<p>বিএনপি ও তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো এখনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে আছে। পাশাপাশি তারা সরকারের বিরুদ্ধে থাকা অন্য দলগুলোকে নিজেদের পক্ষে রাখতে যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ঘনিয়ে এলে কোনো দল মত বদলায় কি না তা নিয়েও শঙ্কা আছে বিএনপির মধ্যে।</p> <p>বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলোর বাইরে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি তাদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট করেনি। তবে সাম্প্রতিক সব নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে অংশ নিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এখনো ভোট বর্জনের কথা বলছে। এই দল দুটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের আলোচনা আছে। </p> <p>নিবন্ধন জটিলতায় থাকা জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা। এর বাইরে ধর্মভিত্তিক পাঁচটি দলের মোর্চা-সমমনা ইসলামী দলও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।</p> <p>রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গত বুধবার জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এ অবস্থায় বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন জোরদার করতে রবিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।</p> <p><strong>আন্দোলনেই থাকতে চায় বিএনপি</strong></p> <p>বিএনপি নেতারা মনে করেন, আন্দোলন থেকে হঠাৎ সরে আসতে হলে সংলাপে বসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রও শর্তহীন সংলাপের তাগাদা দিয়ে তিনটি দলকে চিঠি লিখেছে। বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ওই চিঠির জবাব দিয়েছে।</p> <p>দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও মনে করেন, রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে হলে সংলাপ একমাত্র পথ। এ জন্য নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে পরিবেশ তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। তবে এ বিষয়ে সরকার বা অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।</p> <p>বিএনপির নীতিনির্ধারকরা চলমান আন্দোলনকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল পর্যন্ত টেনে নিতে চান। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর মনোভাবও বোঝার চেষ্টা করবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। নির্বাচনের পথে কারা হাঁটলেন তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে এই সময়ে। তারপর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চায় দলটি।</p> <p>দলের একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক দিন তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ের আলোচনা ছিল। এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের পর কমিশন ঘেরাওয়ের কথা আলোচনা হচ্ছে।</p> <p>বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু তাঁরা ভাবছেন না। তাঁর বিশ্বাস, এই আন্দোলনে সফলতা পাবেন তাঁরা।’</p> <p><strong>সরকারবিরোধীদের পক্ষে রাখতে যোগাযোগ বাড়াবে বিএনপি</strong></p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর এখন সরকার ছোট ছোট দলগুলোকে ভোটে টানতে চাইবে। এ জন্য নানা ধরনের ‘প্রলোভন’ ও চাপে থাকবে দলগুলো। তার পরও সরকারবিরোধী দলগুলোর বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে তাঁর বিশ্বাস।</p> <p>অবশ্য সমমনা রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কয়েকজনের বিষয়ে কিছুটা সন্দেহও আছে বিএনপির। বিষয়টি এখনই প্রকাশ্যে আনতে চায় না তারা। যে দল যে মনোভাবই দেখাক, সবাই যাতে সরকারবিরোধী মনোভাব ধরে রাখে, সে জন্য দলের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। </p> <p><strong>অবস্থান স্পষ্ট না করলেও নির্বাচনে যাবে জাপা</strong></p> <p>গত সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টিতে তেমন মতভেদ ছিল না। দলের নেতাদের সঙ্গে সরকারের একটি সমঝোতা ছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সম্প্রতি দলের এক যৌথ সভায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে জোরালো মত দিয়েছেন। তার পরও শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবেন এমনটিই ধরে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</p> <p>এরই মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে দলের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেছেন, সমঝোতার পথ এখনো বন্ধ হয়নি।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন নীতিনির্ধারক বলেন, জাপার বিষয়ে সরকারের মনোভাব আগের চেয়ে বেশ পরিবর্তন হয়েছে। সরকার এখন তৃণমূল বিএনপি ও অন্যান্য ছোট ছোট রাজনৈতিক দলকে গুরুত্ব দিচ্ছে।</p> <p>একটি সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি সরকারের বিপক্ষে গেলে দলের কর্তৃত্বও হারাতে পারেন। তাঁর পক্ষে নির্বাচন বর্জন করা খুবই কঠিন।</p> <p>জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মাসরুর মাওলা কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তাঁরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন।</p> <p><strong>জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন</strong></p> <p>বিএনপির সঙ্গে সরাসরি যুগপৎ আন্দোলনে নেই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন। তবে দল দুটির সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের বোঝাপড়া রয়েছে। জামায়াত বিএনপির সঙ্গে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে। ইসলামী আন্দোলন হরতাল-অবরোধে না থাকলেও দৃশ্যত সরকারবিরোধী অবস্থানে আছে। দলটি তফসিল প্রত্যাখ্যান করে সভা-মিছিলও করেছে।</p> <p>জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে তাঁরা যে নির্বাচনে যাবেন না, তা পরিষ্কার। এখানে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই।’</p> <p>তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনে যাবে না বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা শেষ কথা নয় বলে মনে করেন অনেকে। কয়েক মাস আগেও সরকারঘেঁষা ছিল দলটি। ফলে সরকারের বিপক্ষে থাকলেও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি তাঁদের।</p> <p>দলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করেন, সরকারবিরোধী মনোভাব ধরে রাখলে তাঁদের জনপ্রিয়তা বাড়বে। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বও বাড়বে। </p> <p>ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনমত ও দলের নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে তাঁরা নির্বাচনে যাবেন না। এ বিষয়ে তাঁদের আগের অবস্থানই এখনো অটুট আছে।’</p> <p><strong>অন্যান্য দল</strong></p> <p>লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), গণফোরাম ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে।</p> <p>জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত ৪ নভেম্বর নিবন্ধিত ৪৪টি দলকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। বিএনপিসহ ১৮টি দল ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। এসব দলের প্রায় সব কটি তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে।</p> <p><strong>পাঁচ দলের ইসলামী মোর্চারও তফসিল প্রত্যাখ্যান</strong></p> <p>খেলাফত মজলিসসহ পাঁচটি ইসলামী দলের মোর্চা-সমমনা ইসলামী দল তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। দলগুলো হলো খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামা ইসলামী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। আজ শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করবে এই মোর্চা।</p> <p>খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদ্যমান পদ্ধতিতে আমরা নির্বাচনে যাব না। এই তফসিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।’</p> <p><strong>অবস্থান স্পষ্ট করেনি সাত দল</strong></p> <p>তফসিল বিষয়ে ইসিতে নিবন্ধিত সাতটি রাজনৈতিক দল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। দলগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ কংগ্রেস, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।</p>