<p>বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সীমান্তের পর বিশ্বের ভয়ংকর এক সীমান্ত হচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এই সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছে। সেখানে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছে। এসব তৎপরতা কোনো সৎ প্রতিবেশীর পরিচয় নয়, বরং তাদের বাংলাদেশবিরোধী আগ্রাসী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।</p> <p>মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে সেগুনবাগিচায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সংহতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, জোনায়েদ হোসেন ও শাহাদাৎ হোসেন শান্ত।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, বিএসএফ প্রধান ঢাকা থেকে ভারত ফিরে যাওয়ার পরপরই মাত্র এক সপ্তাহেই নওগাঁ ও লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের হাতে তিন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। কেবল ২০২৩ সালে বিএসএফ হাতে ৩০ জনের বেশি বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আর সাত বছরে বিএসএফের গুলি ও অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছে দুই শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক, আহত হয়েছে অনেকে।</p> <p>তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পাঁচ হাজার কিলোমিটার সীমান্তের চার হাজার কিলোমিটারের বেশি ভারত কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। বিশ্বের আর কোনো সীমান্তে এত দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া নেই। ইসরায়েল আর ফিলিস্তিন সীমান্ত আর মেক্সিকো-আমেরিকা সীমান্তেও এত তারকাঁটার সীমান্ত নেই। প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক কোনো দুর্যোগে দুপাশের মানুষ যে পরস্পরের কাছে আশ্রয় নেবে, ভারত তাও এখন বন্ধ করে দিয়েছে।</p> <p>ভারতের রাষ্ট্রীয় নীতির সমালোচনা করে সাইফুল হক বলেন, ভারতের উপেক্ষা ও অবহেলার কারণে এখনো পর্যন্ত তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা পাওয়া যায়নি। বাণিজ্যিক ভারসাম্য এখনো বাংলাদেশের প্রতিকূলে। মূলত বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট সুবিধাসহ তাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাদির সমাধান করে দিলেও কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর লাশের মতো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমূহ তারা ঝুলিয়ে রেখেছে। </p> <p>তিনি আরো বলেন, সরকার সীমান্তে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড বন্ধ দূরের কথা, এর উপযুক্ত প্রতিবাদ করার ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে। গত ১৫ বছর শাসক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিকভাবে অবৈধ ও অনৈতিক ক্ষমতার পেছনে ভারতের চরম হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের একাট্টা মদদ ও সমর্থনের বিনিময়ে বাংলাদেশকে তারা ভারতের অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।</p> <p>সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারের ভারত তোষণ নীতি, বিশেষ করে ভারত অনুগত পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, পানির ন্যায্য অংশীদারত্ব, বাণিজ্যিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠাসহ ভারতে বাংলাদেশবিরোধী বহুমুখী অপতৎপরতা বন্ধ করানো যায়নি। সরকার যখন প্রায় প্রতিদিন ঘোষণা করছে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব এখন সর্বোচ্চ শিখরে, তখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষের রক্তে এই বন্ধুত্বের নির্মম দায় শোধ করতে হচ্ছে। আমরা এসব তৎপরতা অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানাই। আমরা সমতা, ন্যায্যতা, আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান ও পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতির ভিত্তিতে যাবতীয় দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান চাই।’</p>