত্রাণ হয়তো পেতে পারে অনেকে। তবে এ ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগই জরুরি বলে মনে করছেন তারা। করোনা বিপর্যয় মোকাবেলায় বলিউড দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রীতিমতো। সোনু সুদ রীতিমতো ঈশ্বরতুল্য সম্মান পাচ্ছেন ভারতে। শাহরুখ, সালমান করোনা মোকাবেলায় যে সব উদ্যোগ নিয়েছেন, তা অনন্য। একেকটি উদ্যোগের পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন। নিজ হাতে প্রথম সারির কভিডযোদ্ধাদের খাবার বিতরণ করেছেন বলিউড অভিনেতা সালমান খান।</p> <p>করোনায় সাধারণ মানুষের জন্য ২৮ কোটি টাকা অনুদান দিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন অক্ষয় কুমার। আমির খান প্রধানমন্ত্রীর তহবিল, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের ত্রাণ তহবিল ও বলিউডের কাজ করা স্বল্প আয়ের কর্মীদের ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন। বলিউডের তারকাদের দান-সহায়তার ফিরিস্তি লিখতে গেলে তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।</p> <p>বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের শীর্ষ তারকারা কতটা দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষের পাশে? ছোট ও বড় পর্দার কয়েকজন তারকার করোনাকালের কার্যক্রম একটু পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এদের তৎপরতা সেভাবে চোখে না পড়লেও অনেকেই দাবি করছেন তারা গোপনে সহায়তা করেছেন। </p> <p>এ সময়ের বড় পর্দার শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খানকে করোনাকাল বাইরে দেখা যায়নি। তিনি লকডাউনে ঘরবন্দি অবস্থায় ছিলেন। সাধারণ মানুষ কিংবা জুনিয়র চলচ্চিত্রশিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। তবে শাকিব খানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, শাকিব খান একটি এতিমখানা চালান। সেটা দেখাশোনা করেছেন। এ ছাড়াও নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সহায়তা করেছেন। একই কথা জানালেন বাপ্পী চৌধুরী। প্রকাশ্যে কোনো তৎপরতায় না দেখা গেলেও গোপনে সহায়তা করেছেন এই অভিনেতা- এমনটাই জানালেন তিনি। তবে গত রমজানে চিত্রনায়িকা অধরাকে নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ইফতার করতে দেখা যায়। </p> <p>ঢাকাই চলচ্চিত্রের আরেক শীর্ষ নায়ক আরেফিন শুভকে দেখা যায়নি কোনো ধরনের সহায়তা কার্যক্রমে। দেখা যায়নি সিয়াম আহমেদকে। ছোটপর্দার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বকে দেখা যায়নি সহায়তার হাত নিয়ে কোথাও এগিয়ে যেতে।</p> <p>একইভাবে আফরান নিশোকে করোনাকালে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। দেখা যায়নি তানজিন তিশা কিংবা সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীকে। তবে অভিনেতা ও গায়ক তাহসান খানের তৎপরতা দেখা গেছে। তিনি নিজের কিছু দুর্লভ বস্তু নিলামে দিয়ে সেই অর্থ ব্র্যাকের অসহায়দের খাবার সরবরাহের ফান্ডে দিয়েছেন। </p> <p>চলচ্চিত্রের নায়িকা বুবলীকে দেখা না গেলেও অপু বিশ্বাসকে বেশ কয়েকধাপে দরিদ্র মানুষদের সহায়তা করতে দেখা গেছে। চিত্রনায়িকা পরীমনিকে প্রকাশ্যে কোনো রকম তৎপরতায় দেখা না গেলেও বিগত দুটি কোরবানি ঈদে তিনি অসহায় শিল্পীদের জন্য কোরবানি দিয়েছেন। চিত্রনায়িকা অধরা খান, নিপুণ সরাসরি ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন মাঠপর্যায়ে। </p> <p>ঢাকাই চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডিপজল করোনাকালে সব সময় সহায়তা করে গেছেন। রাজধানীর এফডিসিতে অসহায় শিল্পীদের মাঝে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ধাপে ধাপে ত্রাণ বিতরণ করেছে। এই ত্রাণের নেপথ্যে অন্যতম ভূমিকা ছিল ডিপজলের। এ ছাড়াও সংগঠনের জায়েদ খানের সমন্বয়ে অসহায় শিল্পীরা পেয়েছেন ত্রাণ। জায়েদ খানের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেক প্রবীণ শিল্পীরা।</p> <p>তবে চলচ্চিত্র ও দেশের ছোটপর্দার অনেকেই মনে করেন যারা করোনাকালে এগিয়ে এসেছেন- সেটা খুবই ভালো উদ্যোগ। যারা গোপনে, অপ্রকাশ্যে সহায়তা করেছেন সেটা আসলে কতটা সঠিক তারাই ভালো জানেন। কোনো তারকা যদি একটু জোরালোভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায় বা উদ্যোগ নেয় তাহলে তাদের ভক্তরাও কি জানবে না বিষয়টি? এমন প্রশ্নের মাঝেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই দুঃসময়ে যে সব তারকার তূলনামূলক আয় বেশি তাদের অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো উচিত। অন্তত অক্সিজেন সংকট শুরু হতে পারে, সিলিন্ডার সরবরাহ কিছু মানুষের দুবেলা খাদ্যের ব্যবস্থা সমন্বিতভাবে করতে পারেন।</p>