রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা কর্তৃত্ববাদী শাসক থেকে ফ্যাসিবাদী শাসকে পরিণত হওয়ার জন্য আমরাও কম দায়ী নই। এ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সব কিছু দেখেও চুপ ছিল। এত হত্যা, গুম, খুনের পর তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র হাসিনা ও তার দোসরদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে।’
আজ বৃহস্পতিবার আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের সম্মাননা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
এতে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘আমি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে থেকে পত্রপত্রিকায় লিখেছি, টক শোতে কথা বলেছি। তখনই আমি বলেছিলাম, শেখ হাসিনা একটি ফ্র্যাংকেনস্টাইন শাসন চালু করতে চলেছে। এই যে শেখ হাসিনা একটি কর্তৃত্ববাদী শাসক থেকে ফ্যাসিবাদী শাসকে পরিণত হলো এর জন্য আমরাও কম দায়ী নই।
’
তিনি বলেন, ‘এ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সব কিছু দেখেও চুপ ছিল। এত হত্যা, গুম, খুনের পর তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র হাসিনা ও তার দোসরদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। শুধু আশ্রয় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, এখন তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্য সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেই ফ্যাসিবাদীদের পতনে দেশের নারীরা জীবন দিল, প্রতিরোধ গড়ে তুলল, চিকিৎসা দিল, কিন্তু এখন আমার সেই নারী-বোনদের আর চোখে পড়ে না।
’
তিনি আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধেও আমরা একই চিত্র দেখেছি, কিছু মানুষ যুদ্ধ না করেও সার্টিফিকেট নিয়েছে। সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। এখন এই গণ-অভ্যুত্থানের পরও অনেক মানুষ ক্রেডিট নিতে ব্যস্ত। সরকারি নানা সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট; কিন্তু আন্দোলনের সেই অগ্নিকন্যারা আমাদের মাঝ থেকে নীরবে সরে যাচ্ছে।’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অংশ নেওয়া নারীরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারীদের মতো হারিয়ে যেতে বসেছে।
এটা আমরা হতে দিতে পারি না। আমরা আশা করি, এবি পার্টির মাধ্যমে আগামী দিনে ব্যাপক সংখ্যক নারীরা সংসদে গিয়ে দেশের ও নারী সমাজের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর মিনার বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের ডাক্তার সানজিদা, পারশা যে ভূমিকা রেখেছেন তা অনন্য। আমরা আন্দোলনের সময় শত শত মানুষকে শুধু হাসপাতালে যেতে দেখেছি। সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার পরিবেশও ছিল না। তৎকালীন স্বৈরাচার লাশ গণকবর দিয়েছে। আহত ও নিহতদের কোনো হদিস পাওয়া সম্ভব হয়নি।’
তিনি শহীদদের পরিবারের প্রতি গভীর সম্মান জানিয়ে বলেন, আপনাদের ভার বইবার শক্তি আমাদের নাই। তিনি এবি পার্টিতে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের উজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ পতন আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা, আমাদের মায়েরা, বোনেরা কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল করেছেন। আমি দীর্ঘ সময় ধরে শহীদদের পরিবারের অনুভূতি শুনছিলাম। ডাক্তার বোনদের বক্তব্য শুনছিলাম। এগুলো আমাদের শুনতে হবে। বুঝতে হবে, কিভাবে একটি স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছিল। দেশের মানুষ মুক্তির নেশায় কতটা ত্যাগ করেছিল।’
তিনি গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের এক বছর যেতে না যেতেই আমরা আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের ভুলে যাচ্ছি। সেই সময়ের অগ্নিকন্যারা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তাহলে আমরা কী বুঝব, প্রয়োজনেই শুধু নারীদের গুরুত্ব।’