<p>গাজীপুর-২ (সদর-টঙ্গী) আসনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেল ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিভিন্ন সভায় একপক্ষ আরেক পক্ষকে নিয়ে নানা অভিযোগ তুলছেন।</p> <p>সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় খান টাওয়ারে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের সমর্থনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বক্তব্য দেন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেলকে উদ্দেশ্য করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘১৭ তারিখ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনকে সমর্থন করেন। টঙ্গীকে জিম্মি করেছেন। টঙ্গী মাদক সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।’ </p> <p>নৌকা পেলেই আওয়ামী লীগ হয় না উল্লেখ করে সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘কার কী প্রতীক সেটা বিষয় না। আমরা আওয়ামী লীগ দেখে ভোট দেব।’ জাহাঙ্গীর আরো বলেন, ‘আমার কোনো হার্ট নেই। তাই হার্টফেল করার সুযোগ নেই। আমি কাউকে ভয় পাই না। আমাদের কোনো কর্মী যদি গ্রেপ্তার বা হয়রানির শিকার হয়, তবে কী করতে হবে জানা আছে। এমন হলে গাজীপুর অচল করে দেব।’</p> <p>একই দিন রাতে হায়দরাবাদ এলাকায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে মতবিনিমিয় সভা হয়। এতে বক্তব্য দেন জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান মতি। বক্তব্যে তিনি জাহাঙ্গীর আলমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে নৌকায় চলে আসেন। গাজীপুর থাকতে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। ৭ জানুয়ারির পর দেখা হবে।’</p> <p>মতিউর রহমান আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করতে হলে নৌকায় আসতে হবে। নৌকা আওয়ামী লীগের প্রতীক, শেখ হাসিনার প্রতীক। নৌকা জাহিদ আহসান রাসেলের প্রতীক।’ বক্তব্যে জাহাঙ্গীর আলমের নাম উল্লেখ করে তাঁকে প্রতারক ও মিথ্যাবাদী আখ্যা দেন মতিউর। বলেন, ‘আপনি একজন প্রতারক ও মিথ্যাবাদী। আপনি উত্তরা, গুলশানে গিয়ে কী করেন, তা বললে মানুষ জুতা মারবে।’</p> <p>এর আগে গত সোমবার বঙ্গতাজ মিলনায়তনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের সমর্থনে আয়েজিত কর্মী সভায় জাহাঙ্গীর আলম বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি জাহিদ আহসান রাসেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনার সম্পদ বেড়েছে, ওজন হয়েছে। আর কী চান।’ </p> <p>একই দিন টঙ্গীর ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলবাজার এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী রাসেল। বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ও আজমত উল্লাহ খানের মতো লোকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা হচ্ছে। আমার কোনো দোষ না পেয়ে আমার পরিবার নিয়ে কথা বলা হচ্ছে।’</p> <p>রাসেল আরো বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে নয়জন প্রার্থী আছে। তাদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখেন। তাদের চরিত্র সম্পর্কে জানেন। তারা কী ছিল, এখন কী হয়েছে খবর নেন।’</p> <p>টঙ্গী আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচন ঘিরে রাসেল-জাহাঙ্গীর পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। সম্প্রতি একটি মতবিনিময় সভায় জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের তিনটি আসনে চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। ওই চার স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ও নিজেদের ছবি ব্যবহার করে পোস্টার বানিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন। এ ছাড়া, জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের পাঁচটি আসনেই তাঁর অনুসারী প্রার্থীদের বিজয়ী করার ঘোষণা দিয়েছেন।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে গাজীপুর-২ আসনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে সাধারণ ভোটাররাও ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে আতঙ্কে আছেন।</p> <p>পাল্টপাল্টি বক্তব্যের বিষয়ে জানতে আজ বুধবার জাহিদ আহসান রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম ও মতিউর রহমান মতিকে একাধিকবার মোবাইলফোনে কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি। </p> <p>গাজীপুর-২ আসনে মোট ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন তিনজন। তারা হলেন, নৌকা প্রতীকের জাহিদ আহসান রাসেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ও আলিম উদ্দিন বুদ্দিন। তিনজনই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা।</p> <p><strong>রাসেল-জাহাঙ্গীরকে শোকজ</strong><br /> নির্বাচন ঘিরে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ও লোকসমাগমের জন্য এরই মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ বা শোকজ পেয়েছেন জাহাঙ্গী আলম ও জাহিদ আহসান। </p> <p>গত সোমবার একজন প্রার্থীর পক্ষে হাজারো লোক নিয়ে সভা করায় আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার জাহাঙ্গীর আলমকে শোকজ করে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। এর আগে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর শোডাউন করায় শোকজ পেয়েছেন রাসেল।</p> <p>গাজীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেখানেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের খবর পাচ্ছি, সেখানেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’</p>