<p>‘বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে যে পরিমাণ শিশু-কিশোর রয়েছে, পৃথিবীর অনেক দেশে এত জনসংখ্যা নেই।’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন মতে, ২০২৩ সালে ৫ থেকে ২৪ বছরের ৪৯.৭২ শতাংশ বা ২ কোটি ৫৭ লাখ শিশু-কিশোর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে ছিল। </p> <p>আজ বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুর ৩টায় গুলশানে সিক্স সিজন হটেলে গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময়সভায় এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ‘বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার চ্যালেঞ্জ : সমাধান কোন পথে’ শীর্ষক এই মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। </p> <p>সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘পিডিইপি নামক সেকেন্ড চান্স এডুকেশন প্রোগ্রাম বা প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে। এ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা দেখি না। দারিদ্র, অনিশ্চয়তা আনন্দ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ছে। কোথাও বসার ব্যাঞ্চ নাই, কোথাও লেখার বোর্ড নাই।’</p> <p>শিক্ষায় বরাদ্দ বানানোর বিষয় তিনি বলেন, ‘যখনই শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলা হয় তখন বাজেট ম্যানেজমেন্টের কথা উঠে আসে। মূলত আমাদের দেশপ্রেমের অভাব আছে। বেগমপাড়ায় বাড়ি বানানোর একটি প্রবণতা আমাদের আছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন অবকাঠামো বা গাড়ি কেনার খরচ বাঁচিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে লুটপাট কবে বন্ধ হবে তা কেউ জানে না। বাজেট করার আগে মন্ত্রীরা ব্যবসায়ীদের সাথে কয়েকবার আলোচনা করেন। শিক্ষায় বরাদ্দ নিয়ে এ ধরনের কোনো আলোচনা নাই, কারণ এখানে কোনো ব্যবসা নাই। এবার বরাদ্দ বাড়লেও উচ্চ শিক্ষায় বরাদ্দ কমছে। শিক্ষায় এমন বৈষম্য থাকলে গুণগত শিক্ষা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। বিদেশ থেকে মানুষ এদেশে এসে বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের দেশের মানুষ বিদেশে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। আমাদের বিজ্ঞানী নেই, পদ্মা সেতু তৈরি করলেও সেখানে নিজেদের প্রকৌশলী নেই।’</p> <p>সভার সঞ্চালক হিসেবে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে আসন্ন পিডিপি-৫ এ অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে অনেক সুফল পাওয়া যাবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার সিদ্ধান্তে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। তবে এই শিক্ষা কাদের জন্য এ বিষয়টি এখনও স্বচ্ছ করা হয়নি।’</p> <p>ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক ড. মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘সেকেন্ড চান্স দিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা দক্ষতা অর্জন হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। যে ধারা খুব বেশি কার্যকর হয়নি তা অব্যাহত রাখার সুফল কি? মূল ধারার যে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে, তাও খুব বেশি কার্যকর নয়। আমাদের এখন প্রয়োজন, প্রথম সার্বজনীন বিদ্যালয় কার্যক্রম। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আগের ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা না থাকলে সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে না।’</p> <p>সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকার অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ ছাড়াও কিছু নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। তবে সুবিধা বঞ্চিত ও ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হলে নীতিমালা তৈরির সময় সংশ্লিষ্ট এলাকা ও সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’</p> <p>সভায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ। আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রউফ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী প্রধান অতিথি এবং সংসদ সদস্য আরমা দত্তকে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হলেও তারা উপস্থিত হতে পারেননি। </p> <p>আলোচনাসভায় প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষক শিক্ষার্থী ও বিশিষ্টজনদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, সমস্যা ও সমাধানে করণীয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়। উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অব্যাহত রাখতে প্রাথমিকভাবে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের পক্ষ থেকে ১৬টি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। এ সকল সমস্যা উত্তরণে প্রাথমিকভাবে ১০টি সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়।</p>