<p>কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে গতকাল বুধবার ভোররাতে পাহাড় ও দেয়াল ধসের ঘটনায় আট রোহিঙ্গাসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারি বৃষ্টির কারণে পাঁচটি পৃথক শিবিরে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।</p> <p>নিহতদের মধ্যে আটজন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় দুজন রয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন নারী এবং ছয়জন পুরুষ। নিহতদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ও একজন স্কুলছাত্র রয়েছে।</p> <p>কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাহাড় ও দেয়াল ধসের ঘটনায় ৮ নম্বর শিবিরে দুজন, ৯ নম্বর শিবিরে দুজন, ১ নম্বর শিবিরে একজন, ১০ নম্বর শিবিরে একই পরিবারের চারজন এবং ১৪ নম্বর শিবিরে একজনের মৃত্যু হয়েছে।</p> <p>পাহাড়ধসে নিহতরা হলেন আবু মেহের (২৪), জয়নাব বিবি (১৯), আবুল কালাম (৫৭), সলিমা খাতুন (৪২), আনোয়ারা বেগম (১৮), মো. হাফেজ (৩৫) ও সালমান (৩৩)। এ ছাড়া নিহত স্থানীয় দুজনের মধ্যে রয়েছে হোসেন আহমদ (৫০) এবং স্কুলছাত্র আবদুল করিম (১২)।</p> <p>হোসেন আহমদ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা। তিনি রোহিঙ্গা নারী আনোয়ারা বেগমকে বিয়ে করেন এবং দুর্ঘটনার সময় শিবিরে ছিলেন। অন্য একটি শিবিরে রোহিঙ্গা নারী পুতুনি (৪৫) দেয়ালধসে নিহত হন।</p> <p>উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে পাহাড়ধসের ঘটনায় এসব মৃত্যুর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।</p> <p>স্থানীয় রোহিঙ্গা লোকজন সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতভর ভারি বর্ষণ হয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফ সীমানায় ভারি বর্ষণ চলছিল। এতে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যায়। ভোররাতের দিকে শিবিরগুলোর পাহাড়ি পাদদেশের মাটি ধসে যেতে থাকে। এতে তিনটি শিবিরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।</p> <p>কক্সবাজারের আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ১২ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।</p> <p>কক্সবাজারের আরআরআরসি এবং সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি তিনটি শিবিরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। সেখানে রাতে ভারি বর্ষণ হয়েছে বলে শুনেছি। তবে বৃষ্টির এমন তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। এ কারণে লোকজনকে নিরাপদে সরানোরও ব্যবস্থা করা হয়নি।’</p> <p>পাহাড় ও দেয়াল ধসের ঘটনার বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে দুই বছর ধরে শিবিরগুলোতে সংস্কারকাজ তেমন হয়নি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) শিবিরগুলোর দেখভালে রয়েছে, কিন্তু তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ করার মতো পর্যাপ্ত তহবিল নেই বলে জানিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবই পাহাড়ধসের মূল কারণ বলে জানান তিনি।</p> <p>উখিয়ার ইউএনও তানভীর হোসেন বলেন, ‘আমি শিবিরগুলো পরিদর্শন করেছি। বিকেল পর্যন্ত মোট ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। এর মধ্যে উখিয়ার বালুখালী ৯ নম্বর শিবিরে পাহাড়ধসে স্বামী-স্ত্রী মারা গেছেন। অন্যদিকে ১ নম্বর শিবিরের ওয়েস্টে এক রোহিঙ্গা পরিবার একটি অবৈধ দেয়াল নির্মাণ করে। সেই দেয়াল ধসে মারা গেছেন একজন রোহিঙ্গা নারী।’</p> <p>তিনি জানান, পাহাড়ধসের ঘটনায় স্থানীয় এক স্কুলছাত্রও মারা গেছে। নিহত আবদুল করিম স্থানীয় থাইনখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।</p> <p>পাহাড়ধসের অন্যতম প্রধান কারণ সম্পর্কে কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারওয়ার আলম বলেন, বন বিভাগের এক লাখ ১০ হাজার একর বনভূমির মধ্যে উখিয়া-টেকনাফের সাত হাজার একর বনভূমিতে রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে। শিবিরগুলোতে আগে গাছগাছালি ছিল। তখন এভাবে ওই এলাকায় পাহাড়ধস হতো না। কিন্তু রোহিঙ্গাদের কারণে সেখানে এখন কোনো গাছগাছালি নেই। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই পাহাড়ে ধস নামে। মূলত গাছ না থাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে।</p>