<p>নীলফামারীতে শনিবার সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জেঁকে বসেছে শীত। দিনভর ঘন কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঁকি দিতে না পারায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কনকনে এমন শীতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ।</p> <p>জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের হাতীবান্ধা গ্রামের অলিয়ার রহমান (৫৫) শহরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন চার সদস্যের পরিবারের খাদ্য জোগাতে তার প্রয়োজন হয় ৫০০ টাকা। আজ শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আয় করেছেন মাত্র ১০০ টাকা।</p> <p>তিনি বলেন, ‘কামাই নাই, সাকাল থাকি হইছে ১০০ টাকা। বাকি সময়টাত আরো ১০০ টাকা হবার পারে। কিন্তু মোর দিনটা চালাইতে দরকার ৫০০ টাকা।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘দিন-রাইত জারোত (শীত) কাটাছি। কামাই নাই, কম্বল কিনিবার পারেছ না। কয়দিন ধরি এত্তি-ওত্তি কম্বলের জন্য ঘুরি বেড়াছ। কিন্তু কোনঠে পাও নাই এলাও’।</p> <p>অলিয়ার রহমান জানান, শীতে গত পাঁচ দিন ধরে চলছে মানুষের দুরবস্থা। দিনভর মিলছে না সূর্যের দেখা। কুয়াশা আর কনকনে শীতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইর হচ্ছেন না। এতে করে আয় কমেছে তার মতো খেটে খাওয়া মানুষের।</p> <p>শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে খড়-কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষকে। দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরের কচুকাটা ইউনিয়নের বন্দরপাড়া গ্রামের কৃষি শ্রমিক ফয়জুল ইসলামকে (৫৪) দেখা গেছে বেশ কিছু লোকজনের সঙ্গে আগুন তাপিয়ে শীত নিবারণ করতে। <br /> এ সময় তিনি বলেন, ‘সাকাল থাকি আলু ক্ষেতোত কাম (কাজ) করিনু। ঠাণ্ডাত হাত দুইটা অবশ হয়া আর কাম করির পারেছ না। শ্যাশোষ আগুন তাপেবার আসিনু’।</p> <p>ওই কৃষি শ্রমিক জানান, প্রচণ্ড শীতের কারণে এলাকায় কৃষিক্ষেত-খামারের কাজে ডাক পড়ছে না শ্রমিকদের। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অনেকে কাজ বন্ধ রেখেছেন। কাজে নামলেও শীতের কারণে মাঠে টিকতে পারছে না শ্রমিকরা।</p> <p>সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হাকিম জানান, শনিবার ওই কার্যালয়ে সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় তিন থেকে চার কিলোমিটার। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। কুয়াশা ও বাতাসের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।</p> <p>তিনি বলেন, ‘এ অবস্থা আরো তিন থেকে চার দিন চলবে। আগামী ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় তাপমাত্রা আরো কমবে’।</p> <p>এর আগে গত সোমবার সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ২, মঙ্গলবার ১৩ দশমিক ৮, বুধবার ১২, বৃহস্পতিবার ১২ এবং শুক্রবার ১১ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।</p> <p>জেলায় গত ২ জানুয়ারি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ঝলমলে রোদে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমতে থাকলেও গত মঙ্গলবার থেকে ঘন কুয়াশা শুরু হয়। শুক্র ও শনিবার দিনভর একবারের জন্যও কুয়াশা ভেদ করে উঁকি দিতে পারেনি সূর্য।</p> <p>জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘ইতিমধ্যে জেলার ছয় উপজেলায় ৪০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। সরকারিভাবে নতুন করে ২০ হাজার কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।’</p>