<p>প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০ হাজার ৬৪ কোটি ডলার বা ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, যা দেশি মুদ্রায় ১১ ট্রিলিয়ন বা ১১ লাখ সাত হাজার ৪০ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)। এই ঋণের বোঝার ৮৫ শতাংশ ঋণ দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধ করতে হবে। ১৫ শতাংশ বিদেশি ঋণ এখন স্বল্পমেয়াদি। মোট বিদেশি এই ঋণের মধ্যে ৭৯.৬৯ বিলিয়ন ডলার নিয়েছে সরকারি খাত। আর বাকি ২০.৩১ বিলিয়ন ডলার নিয়েছে বেসরকারি খাত।</p> <p>২০২৩ সাল শেষে আগের বছরের চেয়ে বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৪১২ কোটি ডলার। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৯ হাজার ৬৫২ কোটি ডলার। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যে এসব জানা গেছে।</p> <p>অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি রয়েছে। এরই মধ্যে বিদেশি ঋণের এই বৃদ্ধি ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের প্রবাহ বাড়ানো না গেলে এই ঋণ অস্বস্তিতে ফেলবে।</p> <p>চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩৬.৭ শতাংশ বেড়ে ৫৬২ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।</p> <p>এদিকে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ প্রায় ১৪ শতাংশ কমে ২০.৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।</p> <p>ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আগে বিদেশি ঋণের সুদহার ১ থেকে ২ শতাংশ থাকলেও এখন তা বেড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ হয়েছে। এটিই বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ কমার অন্যতম কারণ।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল চার হাজার ১১৭ কোটি ডলার। আর গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে তা ৯ হাজার ৮১১ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। অর্থাৎ গত আট বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত ডিসেম্বর শেষে সেটি আরো বেড়েছে।</p> <p>জনশুমারি ও গৃহগণনা শুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। সেই হিসাবে গত ডিসেম্বরের শেষে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৯২ ডলার (প্রায় ৬৫ হাজার টাকা)। যদিও গত জুনের হিসাবে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ ছিল ৫৭৪ ডলার। আট বছর আগে এটা ছিল ২৫৭ ডলারের কিছু বেশি।</p> <p>কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও তা জিডিপির তুলনায় বেশি নয়, বরং আরো ঋণ নেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিডিপির তুলনায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ঋণ বেশি না হলেও রাজস্ব আয়, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স না বাড়াতে পারলে এবং একই সঙ্গে বিদেশি ঋণের প্রবাহ কমিয়ে না আনতে পারলে আগামী কয়েক বছরে এই ঋণই বিশাল চাপ তৈরি করতে পারে।</p> <p>বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে এবং এর মধ্যেই চলতি বছর থেকেই বড় বড় কিছু প্রকল্পের ঋণের কিস্তি শোধ করাও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি ও রেমিট্যান্সও কাঙ্ক্ষিত আকারে বাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের সরবরাহ না বাড়ানো গেলে বিদেশি ঋণকে ঘিরে সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।</p> <p><strong>ঋণের মূল অর্থ দিতে হবে কখন</strong></p> <p>সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কিছু মেগাপ্রকল্পের মূল অর্থ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এবং সেই বছরে ৫৩১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরপর ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৫১৯ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৮-২৯ সালে ৫০৭ মিলিয়ন ডলার শোধ করার আশা করছে সরকার।</p> <p>অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকেই যে বৈদেশিক ঋণ শোধ করা শুরু হয়েছে, সেগুলো মূলত ঋণের সুদ। সরকারি হিসাব মতে আগামী জুলাই থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরে বিদেশি ঋণ হিসাবে ৪.১৮ বিলিয়ন ডলার শোধের পরিকল্পনা আছে সরকারের। এরপর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সুদসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার।</p> <p>প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পে মূলত ভারত, চীন এবং রাশিয়ার কাছ থেকেই ঋণ নিয়েছে বেশি। এসব প্রকল্প সময়মতো শেষ না করতে পারলে ঋণ আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) গত ডিসেম্বরের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণদানে শীর্ষ দেশ ও সংস্থার মধ্যে ছিল বিশ্বব্যাংক, জাপান, এডিবি ও চীন।</p>