<p style="text-align: justify;">মুসলিম উম্মাহর ঈদ নিছক কোনো উৎসব নয়, বরং তা মহান ইবাদত। তাই কোরবানি ঈদও কোনো পশুর রক্ত নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠা নয়। বরং তাতে আছে আল্লাহর হুকুমের সামনে নিজের জান-মালসহ সব কিছু সঁপে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। নিজের কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তির চাহিদার ওপর মহান মালিক ও রবের চাহিদা প্রাধান্য দেওয়ার শিক্ষা।</p> <p style="text-align: justify;">পবিত্র কোরআনে এসেছে : ‘আল্লাহর কাছে পশুগুলোর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের (অন্তরের) তাকওয়া। এভাবেই তিনি সেসবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবির পাঠ করতে পারো, এ জন্য যে তিনি তোমাদের হিদায়াত দান করেছেন...।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৭)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>বান্দার আত্মসমর্পণের পরীক্ষা</strong></p> <p style="text-align: justify;">কোরবানির মূল চাওয়া হচ্ছে মুমিনের অন্তরের অভিব্যক্তি। সে কিভাবে আল্লাহর হুকুমের সামনে নিজেকে সঁপে দিচ্ছে, তা-ই হলো আসল। এ জন্য আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় ইবরাহিম (আ.)-কে পুত্র কোরবানি দেওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সাক্ষ্য দিয়ে বলেন : ‘আর ইবরাহিমের কিতাবে, যে পূর্ণ করেছে তার দায়িত্ব।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩৭)</p> <p style="text-align: justify;">লক্ষ করুন! ইবরাহিম (আ.) পুত্রের রক্ত প্রবাহিত করা ছাড়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছেন। এর দ্বারা এটি বোঝানো হয়েছে যে এখানে আল্লাহর মূল উদ্দেশ্য হলো মুমিনের অন্তরের পরীক্ষা করা।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>রবের সামনে সমর্পণের শিক্ষা</strong></p> <p style="text-align: justify;">রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির পশু জবাইয়ের পূর্বমুহূর্তে নিজে পাঠ করে শিখিয়েছিলেন : ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ...’ যার সারমর্ম হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আমি নিবিষ্ট করেছি আমার চেহারা একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্য, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ ‘নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি সব সৃষ্টির রব।’ ‘তাঁর কোনো শরিক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলিমদের একজন। হে আল্লাহ! এই পশু আপনার পক্ষ থেকেই প্রাপ্ত হয়েছি, আর আপনার জন্যই উৎসর্গিত।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৭৯৫)</p> <p style="text-align: justify;">উক্ত হাদিসের বাণীতেও কোরবানির মূল দাবি ও শিক্ষা স্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে, নিজের জীবন-মৃত্যু একমাত্র স্বীয় মালিক ও রবের জন্য সঁপে দিতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;">তা ছাড়া বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে ‘এই পশু আপনার পক্ষ থেকেই প্রাপ্ত হয়েছি, আর আপনার জন্যই উৎসর্গিত’, এর দ্বারা সেই সব প্রতারক শ্রেণি তথা নামধারী পশুপ্রেমীদের জবাব দেওয়া হচ্ছে যে কোরবানি উপলক্ষে পশুর জন্য মিথ্যা মায়াকান্নার কিছু নেই।</p> <p style="text-align: justify;">এসব পশুকে আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই নির্দেশ দিয়েছেন, যেন সেগুলোকে কষ্ট না দেওয়া হয়। আবার সময় হলে তাঁর হুকুমমতেই সেগুলোকে জবাই করার নির্দেশ আছে। তাই এখানে মালিকের জিনিস মালিকের নির্দেশেই উৎসর্গ করা হচ্ছে। এতে কারো নাক গলানো বা মায়াকান্নার প্রয়োজন নেই।</p>