<p>তার পুরো নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। বিশ্ববাসী চেনে মাইকেল জ্যাকসন বা কিং অফ পপ নামে। পপ সঙ্গীতে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছিলেন মাইকেল। উন্মাদনা, বিস্ময়কর গায়কী আর নাচ—এই সব কিছু এক করলে যা দাঁড়ায়, শ্রোতাদের কাছে তাই মাইকেল জ্যাকসন। ব্যক্তি জীবন থেকে সঙ্গীতের বর্ণিল অধ্যায়, সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন মানুষের আগ্রহের চূড়ান্তে। সহজাত প্রতিভা আর উদ্ভট খেয়াল দুটোই ছিল তার।</p> <p>পপ, আরএন্ডবি, রক, সোল, ফাঙ্ক অথবা ডিস্কো—নানা জনরায় কাজ করেছেন মাইকেল। লিখেছেন অসাধারণ কিছু গানও। জ্যাকসন পরিবারের অষ্টম সন্তান ছিলেন তিনি। ১৯৬৩ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে পেশাদার সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। 'জ্যাকসন ফাইভ' নামের একটি ব্যান্ডে ভাইদের সঙ্গে গাইতেন মাইকেল। ১৯৭১ সালে শুরু করেন একা পথচলা। এই সময় প্রকাশিত হয় তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম 'গট টু বি দেয়ার।' এরপর থেমে থেমে চলা।</p> <p>১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় মাইকেলের ষষ্ট অ্যালবাম 'থ্রিলার'। এরপর সবকিছু বদলে যায়। মাইকেল পৌঁছে যান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তার গাওয়া 'বিট ইট', 'বিলি জিন', 'থ্রিলার' রেকর্ড সৃষ্টি করে। মাইকেলই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন গায়ক—যিনি এমটিভিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বলা হয়ে থাকে, তার মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমেই এমটিভির প্রসার ঘটে।</p> <p>১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয় 'থ্রিলার' গানের মিউজিক ভিডিও। ১৪ মিনিটের এই মিউজিক ভিডিওতে মাইকেলকে 'ওয়্যারউলফ' (পশ্চিমা উপকথার কাল্পনিক দানব) বেশে মৃতদেহদের সঙ্গে নাচতে দেখা যায়। এর মাধ্যমে মিউজিক ভিডিও সম্পর্কে সেসময়কার ধারণা বদলে দেন মাইকেল।</p> <p>গানের তালে তালে মাইকেলের নাচের মুদ্রা শ্রোতাদের নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছিল। তার জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রয়েছে রবোট ও মুনওয়াক। মুনওয়াক হল এক ধরনের দৃষ্টিভ্রম; সামনের দিকে হেঁটে যেতে যেতে পেছনে যাওয়ার ভঙ্গিমা। মাইকেল সুনিপুণ অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন নাচের পাশাপাশি। এজন্য সারাবিশ্বের  নৃত্যশিল্পীরা তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন।</p> <p>ব্যাক্তি জীবনেও নানা এক্সপেরিমেন্ট করেছেন মাইকেল। চেহারায় প্লাস্টিক সার্জারি করে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য কোটি কোটি ডলার দান করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে গড়েছিলেন লিউকেমিয়া এবং ক্যান্সার ইনস্টিটিউট। ১৯৯৬ সালে তার অর্থ দিয়ে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।</p> <p>বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত রেকর্ডের মধ্যে মাইকেলের ৫টি অ্যালবাম  রয়েছে। অ্যালবামগুলো হল, অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টোরি (১৯৯৫)। দুইবার রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেইম নির্বাচিত হন মাইকেল। ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী বলা হয় তাকে। পেয়েছেন ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার। সঙ্গে ৭৫ কোটি অ্যালবাম বিক্রয়ের রেকর্ড তো রয়েছেই।</p> <p>পপ-রক শিল্পী হিসেবে মাইকেলই প্রথম 'ড্যান্স হল ফেম' নির্বাচিত হয়েছিলেন। নানা কেলেঙ্কারিতে জড়ালেও প্রায় ৪০ বছর পৃথিবী মাতিয়েছেন মাইকেল। মৃত্যুর আগে ব্যস্ত ছিলেন 'দিস ইজ ইট' কনসার্ট নিয়ে। দিন-রাত মহড়া করেছিলেন এজন্য। কিন্তু কনসার্টের আগেই ৫০ বছর বয়সে ২০০৯ সালের ২৫ জুন তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়।</p>