<p>লবণ আমদানি নয়, বরং রপ্তানির দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সদস্যরা। বুধবার (২ অক্টোবর) কক্সবাজারে একটি আবাসিক হোটেলে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি তুলে এই কথা বলেন তারা। </p> <p>তাদের দাবি, বাংলাদেশে যে পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়, তাতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন রপ্তানি করা যাবে। সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন লবণ চাষিরা। </p> <p>এতে লবণ চাষিরা বলেন, ‘লাখ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদিত লবণ মাঠেই পড়ে রয়েছে। অথচ লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে সরকারকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বারবার লবণ আমদানির অপচেষ্টা চালান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন লবণ চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের লবণশিল্প।’ </p> <p>সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের সর্ববৃহৎ শ্রমনির্ভর শিল্প লবণশিল্প । বাংলাদেশে শুধু কক্সবাজার জেলায় ৯০ শতাংশ ও ১০ শতাংশ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৯০০ বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় লবণ উৎপাদন হয়। যা দিয়ে দেশের লবণের চাহিদা পূরণ করে। </p> <p>তাদের মতে, লবণ উৎপাদন থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত অন্তত ১০ লাখ মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত এবং এই লবণশিল্প জিডিবিতে ১০ শতাংশ অবদান রাখছে। কক্সবাজার জেলা এবং বাঁশখালীতে অন্তত ৫০ হাজার লবণ চাষিসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব এলাকার তিন লাখ মানুষ লবণ উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। </p> <p>লবণ চাষিরা বলেন, সরকার ২০২২ সালে জাতীয় লবণ নীতি প্রণয়ন করার সময় দেশে লবণের চাহিদা অতিরিক্ত দেখানো হয়, অর্থাৎ ২০২৪ সালের চাহিদা দেখানো হয় ২৫.২৮ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু সেই হিসাব ২২ লাখ টনের বেশি হওয়ার কথা নয়। </p> <p>তাদের মতে, জাতীয় লবণ নীতি ২০১১ বা ২০১৬-এর আলোকে ২০২২ সালে শুধু শিল্প খাতে লবণের চাহিদা ৪.৬০ লাখ টন, কিন্তু জাতীয় লবণ নীতি ২০২২ অনুযায়ী তা হলো ৬.৯২ লাখ টন। ২০১১ সালের নীতিতে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি ধরা হলেও ২০২২ সালের লবণনীতিতে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি ধরা হয়েছে, যা অসম্ভব। ২০২৪ সালে শিল্প খাতে চাহিদা ১০.২০ লাখ টন (প্রসেস লসসহ) এবং ২০২৫ সালে তা বৃদ্ধি হয় ১১.৮২ লাখ টন। বাস্তবতা হলো, এই খাতে চাহিদা কোনোক্রমেই ৭ লাখ টনের বেশি নয়। </p> <p>চাষিদের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিসিকের হিসাব অনুযায়ী, লবণ মাঠে ৭.৭৮ লাখ টন এবং মিল পর্যায়ে ২.৩৬ লাখ টন, মোট ১০.১৪ লাখ টন লবণ মজুদ আছে। বাস্তবতায় তা আরো বেশি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে লবণ বেচাকেনাও অনেক কম, দামও গত বছরের চেয়ে মণপ্রতি প্রায় ২০০ টাকারও কম। এই বিক্রয়মূল্যে উৎপাদন খরচ তোলাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লবণ চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আগামী নভেম্বর মাসে নতুন লবণ উৎপাদন করার জন্য মাঠ প্রস্তুতিতে যেতে হবে, কিন্তু এত মজুদ লবণ নিয়ে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। পাশাপাশি আর্থিকভাবেও অনটনের মধ্যে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন তারা।</p> <p>লবণ চাষিদের দাবি, অতিরিক্ত লবণ বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাতে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আসবে, অন্যদিকে লবণ চাষিরাও লবণের ন্যায্য মূল্য পাবেন।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে লবণ চাষিদের জীবন-মান উন্নয়নে ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।</p> <p>লবণ চাষিদের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি ও আগামীতে আরো বেশি লবণ উৎপাদন করার উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্য অতি দ্রুত কমপক্ষে ৩ লাখ টন লবণ রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে। </p> <p>লবণের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য বৈদ্যুতিক মোটরের ব্যবহার সহজলভ্য করা, জমির লিজমানি কমানো এবং প্রকৃত প্রান্তিক লবণ চাষিকে খাসজমি বরাদ্দ প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করাতে হবে। </p> <p>অসুস্থ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিদের সরকার কর্তৃক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p>বর্ষা মৌসুমে প্রান্তিক লবণ চাষিদের ১০ টাকা কেজি মূল্যে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। </p> <p>বিসিকের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ চাষে প্রকৃত লবণ চাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।</p> <p>দেশে লবণের খাত ভিত্তিক চাহিদা নিরূপণের জন্য পূর্ণাঙ্গ জরিপ করে জাতীয় লবণ নীতি ২০২২-এর সংশোধন করতে হবে।</p> <p>জরিপের মাধ্যমে লবণ জমির পরিমাণ চিহ্নিত করাসহ লবণ চাষিদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেইস তৈরি করে প্রত্যেককে আইডি কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।</p> <p>অল্প জমিতে অধিকতর, পরিপক্ব, দানাদার ও গুণগত মানসম্পন্ন লবণ উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও লবণ চাষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।</p> <p>লবণ চাষিদের নামেমাত্র নয়, বাস্তবিকভাবেই সহজ শর্তে ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রান্তিক লবণ চাষিদের স্বল্পমূল্যে লবণ উৎপাদনের উপকরণ (পলিথিন ও জ্বালানি) সরবরাহ করতে হবে।</p> <p>জাতীয় লবণনীতি অনুযায়ী, সরকারিভাবে এক লাখ টন লবণের বাফার স্টক গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। </p> <p>নামেমাত্র লবণ উপদেষ্টা বোর্ড নয়, লবণশিল্পের নিবিড় তদারকির জন্য পৃথক লবণ বোর্ড গঠন করতে হবে।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শাহাব উদ্দিন। এ ছাড়া বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম হাসান, সহসভাপতি এ কে এম জাফর আলম, মহেশখালী সভাপতি জাফর আলম জফুর, হোয়ানক ইউনিয়ন সভাপতি আরিফ উল্লাহ সিকদার প্রমুখ।</p>