<article> <p style="text-align: justify;">২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের একজন নাগরিক করযোগ্য আয় করলে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এই সময়ের পরেও সারা বছরই আয়কর জমা দেওয়া যাবে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পর রেয়াতের সুবিধা পাওয়া যাবে না।</p> <p style="text-align: justify;">গত ১ জুলাই ২০২৩ থেকে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাঁরা অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করেছেন, শুধু তাঁরাই এ বছর বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত পাবেন। যাঁরা অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করেননি, তাঁরা রেয়াতের সুবিধা পাবেন না।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কেউ পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কিনে প্রথম বছর আয়কর রেয়াত গ্রহণ করেছেন। পরের বছর আর কোনো বিনিয়োগ করেননি। এ ক্ষেত্রে পরের বছর বেশি আয়কর দিতে হবে, এমনকি তাঁর আয় যদি আগের মতোও থাকে। কারণ নিয়ম অনুসারে সঞ্চয়পত্র যে বছর ক্রয় করা হবে, এই বিনিয়োগের ওপর শুধু সে বছরই আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ দেশের সচ্ছল মুসলমানদের অনেকেই প্রতিবছর জাকাত দেন। এ ক্ষেত্রে যদি কেউ জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোনো দাতব্য তহবিলে জাকাত দেন, তবে তিনি আয়কর রেয়াত পাবেন। সাধারণভাবে জাকাত দিলে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে না।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">আবার ডিপোজিট পেনশন স্কিম বা ডিপিএসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়। এর বেশি হলে রেয়াত পাওয়া যায় না। বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে একজন সাধারণ করদাতার কর রেয়াতের জন্য তিনটি বিষয় বিবেচিত হবে। করদাতার মোট নিয়মিত করযোগ্য আয়ের ৩ শতাংশ (কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত করহারের আয় ব্যতীত) বা প্রকৃত অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ অথবা ১০ লাখ টাকা—এই তিনটির মধ্যে যেটি কম হয়।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>করযোগ্য আয়ের হিসাব :</strong> কোনো ব্যক্তি তাঁর আয়ের ওপর কত ছাড় পাবেন সে হিসাব করতে শুরুতে করযোগ্য আয় হিসাব করে নিতে হবে। এরপর বের করতে হবে এর ওপর সর্বোচ্চ কত টাকা বিনিয়োগ বা দানের সুযোগ আছে। যেমন—একজন ব্যক্তি বছরে যে বেতন ভাতা পান তাঁর মোট আয় থেকে চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ইত্যাদি বাদ যাবে। কারণ এগুলো করবহির্ভূত আয়। সেই সঙ্গে আয়কর নির্দেশিকা অনুযায়ী করমুক্ত যে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে সেটাও বাদ যাবে। এরপর যা থাকবে সেটাই করযোগ্য আয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">করমুক্ত আয়কর সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারিত আছে। নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের করমুক্ত আয় সীমা চার লাখ টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">সে হিসাবে একজন ব্যক্তির প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপর কোনো কর দিতে হবে না। পরবর্তী এক লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, তার পরের তিন লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরবর্তী চার লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, এর পরের পাঁচ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ, পরবর্তী ২০ লাখ টাকা আয়ের জন্য ২৫ শতাংশ ও বাকি আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>রেয়াতের হিসাব : </strong>একজন করদাতা তাঁর মোট করযোগ্য আয়ের ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবেন। ওই বিনিয়োগকৃত অর্থের ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পাবেন। অর্থাৎ সেই পরিমাণ টাকা আয়কর থেকে বাদ যাবে। এখন ওই ব্যক্তির করযোগ্য আয় যেহেতু ১০ লাখ টাকা তাহলে তিনি বিনিয়োগ করতে পারবেন তাঁর এই আয়ের ২০ শতাংশ বা দুই লাখ টাকা। তিনি পুরো দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে তার ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা কর রেয়াত পাবেন। সে হিসাবে ওই ব্যক্তির প্রযোজ্য মোট কর ৭২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে এই ৩০ হাজার টাকা রেয়াত পাবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর করের পরিমাণ কমে ৪২ হাজার ৫০০ টাকায় দাঁড়াবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>বিনিয়োগ বা দানের অনুমোদিত খাত : </strong>বিনিয়োগ ও দানের সম্ভাব্য খাতের মধ্যে রয়েছে জীবন বীমার প্রিমিয়াম, সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগ কর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা, কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বীমা তহবিলে চাঁদা এবং সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ড প্রদত্ত চাঁদা। যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ এক লাখ ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে যেকোনো সিকিউরিটিস ক্রয়ে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে কিংবা বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ করলে অনুমোদিত খাত হিসেবে রেয়াত পাওয়ার সুযোগ থাকবে।</p> <p style="text-align: justify;">বিভিন্ন অনুদানের মধ্যে জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষায় নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান, জাকাত তহবিলে দান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনুমোদিত কোনো দাতব্য হাসপাতালে দান, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে দান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদত্ত দান, আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে দান, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) প্রদত্ত দান, সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) দান করলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে।</p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া সরকার অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান, এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশে দান, ঢাকা আহছানিয়া মিশনে দান ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানে অনুদানের ক্ষেত্রেও কর রেয়াতের সুবিধা দেওয়া হয়।</p> </article>