<p>শিশুর প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসা প্রদর্শন ইসলামের সৌন্দর্যগুলোর অন্যতম। তাদের প্রতি মায়া-মমতা দেখানো মহানবী (সা.)-এর সুন্নত এবং আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভের মাধ্যম। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আমর ইবনে শুয়াইব তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান বোঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৪৪; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৫০)</p> <p>সন্তানের শিক্ষাদানে অতিউৎসাহ বা তাড়াহুড়ার অবকাশ নেই। ধীরস্থিরভাবে এগোতে হবে। তাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আগে পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। নবীজি (সা.) বলেন, ‘ধীরস্থিরতা আল্লাহর রহমতস্বরূপ, আর তাড়াহুড়া শয়তানের কাজ।’<br /> (তিরমিজি, হাদিস : ২০১২)</p> <p>ধীরস্থির মানে সময়ক্ষেপণ নয়, বরং সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া। সঙ্গে সঙ্গে শিশুর সক্ষমতার মাত্রার প্রতি দৃষ্টি রাখা। উপযুক্ত সময়ে সে যতটুকু পড়াশোনা করার কথা, তা হচ্ছে কি না এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা। আর হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রে শিশুদের মনোভাব বোঝা উচিত। অনেক সময় শিশুরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে থাকে। তখন তাকে সুন্দর কথা বলে প্রফুল্লতার মধ্যে রাখা উচিত।</p> <p>মদিনার এক ছোট বালক আবু উমাইর। নবীজি (সা.) যখন তাদের ঘরে যেতেন তখন তাকে খুব আদর করতেন। আবু উমাইরের একটি ছোট পাখি ছিল। বুলবুলিজাতীয় একপ্রকার ছোট পাখি ‘নুগাইর’। আবু উমাইর পাখিটিকে খুব ভালোবাসত এবং সেটিকে নিয়ে খেলা করত। একদিন হঠাৎ পাখিটি মারা গেল। ছোট শিশু আবু উমাইর পাখির শোকে কাতর হয়ে পড়ল। তখন তাকে খুশি করার জন্য নবীজি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং সুন্দর করে ছন্দ মিলিয়ে বলতে লাগলেন, ‘ইয়া আবা উমাইর মা ফাআলান নুগাইর?’ (ও আবু উমাইর কী করছে নুগাইর?) (বুখারি, হাদিস : ৬১২৯)</p> <p>পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিশুর বেশি ঘনিষ্ঠতা থাকে। স্বভাবতই পরিবারের সদস্যদের আচার-আচরণ, কথাবার্তা সে গভীরভাবে অনুধাবন করে, যা প্রতিফলিত হয় পরিণত বয়সে। তাকে এমন শিক্ষা দেওয়া উচিত, যাতে সে অন্যকে শ্রদ্ধা জানানো ও অগ্রাধিকার দানে সচেষ্ট হয়। নবীযুগের একটি ঘটনা থেকে জানা যায়, কিছু দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ছোট শিশুকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এটি মানসিকভাবে তার ওপর প্রভাব ফেলে।</p> <p>আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.)-এর খেদমতে যখন মৌসুমের প্রথম ফল (রঙিন খেজুর) আসত তখন তিনি দোয়া বলতেন : হে আমার রব! আমাদের এই শহরে এবং আমাদের দাঁড়িপাল্লায় ও মাপের পাত্রগুলোয় বরকতের সঙ্গে আরো বর্ধিত বরকত দিন। অতঃপর ছেলেমেয়েদের মধ্যে যাদের কাছে পেতেন, তাদের সর্বকনিষ্ঠকে তা খেতে দিতেন। (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৬৩)</p>