<p>সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আলুর বস্তার মতো শিক্ষার্থীদের লাশ ভ্যানে তুলছেন দুই পুলিশ সদস্য। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্টের এ ঘটনার ভিডিও চিত্রটি ঢাকার আশুলিয়া থানার আশপাশে থেকে করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।</p> <p>ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভ্যানে পড়ে আছে নিহতদের নিথর দেহের স্তূপ। ভ্যানের লাশগুলোকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে জীর্ণ চাদরে। পাশের আরো একটি লাশ ভ্যানে তুলতে দুজন পুলিশ সদস্য হাত ও পা ধরে ভ্যানের স্তূপ করা লাশের ওপর নিক্ষেপ করছেন।</p> <p>স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সকাল থেকেই নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে টানটান উত্তেজনা ছিল পুলিশ ও আ. লীগ নেতাকর্মীদের। সেদিন আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ ও আ. লীগ নেতাকর্মীরা বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকেই ঘটনাস্থলেই মারা যান। পুলিশের ধাওয়ায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা পিছু হটলে নিহতদের নিথর দেহগুলো পুলিশ একটি ভ্যানে স্তূপ করে রাখে। দুপুরের পর শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেললে পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে আবারও নির্বিচারে গুলি চালায়। তাদের ছোড়া গুলিতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।</p> <p>স্থানীয়রা আরো জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বিকেলের দিকে এসব মরদেহ পুলিশ সদস্যরা একটি ভ্যানে তুলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। গোপনে ধারণ করা ওই ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, গণহত্যাকাণ্ডের পারিপার্শ্বিক প্রমাণ মুছে ফেলতে রহস্যজনকভাবে রাতারাতি থানার পাশের সামনের দেয়ালের রং মুছে ফেলা হয়েছে।</p> <p>এ ছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকেন এমন দুজন দাবি করেন, ভিডিওতে দেয়ালে থাকা পোস্টারে যাকে দেখা গেছে, তিনি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ভুঁইয়া। তবে গণহত্যার বীভৎস সেই চিত্র মুছে ফেলার প্রচেষ্টায় সেই পোস্টার এখন সরিয়ে ফেলা হয়েছে।</p> <p>এ ছাড়া ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ভ্যানে তোলা কয়েকটি মরদেহের স্তূপের পাশে আরো কয়েকজন পুলিশকে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেছে। তাদের একজনের পরিচয় স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছে। তাদের তথ্য মতে, ওই পুলিশ সদস্য ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে আত্মগোপনে চলে যান ওই পুলিশ সদস্যরা। </p> <p>এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব ওই পুলিশ সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, আরাফাত হোসেনের গ্রামের বাড়ি বরিশাল এলাকায়। তিনি প্রায় দুই বছর আগে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর আরাফাত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। </p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা জেলা পুলিশের এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহিল কাফী স্যারের নির্দেশে গত ৫ আগস্ট আমরা আশুলিয়ার দায়িত্বে ছিলাম। আল্লাহর রহমতে ওই দিন আমরা প্রাণে বেঁচে যাই। না হয় আমাদেরকেও জীবন দিতে হতো।’ </p> <p>লাশ ভ্যানে তোলার বিষয়ে জানতে আরাফাত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। </p> <p>এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, ‘ভিডিওতে আমার কোনো ছবি নেই। এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ওই দিন পুলিশের গণহত্যার চিত্রটি এমন পর্যায় পৌঁছেছিল যে আন্দোলনকারীরা নিহত দুই পুলিশ সদস্য রাজু আহমেদ ও এ এস আই রফিকুল ইসলামের লাশ আশুলিয়ার ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখেন।</p> <p>রিউমর স্ক্যানার জানায়, নিথর দেহের স্তূপের ভাইরাল ভিডিওটি আশুলিয়া থানাসংলগ্ন এলাকার ঘটনা। ৫ আগস্ট বিকেলে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকেন এমন দুজন দাবি করেন, ভিডিওর দেয়ালে যার পোস্টার দেখা যায় তিনি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল হোসেন ভুঁইয়া। দেয়ালের এই পোস্টার এখন আর নেই। ৫ আগস্টের পরপরই সব দেয়ালে নতুন রং করা হয়েছে।</p>