<p>শতবর্ষী বৃদ্ধা দিলজান বেওয়া। বয়সের ভারে লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। বৃদ্ধ বয়সে শরীরে নানা রোধব্যাধি বাসাও বেঁধেছে। তাঁর অভাবের সংসারে দেখার মতো কেউ নেই। মুক্তিযুদ্ধের আগেই স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই কেটে গেছে তাঁর যৌবন। জীবনে  সুখ কি তা বুঝতে না পারলেও দুঃখের সীমা জানা নেই এই বৃদ্ধার। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই ছেলের সংসারে তিন বেলা খাবার জুটতো দিলজান বেওয়ার। কিন্তু বিধিবাম! বছর কয়েক আগে দুরারোগ্য ব্যধিতে মারা যায় দুই ছেলে। স্বামী-সন্তান হারানোর পর বড্ড নিঃস্ব এ বৃদ্ধা। এখন একমাত্র মেয়ের সংসারে খেয়ে না খেয়েই দিন চলে তাঁর। একদিকে, বয়সের ভারে হাঁটার শক্তি হারিয়ে বিছানা শয্যায়। আরেক দিকে খাদ্য সংকটের সাথে যুক্ত হয়েছে নানা রোগ-ব্যাধি। ক্রমান্বয়ে বাকশক্তিও যেন লোপ পাচ্ছে এই বৃদ্ধার। </p> <p>এমন দূর্বিসহ জীবনের তিক্ত গল্প কালের কণ্ঠের কাছে বর্ণনা করছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের শতবর্ষী বৃদ্ধা দিলজান বেওয়া। শুধু তাই নয়। মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন মেয়ের সংসারে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। ঘরে এক মুঠো দানা নেই যা দিয়ে চুলো জ্বালাবেন তাঁরা। এই দূর্দিনে দিনে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে এই বৃদ্ধার পরিবারে। ওই বৃদ্ধা উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চাচিয়া মীরগঞ্জ এলাকার মৃত ইদুল শেখের স্ত্রী।</p> <p>অসহায় দিলজান বেওয়া বলেন, মোর দুনিয়াত এখন বেটি (মেয়ে) ছাড়া কাইয়ো নাই। কাম করবার পায় না। তারে সংসার চলেনা মোক নিয়ে বিপদে আছে। ঘরোত কোনো চাউল নাই যে আন্দি (রান্না) খাইমো। দুইদিন থাকি এক বেলা ভাত খায়া আছোম। কেউ মোক একনা কিছুই দিলে না।</p> <p>অপরদিকে,  একই গ্রামের আঁশি বছর বয়সের অসহায় সারফান বেওয়া। তাঁর জীবনের গল্প আরো করুণ। স্বামীকে হারিয়েছেন কয়েক যুগ আগেই। সংসারে তাঁর তিন ছেলে সন্তান থাকলেও যেনো কেউ নেই। সন্তানরা কেউ তার খবর রাখেনা। না খেয়ে থাকলেও খাবার হাতে দাঁড়ায়নি কোন ছেলে। বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু বয়সের ভারে এখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে কিংবা হাঁটতেও পারেন না এ বৃদ্ধা। তবুও সহযোগী হিসেবে লাঠিতেই ভর করে ভিক্ষার ঝুলি হাতে বেরিয়ে পড়েন। শুধু গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তার কর্মপরিধি। সাম্প্রতিক নোভেল করোনা ভাইরাসের কারণে ঘরেই বন্দি এ বৃদ্ধা। এমন দিনে কারো বাড়িতে যেতে পারছেন না তিনি। কার কাছে হাত পাতবেন সেটাও জানা নেই তার। এমনকি ঝোলা হাতে বেড়িয়ে পড়লে তারিয়ে দেন তাকে। কিন্তু ভিক্ষা  না করলে চুলা জ্বলবে না এ বৃদ্ধার। গত দুইদিন ধরেই এক বেলা খেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে এ তার। অনেকের কাছে সাহায্য চেয়ে ফিরে এসেছেন তিনি। বাধ্য হয়ে ঘরেই বসে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন সারফান বেওয়া।তিনিও উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চাচিয়া মীরগঞ্জ এলাকার মৃত মৃত আজগর আলীর স্ত্রী।</p> <p>তিনি বলেন, মুই ভিক্ষা করি খাম ভাই। বেটারা (ছেলে) কেউ মোর খবর নেয় না। না খায়া থাকলেও ভাত দেয় না মোক। মুই মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে থাকি কিছুই পাম নাই। দুইদিন থাকি এক বেলা ভার আর উটি (রুটি) খায়া আছোম। সরকার কি হামাক কিছুই দিবার নয়?</p>