<p>জামালপুরের মেয়ে মাকসুদা আক্তার। দুই মেয়ের মা তিনি। ২০২০ সালের আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। কিন্তু এই সময় দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেন। একদিকে করোনার ভয়াবহতা ও আতংক, অন্যদিকে বাসায় চার মাসের বাচ্চাকে নিয়ে একাকিত্ব। সারাক্ষণ বাসায় থাকা, সময় যেন কাটছিলই না। স্বামীর কাছে আবদার করলেন কাঁসা, পিতল, তামা ও এন্টিকের পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন। মাকসুদা যেন ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি একজন নারী।</p> <p>বাবা-মা, ভাই-বোন, শ্বশুর-শাশুড়ি সবার কাছ থেকে এলো বাঁধা। চারিদিকে থেকে একের পর এক বাঁধা আসলেও সহযোগিতা করলেন তার স্বামী। শুরু করলেন ফেসবুকে পেইজ খুলে ব্যবসা। নাম দিলেন ‘ঐতিহ্যবাহী পণ্য’। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে তার এখন মূলধন হয়েছে ৩০ লাখ টাকারও বেশি। প্রতিষ্ঠানে কাঁসা, পিতল, তামার অন্তত ৩০০-৪০০ ধরনের পণ্য রয়েছে।</p> <p>রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই দিনের উইমেন ই-কমার্স এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সামিট ২০২৩’ এর আয়োজন করে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই)। এই অনুষ্ঠানে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা হয় ‘ঐতিহ্যবাহী পণ্য’র সত্ত্বাধিকারী মাকসুদার আক্তারের সঙ্গে।</p> <p>ব্যবসা শুরু গল্পটা জানতে চাইলে মাকসুদা বলেন, আমার জন্ম জামালপুরে। সেখানে এই পণ্যে অনেক বিখ্যাত। আমার জন্ম জামালপুরে হলেও স্বামীর সঙ্গে থাকি নরসিংদীতে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে ৩০ হাজার মূলধন নিয়ে শুরু করি। তখন আমি নতুন ছিলাম। ওই সময়ে করোনা ছিল। তো তখন ছোট বাচ্চাটার বয়স ৪ মাস। আগে একটা চাকরি করতাম। বাচ্চা হওয়ার কারণে চকরিটা ছেড়ে দিতে হয়। চাকরি ছাড়ার পর আমি সব সময় হতাশায় ভুগতাম। যে বাসায় কিভাবে থাকব?</p> <p>তখনকার কথা মনে আসতেই চোখ ছল-ছল করে ওঠে মাকসুদার। পুরোনো সৃতি মনে হওয়ার পর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় আর থাকতে পারেননি। কিছুটা সময় নিয়ে আবার বলা শুরু করেন তিনি। বলেন, করোনার সময় বাচ্চাকে তাকে নিয়ে করোনার সময় যেতে পারছিলাম না। আমার স্বামীকে বললাম আমি জামালপুরে যেতে চাই, কাঁসা পিতলের পণ্য নিয়ে কাজ করতে চাই। তো তখন ট্রেনের টিকেট তেমন ছিল না, কার ভাড়া করে জামালপুরে গেলাম। তখন জামালপুরের একজন সরকারি কর্মকর্তা আমার স্বামীর বন্ধু। তিনি ডাকবাংলোতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। চার দিন থাকি। থাকার পরে ওখানের সব কিছু দেখে আসি। সেই থেকে শুরু।</p> <p>তিনি বলেন, শুরুতে কেউ আমার এই ব্যবসাকে সাপোর্ট করেনি। শুধু আমার স্বামী ছাড়া। আর অন্যরা সাপোর্ট করে বাদ দিয়ে আরো নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বাবা-মা, ভাই-বোন, শ্বশুর-শাশুড়ি কেউ না। বাবা-মা, ভাই-বোন, শ্বশুর-শাশুড়িদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল আমি কাজ করতে পারব না। বাচ্চা পালতে হবে। আমাকে বাইরে যাওয়া যাবে না। সেই সময় আমি বাসায় থাকাটাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাদের কারো সাপোর্ট ছিল না। সে সবসময় শারীরিক ও মানসিকভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন। আমার স্বামী চায় যে আমি নিজে যেন স্বাবলম্বী হই। তখন আমার স্বামী আমাকে সাপোর্ট করেছে।</p> <p>তিনি আরো বলেন, এই ৩০ হাজার টাকা আমার স্বামীই আমাকে দিয়েছে। ব্যবসার শুরুতে আমার বাচ্চার বয়স কম ছিল। এখন আমার বাচ্চাটা বড় হয়ে গেছে, সঙ্গে ব্যবসাও বড় হয়েছে। এখন আমার নিজেরই একটা কারখানা রয়েছে। কাজ করছে ৮ জন। আলহামদুলিল্লাহ্ এখন সবাই সাপোর্ট করছে।</p> <p>তিনি বলেন, এই পণ্যগুলো অনেক দামি। তবে সর্বনিম্ন ৫০ টাকার পণ্যও আছে এবং সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা দাম। এতে বেশি লাভ করা যায় না। বেশি লাভ করতে গেলে বিক্রি কমে যাবে। একটা কাঁসার প্লেট ৩-৪ হাজার টাকা পড়ে যায়। যার কারণে লাভ খুবই কম করতে হয়। কত টাকা লাভ হচ্ছে সেটা হিসেব করা হয়নি। কিন্তু ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করে চার বছরে এখন আমার ৩০ লাখ টাকার পণ্য হয়েছে। আমার লাভ থেকে কখনো বাইরে খরচ করিনি। যা প্রফিট হয়েছে তা আবার ব্যবসার মধ্যে দিয়েছি। দিন-দিন ব্যবসা বড় করছি। ঢাকায় একটা শো-রুম নেওয়ার ইচ্ছে আছে।</p>