<p style="text-align: justify;">জনস্বার্থ সংস্থার সংজ্ঞা পরিপূর্ণভাবে নির্ধারণ করে এসব প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির বাধ্যবাধকতার আওতায় নিয়ে এসেছে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)। এখন থেকে দেশের জনস্বার্থ সংশ্লিষ্টতায় কাজ করা সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">করপোরেট পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কার্যক্রমই বদলে যাচ্ছে। নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা ফার্মকে জবাবদিহির আওতায় আনতে তালিকাভুক্তি শুরু করছে এফআরসি।</p> <p style="text-align: justify;">এফআরসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিরীক্ষা ফার্ম ১৪৫টি এবং প্রায় ৩০০ জন নিরীক্ষক তালিকাভুক্ত হয়েছেন। নিবন্ধিত বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত না হলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না নিরীক্ষক (সিএ) বা নিরীক্ষা (সিএ) ফার্ম। এ জন্য নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তালিকাভুক্ত হচ্ছে।   </p> <p style="text-align: justify;">এফআরসির নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ আনওয়ারুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং আইনের আওতায় বিধিমালা এবং সম্প্রতি প্রবিধানগুলো জারি হওয়ায় সব জনস্বার্থ সংস্থাকে আর্থিক হিসাব ও নিরীক্ষার মান অনুসরণ করতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">এত দিন জনস্বার্থ সংস্থা সংজ্ঞায়িত না হওয়ায় অনেকেই হিসাব নিরীক্ষার বাইরে ছিল। এখন সবাইকে তালিকাভুক্ত নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা ফার্মের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিবেদন দিতে হবে। </p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, আর্থিক হিসেবে শৃঙ্খলা আনতে এবং স্বচ্ছতা ও মানদণ্ড অনুযায়ী হিসাবব্যবস্থা কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াগত পদক্ষেপ নিয়েছে এফআরসি। এখন পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">এরপর আরো বিস্তৃত কার্যক্রম শুরু হবে।  </p> <p style="text-align: justify;">নতুন এই প্রবিধানমালায় ন্যূনতম জনবলের ভিত্তিতে জনস্বার্থ সংস্থার সংজ্ঞায় বলা হয়, ন্যূনতম ৫০ জনের জনবল কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থাকলে সেটা জনস্বার্থ সংস্থা বলে বিবেচিত হবে। সম্প্রতি জনস্বার্থ সংস্থার সংজ্ঞা নির্ণায়ক প্রবিধানমালা-২০২৩ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্তৃপক্ষ এফআরসি। </p> <p style="text-align: justify;">প্রবিধানমালার প্রজ্ঞাপনে জনবলের সংজ্ঞায় বলা হয়, কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও বেতন ভোগী বা লাভের অংশীদার স্থায়ী, অস্থায়ী, নৈমিত্তিক, চুক্তিভিত্তিক বা আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে নিযুক্ত ব্যক্তি জনবল বলে বিবেচিত হবে। </p> <p style="text-align: justify;">সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বলতে কোনো আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বা আইনের অধীনে নিবন্ধিত বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত যেকোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান।</p> <p style="text-align: justify;">ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের কর্মকর্তা যেকোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত জনবলের ভিত্তিতে জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে নির্ণয়ের জন্য ওই সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের জনবলের তালিকা, নিয়োগ বিধি, নিয়োগ বহি, বেতন বহি, পে-রোল, হিসাব বিবরণী, আর্থিক বিবরণী, নিরীক্ষা বিবরণী, প্রভিডেন্ট ও গ্রাচ্যুইটি ফান্ড বা অন্যান্য তথ্য কাউন্সিলে জমা দেওয়ার আদেশ দিতে পারবেন। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে তালিকাভুক্ত করবে। কোনো প্রতিষ্ঠান তথ্য সবরাহ না করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে এফআরসি। </p> <p style="text-align: justify;">আইন অনুযায়ী, পূর্ববর্তী অর্থবছর শেষে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান জনবল, নির্ধারিত মোট সম্পদ ও দায়সীমা—এই তিনটির যেকোনো দুটি শর্ত পূরণ করলে তা জনস্বার্থ সংস্থা হবে।  নতুন করে জনবলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা সংজ্ঞার পাশাপাশি অন্য শর্তগুলো চলতি বছরেই পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, ৫০ কোটি টাকার বার্ষিক রাজস্ব, ৩০ কোটি টাকার মোট সম্পদ ও শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুয়িটি ছাড়া ১০ কোটি টাকা দায় থাকলে সেটা জনস্বার্থ সংস্থা বলে বিবেচিত হবে। এই শর্তের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় রাজস্ব, সম্পদ ও দায় সব কিছুর পরিমাণ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের আইনের অধীনে আর্থিক মানদণ্ড অনুসরণে বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় পেয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">যদিও এর আগে ২০২০ সালের জুনে নির্ধারণ করা এই শর্তের ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, পাঁচ কোটি টাকার বার্ষিক রাজস্ব, তিন কোটি টাকার মোট সম্পদ ও শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুয়িটি ছাড়া এক কোটি টাকার দায় থাকলে সেটা জনস্বার্থ সংস্থা বলে বিবেচিত হবে। এই সংজ্ঞা অনুসারে দেশের অনেক বেশি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির বাধ্যবাধকতার আওতায় ছিল।    </p> <p style="text-align: justify;">এফআরসি জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংক কম্পানি, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলো, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বীমা কম্পানি—এগুলো সরাসরি জনস্বার্থ সংস্থা। আর এর বাইরের সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন নির্ধারিত জনবল, বার্ষিক রাজস্বের (বিক্রয়) পরিমাণ, মোট পরিসম্পদের অর্থসীমা, শেয়ারহোল্ডারদের মূলধন ছাড়া মোট দায়সীমা থাকলে অবশ্যই সেসব প্রতিষ্ঠানকে জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস কোড, নির্দেশনা, বিধি বা প্রবিধানগুলো অনুসরণ করে হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে। </p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কম্পানি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি খাতে পরিচালিত স্বেচ্ছা কার্যক্রম পরিচালনাকারী বেসরকারি সংস্থা এবং অন্য সব প্রতিষ্ঠানকে এফআরসির আওতায় আনা হয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">জনস্বার্থ সংস্থাগুলোকে ফাইন্যান্সিয়াল কার্যক্রমকে একটি সুনিয়ন্ত্রিত কাঠামোর আওতায় আনয়ন, হিসাব ও নিরীক্ষা পেশার মান প্রণয়ন, যথাযথ প্রতিপালন, বাস্তবায়ন, তদারকির জন্য কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করতে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়। </p> <p style="text-align: justify;">এতে আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে যৌথ বিনিয়োগে উৎসাহী হবে।</p>